শিরোনাম
শনিবার, ২ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

সাফকে মিস করবে আফগানরা

কেরালা থেকে — রাশেদুর রহমান

পিটার সেগরতের পরিচয় জার্মান কোচ হিসেবে। কিন্তু তার বাড়ি সাবেক যুগোস্লাভিয়ায়। যার অবস্থান বর্তমান ক্রোয়েশিয়ার দুর্দেভাচ শহরে। জন্মসূত্রে ক্রোট হলেও উয়েফার রেজিস্ট্রারে সেগরতের নাম ‘জার্মান কোচ’ হিসেবে লিপিবদ্ধ। পিটার সেগরত যখন আফগানিস্তান ফুটবল দলে কোচের দায়িত্ব নেন তখন বন্ধুরা বলল, কোথায় যাও? ওখানে তোমার জীবন যেতে পারে, জান? পিটার সেগরত আফগানিস্তান সম্পর্কে ভালোই ধারণা রাখতেন। ওখানকার নিত্যদিনের গ্রেনেড বিস্ফোরণের খবরগুলো দুনিয়াজুড়ে টিভিওয়ালারা ফলাও করেই প্রচার করে থাকে। বন্ধুদের ভ্রুকুঞ্চিত প্রশ্নের জবাবে সেগরত জানিয়েছিলেন, জীবন বাজি রেখেই আফগানিস্তান যাত্রা করছেন তিনি। এই তো গত নভেম্বরে আফগানিস্তানের দায়িত্ব নিয়েছেন। এরপর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের আগে খুব অল্প সময়ই পেয়েছেন তিনি। তবে দল গোছাতে মোটেও সময় নষ্ট করেননি।

একটা ফুটবল দল যখন বিজয়ী হতে থাকে, তার কোচ স্বাভাবিকভাবেই সারাক্ষণ উত্ফুল্ল থাকবে। কিন্তু পিটার সেগরতের স্বভাবটাই ওরকম। সদা হাসিমুখ। প্রাণোচ্ছল তরুণের মতো। তিনি বলেন, ছেলেরা তোমরা কেবল নিজেদের সেরা ফুটবলটা মাঠে খেলে এসো। ফলাফল নিয়ে মোটেও ভেব না। যদি জিতে যাও, আনন্দটা ভাগ করে  নেব। যদি হেরে যাও, দায়টা পুরোপুরিই আমার। যে দলের এমন সাহসী কোচ থাকে তার ফুটবলারদের চিন্তা কী! আফগানরাও নিশ্চিন্তে নিজেদের সেরা ফুটবলটা খেলে যাচ্ছে। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে কী দুর্বার দলটা। চারটা ম্যাচে তারা ১৬টা গোল করেছে! আফগানদের বদলে যাওয়ার  পেছনে অবশ্য জার্মান ফুটবলেরও অবদান আছে। আর আছে আসকর লালীর অক্লান্ত পরিশ্রম। তিনিই রিফিউজি হিসেবে আফগানিস্তান থেকে যারা জার্মানি গিয়েছিল তাদের মধ্য থেকে ফুটবল প্রতিভা খুঁজে খুঁজে বের করেছেন। জার্মান ফুটবলের স্পর্শে এখন আফগানরাও দুর্দান্ত ফুটবল খেলে। যেমন জার্মানির বিভিন্ন স্থানীয় লিগে খেলে এমন ৯ জন ফুটবলার আছে আফগানিস্তানের সাফ দলে।

সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে যুদ্ধের পর আফগানরা নিজেদের মধ্যেই মারামারি করেছে বহুদিন। এরপর আমেরিকার আগমনে আরও একটা অন্ধকার যুগে প্রবেশ করেছিল তারা। গত কয়েক দশকে আফগানরা কেবল অস্ত্রের ঝনঝনানিই শুনে আসছে। ফুটবলে দীর্ঘ একটা বিরতির পর যখন আন্তর্জাতিক আঙিনায় পদচারণা শুরু করল আফগানরা, বিশ্ব অবাক হয়ে গেল। সাফ অঞ্চলে ২০০৩ সাল থেকে ফুটবল খেলছে আফগানিস্তান। প্রথম চারটা আসর তেমন ভালো করেনি। বিদায় নিয়েছিল গ্রুপ পর্ব থেকেই। তবে ২০১১ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ থেকেই তারা নিজেদের শক্তিমত্তা প্রকাশ করতে লাগল। সেবার ভারতের কাছে হেরে শিরোপাবঞ্চিত হলেও ২০১৩ সালে নেপালের কাঠমান্ডুতে ফাইনালে সেই ভারতকে হারিয়েই সাফে প্রথম শিরোপা জিতে আফগানরা। আরও একবার ফাইনালে উঠেছে তারা। এবার কী করতে চায় আফগানিস্তান! কোচ পিটার সেগরত বললেন, ভারত তো নিজেদের মাঠে ভয়ঙ্কর দল। তা ছাড়া ওদের ফুটবলাররা টুর্নামেন্টটা খেলেছেও দারুণ। আমাদের জন্য কঠিনই হবে ফাইনাল।

তাই বলে নিজেদের শেষ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপটা স্মরণীয় করে রাখতে মোটেও কার্পণ্য করবেন না আফগানিস্তানের ক্রোট বংশোদ্ভূত জার্মান কোচ। এটাই আফগানিস্তানের শেষ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। এরপর থেকে তারা এএফসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মধ্য এশিয়ায় ইরান, উজবেকিস্তান, কিরগিজস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও তাজিকিস্তানের সঙ্গে খেলবে। আগামী বছর বাহরাইনের মানামা শহরে অনুষ্ঠেয় ডব্লিউএএফএফ চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেওয়ার মাধ্যমেই নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে আফগানিস্তানের ফুটবল। নতুন চ্যালেঞ্জের হাতছানিতে কোচ পিটার সেগরত যেমন শিহরিত তেমনি পুরনোকে ছেড়ে যাওয়ার বেদনাও আছে তার মধ্যে। বার বারই বললেন, সাফ চ্যাম্পিয়নশিপকে আমরা খুব মিস করব। বিশেষ করে এ অঞ্চলের মানুষের আতিথেয়তা সত্যিই মুগ্ধকর। বললেন বাংলাদেশের কথাও। বাংলাদেশের ফুটবল অনেক উন্নতমানের। তবে মাঠে তারা নিজেদের সেরাটা দিতে পারছে না। কারণটা অবশ্য   বলতে চাননি পিটার সেগরত। তবে শেষটায়  বলে দিলেন, এবারের সাফটা জিতেই ভারত  থেকে বাড়ি যেতে চান তিনি।

দীর্ঘ সময় পিটার সেগরতের সঙ্গে কথা বলাটা চ্যালেঞ্জেরই। কথার ফাঁকে ফাঁকেই বলে ওঠেন, আমার জন্য ছেলেরা অপেক্ষায় আছে। তারা আমাকে সবসময়ই খুব মিস করে। আর আমিও তাদের কাছে কাছেই থাকতে চাই। এমন শিষ্য পাগল কোচের জন্যই বুঝি সফলতা অপেক্ষা করে!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর