বুধবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

মাশরাফির ব্যাটিং ক্যারিশমা

মেজবাহ্-উল-হক

মাশরাফির ব্যাটিং ক্যারিশমা

ব্যাটিংয়ে এমন উল­সিত খুব একটা দেখা যায়নি মাশরাফিকে। তার দুর্দান্ত ইনিংসে কাল বিপিএলে প্রথম জয়ের মুখ দেখে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স - রোহেত রাজীব

বলটা সীমানা রশি স্পর্শ করা মাত্রই ব্যাট মাঠে ছুঁড়ে দিয়ে হুঙ্কার দিতে দিতে ড্রেসিং রুমের দিকে দৌঁড়াতে থাকেন মাশরাফি। খেলোয়াড়-কর্মকর্তারাও তখন যেন উসাইন বোল্টের গতিতে ড্রেসিং রুম থেকে বেরিয়ে ম্যাশকে অভিবাদন জানাতে ছুটে আসছেন। উত্তেজনায় জয়ের নায়ক নড়াইল এক্সপ্রেসকে কোলেই তুলে নিলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের খেলোয়াড়-কর্মকর্তারা। দৃশ্যটি মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে দেখলেন গ্যালারির দর্শকরা।

সত্যিই এ এক অবিশ্বাস ম্যাচ! অবিশ্বাস্য মুহূর্ত। অবিশ্বাস্য এক জয়ও বটে! প্রায় হারিয়ে যাওয়া ম্যাচেও দারুণ এক জয় পেল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস। সেটাও কিনা বোলার মাশরাফির ব্যাটিং ক্যারিশমায়। নড়াইল এক্সপ্রেস তার দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অনেকবারই বোলিংয়ের জন্য ম্যাচ সেরা হয়েছেন। এবার ব্যাটিং করে হলেন ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়। মাত্র ৩২ বলে চার বাউন্ডারি ও তিন ছক্কায় ৫৬ রানের সাইক্লোন ইনিংস। তাও আবার অপরাজিত থেকে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন।

এমন ইনিংসের পর মাশরাফির নিজেরও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না। সত্যি তিনি নিজে খেলেছেন, নাকি ঘটনাটি এক স্বপ্ন ছিল মাত্র। ম্যাশ বলেন, ‘আমি আসলে নিজেও বিশ্বাস করতে পারিনি এমন ইনিংস খেলব। এটা আমার জীবনের অন্যতম সেরা ইনিংস।’

সত্যিই এ মহানাটকীয় এক ম্যাচ! কাল মাশরাফি যখন ব্যাটিং অর্ডারের ৫ নম্বরে ব্যাট হাতে মাঠে নামছিলেন তখন বিষয়টি অদ্ভুত মনে হচ্ছিল। কেননা ম্যাশ সাধারণত আট কিংবা নয় নম্বরে ব্যাট করেন। তখনো ভিক্টোরিয়ানসের স্বীকৃত ব্যাটসম্যান অলোক কাপালি, মাহমুদুল হাসান লিমন ও পাকিস্তানের আসকার জাইদি ড্রেসিং রুমে। তাছাড়া তখন চলছিল মাত্র অষ্টম ওভারের খেলা। আসলে ওই সময় নিজের সঙ্গে বাজি ধরেই যেন মাঠে নেমেছিলেন। এ সম্পর্কে ম্যাশ বলেন, ‘এটা ছিল আমার জন্য খুবই সাহসী একটা সিদ্ধান্ত। কিন্তু আমি সফল হয়েছি।’

মাশরাফির টার্গেট ছিল-

এক. প্রতিপক্ষের কৌশলকে তছনছ করে দেওয়া। কেননা সাধারণত মাঝের ওভারে স্পিনাররা বোলিং করে থাকে। মাশরাফি হচ্ছে স্পিনে দুর্দান্ত। আর যদি তার কথা ভেবে পেস বোলিং করানো হয়, তাহলে শেষের দিকের ব্যাটসম্যানরা স্পিনারদের বিরুদ্ধে খেলতে পারবেন। তখন বেশি রান তোলা সম্ভব হবে।

দুই. তখন জয়ের জন্য কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের রানের দরকার ছিল দশের কাছাকাছি (৯.৫৩)। স্বীকৃত ব্যাটসম্যান নামলে সেট হতে সময় নেবেন। আর দ্রুত রান তুলতে গেলে আউট হতে পারেন। তাই মাশরাফি নিজেই নেমে যান, যাতে দ্রুত রান তুলে গড়কে কমিয়ে নিয়ে আসা যায়। গতকাল মাশরাফি তার দুই কৌশলেই সফল। ম্যাচ শেষে বলেন, ‘আমি আসলে ওদের বোলিংয়ে কিছুটা বিরক্তি সৃষ্টি করতে চেয়েছিলাম। ভাগ্য আমাকে সহায়তা করেছে।’ নিজের ইনিংস সম্পর্কে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, ‘আমি এর আগে ক্লাবের হয়ে ৫০ রানের ইনিংস আছে আমার। কিন্তু কখনোই ফিনিশ করে মাঠ ছাড়তে পারিনি। অবশ্য আজ (কাল) শেষ করে আসার ইচ্ছা ছিল, তা নয়। স্যামুয়েলস আমাকে সহায়তা করেছে। আমি চেয়েছিলাম, সিঙ্গেল রান নিয়ে ওকে স্ট্রাইক দিতে। কিন্তু তারপর কিভাবে যেন কি হয়ে গেল।’

হঠাৎ ক্যারিশম্যাটিক ব্যাটিংয়ের জন্য মাশরাফি কৃতিত্ব দিলেন জাতীয় দলের কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহেকে। তিনি বলেন, ‘কোচকে ধন্যবাদ। তিনি আমাকে ব্যাটিং অনুশীলন করার সুযোগ দিয়েছিলেন। তখন তো আমি ব্যস্ত ছিলাম শুধু বোলিং নিয়েই।’

প্রথম ম্যাচে ঢাকা ডাইনামাইটসের কাছে বাজেভাবে পরাজয়ের পর কিছুটা চাপের মধ্যেই ছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। এ ম্যাচেও প্রথমে ব্যাট করে চিটাগং ভাইকিংস ১৭৬ রান করার পর জয়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ব্যাটিংয়ে নেমেও শুরুতেই বড় ধাক্কা খায় কুমিল্লা। ১০ রানের মধ্যে তার দুই ওপেনার লিটন কুমার দাস ও ইমরুল কায়েস আউট হয়ে যান। ভালো খেলতে থাকা শুভাগত হোমও দলীয় ৫৪ রানে সাজঘরে ফিরে যান। ক্যারিবীয় তারকা মারলন স্যামুয়েলস উইকেটে থাকলেও রানের চেয়ে বেশি বল হজম করে ফেলেন। এমন সময় মাশরাফি নেমেই পাল্টে দেন খেলার গতি। মাশরাফিকে পেয়ে স্যামুয়েলসও যেন মারমুখী হয়ে ওঠেন। শেষ পর্যন্ত জয় নিশ্চিত হওয়ার পর মাঠ ছাড়েন স্যামুয়েলস। খেলেন ৫২ বলে ৬৯ রানের ইনিংস। আর মাশরাফির সঙ্গে গড়েন ১২৩ রানের অপরাজিত এক জুটি। ৭ উইকেটের দাপুটে এক জয়।

 

চিটাগাং ইনিংস : ২০ ওভারে ১৭৬/৪, কুমিল্লা ইনিংস : ১৮.৫ ওভারে ১৭৭/৩

ফল : কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৭ উইকেটে জয়ী।

বরিশাল ইনিংস : ১৯.৩ ওভারে ১০৮/১০, সিলেট ইনিংস : ২০ ওভারে ১০৭/৯

ফল : বরিশালবুলস ১ রানে জয়ী।

সর্বশেষ খবর