বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

মামুনুলদের মান রক্ষা

আসিফ ইকবাল

মামুনুলদের মান রক্ষা

মালয়েশিয়ার দুর্গে আক্রমণ বাংলাদেশের। তবে এ দৃশ্য দেখা গেছে খুব কমই। ৯০ মিনিটের লড়াইয়ে প্রাধান্য ছিল মালয়েশিয়ার —বাংলাদেশ প্রতিদিন

পঞ্চমবারের মতো ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলার হয়েছেন লিওনেল মেসি। খেতাব পুনরুদ্ধার করেছেন পর্তুগিজ তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো থেকে। এ পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে অন্য জায়গায়। ব্যালন ডি’অর পুরস্কার ঘোষণার পরের দিন পর্তুগালের মাদেইরায় রোনালদোর আবক্ষ মূর্তিতে রাতের অন্ধকারে কারা যেন মেসির নাম ও জার্সি নম্বর লিখে রেখে যায়। এতে করে শোরগোল বেধে যায়। সমর্থকরা সত্যিই বিচিত্র! ঝোঁকের বশে, কিংবা অতি ভালোবাসায় কখন কি করেন, তার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। যাই করুক না কেন, শেষ কথা হচ্ছে সমর্থকরা ফুটবলের প্রাণ। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপেও দর্শকদের তেমন ভালোবাসা দেখা গেল। প্রিয় বাংলাদেশ জাতীয় দল কোনো রকমে ১-১ গোলে ড্র করেছে মালয়েশিয়ার একটি ক্লাব দলের সঙ্গে। এমন পারফরম্যান্সে ধিক্কার জানানোর বদলে উত্সবমুখর ছিলেন মাঠে উপস্থিত হাজার চারেক দর্শক। শীতের প্রচণ্ডতা উপেক্ষা করে লাল-সবুজ পতাকা নাড়িয়ে সমর্থন জুগিয়েছেন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। ফুটবল, ফুটবলারদের মান যাই  হউক না কেন, বাংলাদেশ ফুটবলের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি যে দর্শক, কাল আবারও তার প্রমাণ মিললো বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। হারজিত নয়, দল এবং ফুটবলকে ভালোবাসাই যেন তাদের এক ও একমাত্র কাজ।

টানা দ্বিতীয়বার বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের সেমিফাইনালে খেলতে কাল জিততেই হতো। কিন্তু শনির দশায় পাওয়া মামুনুলরা যেন ভুলে গেছেন ফুটবল। হারিয়ে ফেলেছেন তাল, লয়, সুর। হয়ে পড়েছেন ছন্দহীন। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৪-২ গোলে হারানোর পর মনে হয়েছিল হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে টাইগাররা। কিন্তু কোথায় কি? সেই পুরনো চিত্র। সমন্বয়হীন ফুটবল। অবশ্য দলকে এক সুতোয় গাঁথতে পুরো মাঠ চষে বেড়িয়েছেন অধিনায়ক মামুনুল। কিন্তু ওইটুকু পর্যন্তই। কিছু সময় পাসিং ফুটবল খেলেছে সত্যিই। তবে যখনই আক্রমণে এসেছে মালয়েশিয়া, তখনই এলোমেলো হয়ে পড়েছেন ওয়ালি ফয়সাল, নাসির, নাসিরুল, ইয়াসিনরা। মালয়েশিয়ার আক্রমণকে মনে হচ্ছিল যেন বার্সার আক্রমণ! প্রথমার্ধে মালয়েশিয়ার প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছিলেন গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানা। তিন তিনটি নিশ্চিত গোল বাঁচিয়েছেন ডানে-বায়ে ঝাঁপিয়ে। আর একটি নিশ্চিত গোলের ব্যারিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছিল সাইড বারপোষ্ট। অবশ্য মামুনুলরাও বার দুয়েক আক্রমণ শানিয়ে নড়বড়ে করে দিয়েছিল প্রতিপক্ষকে। কিন্তু জীবন, শাখাওয়াতরা ব্যর্থ হলে গোলের দেখা পায়নি বাংলাদেশ। রক্ষণভাগের বেসামাল অবস্থা নিয়েই প্রথমার্ধের বিরতিতে যায় মারুফুল হকের শিষ্যরা।

মালয়েশিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের সাফল্য সাকল্যে একটি। ১৯৮২ সালে দিল্লি এশিয়াডে। ২-১ গোলের জয়টিই এখন পর্যন্ত ভরসা। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের গত আসরের ফাইনালে। গ্রুপ পর্বে হেরেছিল ন্যূনতম ০-১ গোলে। এবার প্রতিশোধ নিতে আমন্ত্রণ জানায় মালয়েশিয়াকে। গতবার অনূর্ধ্ব-২৩ দল পাঠিয়েছিল মালয়েশিয়া, এবার পাঠায় একটি ক্লাব। নাম ফেন্ডা এফসি। মালয়েশিয়ান পেশাদার লিগে যার অবস্থান পঞ্চম। সেই দলের আক্রমণ ও প্রতি আক্রমণে নাভিশ্বাস উঠেছে মামুনুলদের। তারপরও দ্বিতীয়ার্ধে অপেক্ষাকৃত ভালো ফুটবল খেলেছে মারুফুলের শিষ্যরা। মালয়েশিয়ার আক্রমণের বিপরীতে বেশ কয়েকবার প্রতি আক্রমণও করেছেন জাহিদ, জীবনরা। তাতেই মান বাঁচিয়ে মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ। এই ড্রয়ে দুই ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে সেমিফাইনালের আশা জাগিয়ে রেখেছে মামুনুলবাহিনী। পয়েন্ট খোয়ালেও শেষ চারের আশা টিকে আছে মালয়েশিয়ার। এই গ্রুপ থেকে দুই সেমিফাইনালিস্ট চূড়ান্ত হতে বাংলাদেশ-নেপাল এবং মালয়েশিয়া-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ৫৫ মিনিটে এগিয়ে যায় মালয়েশিয়া। পাঠান হাদিন গোলটি করেন। ৭৬ মিনিটে মিথুন চৌধুরী গোল করে বাংলাদেশের মান রক্ষা করেন। তা না হলে অখ্যাত একটি ক্লাবের সঙ্গে পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে মাঠ ছাড়তে হতো মামুনুলদের।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর