শনিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বাফুফের টাকা যায় কোথায়?

ক্রীড়া প্রতিবেদক

বাফুফের টাকা যায় কোথায়?

মনজুর কাদেরের প্রশ্ন

 

পাঁচ ক্লাব দূরে থাকায় হকির প্রিমিয়ার লিগ মাঠে গড়ানো সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত দেশের হকির কিংবদন্তি আবদুস সাদেককে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়ার পর জটিলতা কেটে গেছে। দল বদলের তারিখ ঘোষিত হয়েছে। বিদ্রোহী দলগুলো মাঠে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এসএ গেমসে অংশ নিতে জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা মনোযোগসহকারে প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। হকিতে জটিলতা কেটে গেছে। কিন্তু ফুটবলে হঠাৎ করেই যেন কালো মেঘ জমে গেছে। যে পরিস্থিতি তাতে ঘরোয়া ফুটবলের কর্মকাণ্ড ঠিকমতো পরিচালিত হবে কিনা সে সংশয় দেখা দিয়েছে। ডিসেম্বরে পেশাদার লিগের দল বদলের তারিখ ঘোষিত হয়েছে। লিগ কমিটির সভায় বড় দুই দল শেখ জামাল ধানমন্ডি ও ঢাকা মোহামেডানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন না। এতে শঙ্কা জেগে উঠেছে দুই দল ফুটবলের কর্মসূচি বর্জন করবে কিনা? শেখ জামাল ও মোহামেডান ক্লাব ফেডারেশন সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের বড় মিত্র ছিল। এখন তারাই যখন বেঁকে বসেছে শঙ্কা তো জাগবেই। বাফুফে শেখ জামাল সভাপতি মনজুর কাদের ও মোহামেডানের ডাইরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভ‚ঁইয়ার আচরণে অসন্তুষ্ট হয়ে দুজনকে শোকজ করে। চিঠি পাওয়ামাত্রই জবাব দেওয়ার জন্য ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেওয়া হয়। লোকমান তার আইনজীবীর মাধ্যমে চিঠির জবাব দেন। কিন্তু মনজুর কাদের তার বকেয়া অর্থ ফেরতের জন্য বাফুফেকে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন। সত্যি কথা বলতে কি, বাফুফে কারও কাছ থেকে ঋণ করে ফেডারেশন চালাচ্ছে- তা কারও জানা ছিল না। প্রাইজ ও অংশগ্রহণ মানি হিসেবে শেখ জামালের পাওনা ৮২ লাখ টাকার বেশি। এটা মৌসুম শেষ হওয়ার আগে মিটিয়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু কাদেরের অভিযোগ, বাফুফে তা করেনি। কাদেরের সবচেয়ে অবাক লাগছে ঋণ নিয়েও বাফুফে তার ৬২ লাখ টাকা তিন বছরে পরিশোধ করতে পারেনি। ২০১২ সালে ৭ নভেম্বর সোনারগাঁও হোটেলে ডিস্ট্রিক্ট ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন কর্মকর্তাদের এক অনুষ্ঠান হয়। সেখানে ৬২টি জেলাকে ১ লাখ টাকা করে অনুদান দেওয়ার কথা। কাদের বলেন, ‘বাফুফের কাছে ফান্ড ছিল না বলে সালাউদ্দিন ও সালাম আমাকে ৬২ লাখ টাকা ঋণ দিতে বলেন। আমি দেখলাম টাকা না পেলে জেলাগুলো কাজ করতে পারবে না। তাই ঋণ হিসেবে ৬২ লাখ টাকা দিলাম। কথা ছিল স্পন্সরশিপের মানি পাওয়ার পর টাকা শোধ করে দেবে। দুটি চেক দেওয়া হয় একটি ৩২ ও অন্যটি ৩০ লাখ টাকার। কিন্তু অ্যাকাউন্টে টাকা নেই বলে তিন বছর হলো বাফুফে এখনো ঋণ শোধ করেনি। তাই বাধ্য হয়েছি চিঠি দিতে। আমি তো আর কোনো এতিমখানা খুলে বসিনি। আমাকে ক্লাব চালাতে হয়।’ সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘কেউ যদি টাকা পেয়ে থাকেন অবশ্যই পাবেন।’ তবে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পরিশোধ করা সম্ভব কিনা- সে ব্যাপারে সালামের বক্তব্য, ‘এখানে হিসাব-নিকাশের ব্যাপার আছে। আবারও বলছি, কাদের যদি টাকা পেয়ে থাকেন দ্রুত পরিশোধ করা হবে।’ কাদেরের কাছে প্রশ্ন ছিল যদি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে টাকা না পান? তিনি বলেন, ‘তখন কী হবে তা আমার আইনজীবী দেখবেন।’ এতদিন কেন চাননি? কাদের বলেন, ‘ভেবেছিলাম শোধ করে দেবেন। কিন্তু তিন বছর চলে গেল এরপর তো আর নীরব থাকতে পারি না।’ কাদের আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, ‘প্রতি বছর ফিফা ও এএফসি থেকে প্রায় ১৫ লাখ ডলারের অনুদান ছাড়াও বাফুফে থোক বরাদ্দ পাচ্ছে। আমার প্রশ্ন- এ টাকা যায় কোথায়? সাত বছরে উন্নয়নমূলক কাজে তো খরচ করতে দেখি না।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমান কমিটির মাধ্যমে ফুটবলে ভালো কিছু আশা করা যায় না। সত্য কথা শোকজ দিয়ে থামানো যাবে না। সাত বছরে ফুটবল অনেক পিছিয়ে গেছে। বারবার কোচ বদল করে ফুটবলের কোনো উন্নয়ন ঘটবে না। ২০২২ সালে বিশ্বকাপ খেলার মিশন ঠিক করেছে বাফুফে। হাসি লাগে ফুটবল ফেডারেশনের কর্মকর্তারা এমন স্বপ্ন দেখেন কিভাবে?’

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর