রবিবার, ৩ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

আরামবাগের জরিমানা : কিছু প্রশ্ন

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ফুটবলে এক সময় উত্তেজনা ছিল তুঙ্গে। লিগে আবাহনী, মোহামেডান ম্যাচে কত অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে হিসাব মেলানো যাবে না। রেফারিকেও লাঞ্ছিত করা হয়েছে। কিন্তু কখনো ফেডারেশন ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি। ফুটবলে আগের সে উত্তেজনা না থাকলেও বিক্ষিপ্তভাবে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। যেমন ঘটেছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে। ২২ ডিসেম্বর কমলাপুর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে  পুলিশের কাছে ১-০ গোলে হেরে যায় আরামবাগ। মাঠে রেফারিকে লাঞ্ছিত ছাড়াও খেলা শেষে একদল উচ্ছৃঙ্খল সমর্থক হামলা চালিয়ে বাফুফে ভবনের কাচ ভেঙে ফেলে। শুধু তাই নয় সাংবদিকদের গাড়িও তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। দেশের সর্বোচ্চ ফুটবল সংস্থার ভবনে এই হামলা নিঃসন্দেহে ন্যক্কারজনক। প্রশ্ন উঠেছে উত্তেজনা সব সময় মাঠেই সীমাবদ্ধ থাকে বাফুফে ভবনে তা ছড়িয়ে পড়ল কেন? অনেকে বলছেন এ পথ তৈরি করেছেন বাফুফের কর্মকর্তারাই। কিছুদিন আগে কর্মকর্তাদের ইন্ধনে ভাড়াটিয়া লোকের মাধ্যমে ভবনের ভিতরেই শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব সভাপতি মনজুর কাদেরের বিরুদ্ধে অশ্লীল ভাষায় শ্লোগান দেওয়া হয়। কারণ সুপার কাপ ও স্বাধীনতা কাপ না হওয়ায় কাদের বাফুফের সমালোচনা করেন।

অতীতেও বাফুফের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অনেক সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু কারও বিরুদ্ধে বাফুফে ভবনে শ্লোগান দেওয়া হয়নি। সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে যারা শ্লোগান দিয়েছেন তাদেরকে রুমে ডেকে চা আপ্যায়ন করানো হয়। এতেই অনেকে মন্তব্য করেন ফেডারেশনের ভিতর নোংরামি করার পথ তৈরি করে দিল বাফুফেই। এখন উচ্ছৃঙ্খল দর্শকরা কারও ইন্ধনে ভবনের কাচ ভাঙচুর করেছে কিনা কে জানে? তবে দোষটা পড়েছে পাশে অবস্থিত আরামবাগ ক্লাবের ওপরে। বৃহস্পতিবার বাফুফের কার্যনির্বাহী কমিটির এক জরুরি সভা বসে। সেখানে আরামবাগকে ৩০ লাখ টাকার জরিমানা করা হয়। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় আগামী ম্যাচের আগে আরামবাগকে এ জরিমানা শোধ করতে হবে। তা না হলে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হবে ক্লাবটিকে। ৩০ লাখ টাকা দেশের ফুটবল ইতিহাসে সর্বোচ্চ জরিমানা। অন্যায় করলে তাকে শাস্তি পেতে হবে এটাই নিয়ম। কিন্তু বাস্তবতা চিন্তা করতে হবে। ফুটবলে আগের সে রমরমা অবস্থা নেই। অর্থ সংকটে ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান ক্লাবের দুর্দিন চলছে। ২০০২ সালের পর তারা লিগ শিরোপা পাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে আরামবাগের অবস্থা আরও করুণ। কী অবস্থায় তারা ক্লাব চালাচ্ছে বাইরে থেকেই বোঝা যায়। ৫ জানুয়ারি লিগে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দ্বিতীয় পর্ব শুরু। সুতরাং এ স্বল্প সময়ের মধ্যে আরামবাগ এই বিশাল পরিমাণের অর্থ জোগাড় করবে কীভাবে? বাফুফে নিজেদের কথাটাই চিন্তা করুক। ২০১২ সালে নভেম্বরে মনজুর কাদেরের কাছ থেকে ৬২ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে জেলা সংস্থাগুলোকে অনুদান দিয়েছিল। বলা হয়েছিল এক মাসের মধ্যে ঋণ শোধ করে দিবে। কিন্তু এখনো তা দেওয়া হয়নি। তাছাড়া দলগুলোর প্রাইজ ও অংশগ্রহণ মানির শোধ করার কোনো লক্ষ্য নেই। ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা যেখানে অর্থ নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে আরামবাগ এত দ্রুত ৩০ লাখ টাকার জরিমানা দেবে কীভাবে? তাছাড়া যে ঘটনা ঘটেছে সেখানে জরিমানার অর্থ এত বিশাল হয় কীভাবে?  সেদিন বাফুফের কি এমন ক্ষতি হয়েছিল। আরামবাগকে শাস্তি দেওয়া হোক এনিয়ে কারও আপত্তি নেই। কিন্তু জরিমানার একটা মাত্রা আছে। সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাম মুর্শেদী বলেছেন, ক্লাবটির কর্মকর্তারা দোষ স্বীকার করেছেন। দোষতো কেউ স্বীকার করতে চায় না। আরামবাগ করেছে। এক্ষেত্রে বাফুফের কী উচিত ছিল না ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ঠিক করে সেভাবে জরিমানাটা নির্ধারণ করা। ৩০ লাখ টাকা না দিলে সাসপেন্ড এ হটকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো কেন? ফুটবল ও বর্তমান ক্লাবগুলোর যে দুর্দশা তা কি বাফুফের জানা নেই। ক্রীড়াঙ্গনে আরামবাগের তেমন সাফল্য নেই। কিন্তু এ ক্লাবের মাধ্যমে অনেক তারকা ফুটবলার সৃষ্টি হয়েছেন। ফুটবলে দেশের বাইরে প্রথম ট্রফি জেতার কৃতিত্ব রায়েছে আরামবাগের। বাস্তবতা চিন্তা করে বাফুফের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ফুটবলে এমনিতেই দুর্দিন চলছে। সুতরাং এমন কোনো হটকারিতার সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না যা ফুটবলকে বিপদগামী করে তুলবে।

সর্বশেষ খবর