শনিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

মিরাজ-জাকিরের মহাকাব্যিক জুটি

মেজবাহ্-উল-হক

মিরাজ-জাকিরের মহাকাব্যিক জুটি

নেপালকে হারিয়ে যুব বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে বাংলাদেশ। ঐতিহাসিক দিনটিকে ফ্রেমবন্দী করে রাখতে সেলফিতে মজেছেন মিরাজরা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

জাকির হাসানের শটটা যেন হয়ে গেল বাংলাদেশের যুব ক্রিকেটের বড় বিজ্ঞাপন! জয়ের জন্য দরকার তখন মাত্র ৩ রান। কিন্তু জাকির হাসান লং অনের ওপর দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন সীমানার বাইরে। অন্য প্রান্তে থাকা ব্যাটসম্যান মেহেদি হাসান বীরদর্পে স্টাম্প তুলে নিলেন। ততক্ষণে ড্রেসিংরুমে অপেক্ষমাণ অন্য ক্রিকেটাররা যেন উসাইন বোল্টের গতিতে মাঠে ঢুকে ঐতিহাসিক জয়ের নায়ক দুই ‘হাসান’-কে বাহুডোরে বেঁধে ফেলেছেন।

জাকিরের ছক্কাতেই বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল সবার আগে পৌঁছে গেল যুব বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে। মধুর এক সমাপ্তি। অথচ ৪০ ওভার শেষে যখন বাংলাদেশের স্কোর বোর্ডে ১৪৪/৪ ছিল, তখন কে নিশ্চিত ছিল ম্যাচটা বাংলাদেশই জিতবে! বরং কোয়ার্টার ফাইনালের ‘চাপ’ নামক সেই জুজুটাই শঙ্কা জাগিয়েছিল। ভয়ের কারণও ছিল। কেননা তখন আস্কিংরেট বেড়ে গিয়েছিল ৭-এর কাছাকাছি (৬.৮০)। অথচ কারেন্ট রানরেট তখন ৩.৬০।

কে উদ্ধার করবে বাংলাদেশকে? সেরা ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন শান্তও তখন বিদায় নিয়ে ড্রেসিংরুমে গিয়ে হতাশার দৃষ্টি নিয়ে মাঠের দিকে তাকিয়ে। অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ ও জাকির হাসের জুটিতে তখন ২৭ রান এসেছে মাত্র! সরল দোলকের মতো দুলছে বাংলাদেশের ভাগ্য! হাজার কিলোমিটার দূরে কাঠমান্ডুতে তখন হয়তো সেলিব্রেশনের প্রস্তুতি চলছে! এই ক্রিকেট ম্যাচকে কেন্দ্র করে নেপালে গতকাল স্কুল-কলেজে ঠিকমতো ক্লাসই হয়নি। কিছুদিন আগে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ঘরবাড়ি হারিয়ে তাঁবুতে বসবাসকারী মানুষও সব কাজ বাদ দিয়ে বসে গিয়েছিলেন টিভির সামনে। কিন্তু তাদের সেই আশা শেষ পর্যন্ত আর পূরণ হয়নি। হেরে যায় নেপাল। মিরাজ-জাকির মিলে ২৭ রান থেকে নিয়ে গেলেন ১১৭ রানে! অবিশ্বাস্য এক জয় পেল বাংলাদেশ! এই মধুর জয়ের সম্পূর্ণ কৃতিত্ব এ জুটির। স্লোগ ওভারে তারা প্রায় ৭ করে রান করেছেন। মহাকাব্যিক এ জুটিই বাংলাদেশকে ইতিহাসের আরেক অধ্যায়ে পৌঁছে দিল। এতদিন নকআউটে জিততে না পারার যে ‘কালিমা’ ছিল, তা-ও কাল মুছে দিলেন মিরাজ-জাকির।

অধিনায়ক মিরাজ ৬৫ বল থেকে করেছেন অপরাজিত ৫৫ রান। ছক্কা নেই, বাউন্ডারিও মাত্র তিনটি। জাকির ৭৭ বলে ৭৫। শেষ বলে সেই বিখ্যাত ছক্কাটি ছাড়াও বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন পাঁচটি। বড় ইনিংসে সাধারণত ছক্কা-চার থেকেই আসে বেশি রান। কিন্তু এ ম্যাচে বেশি রান এসেছে সিঙ্গেলস ও ডাবলস থেকে। ম্যাচ শেষে মিরাজ এসে জানালেন, গতকাল গেম প্ল্যানই নাকি এমন ছিল, ‘আমাদের পরিকল্পনা ছিল ধরে খেলা। প্রথম ১০ ওভারে ৩০-৩৫ রান এলেই হবে। তবে উইকেট ধরে রাখতে হবে।’ মিরাজ বলেন, ‘আমি যখন উইকেটে যাই, তখন জাকির আমাকে বলে বড় শট খেলার দরকার নেই। আমরা সিঙ্গেল রান নেব আর স্টাইক রোটেড করব। আর উইকেট ধরে রাখব। শেষের দিকে গিয়ে বড় শট খেলব। সেটাই করেছি আমরা।’

শেষের দিকে ম্যাচে একটা শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। তখনো নাকি কোনো চাপ অনুভব করেননি মিরাজ। বরং জয়ের ব্যাপারে তার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল। মিরাজের ভাষ্য, ‘আমরা কখনই চাপ নিইনি। উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য অনেক ভালো। নেপাল কিন্তু প্রথম দিকে অনেক রান করেছে, আমাদের বোলাররা ভালো বোলিং করে ওদের রান কমে আটকে রেখেছে। উইকেট এখানে ওভারপ্রতি ৪-৫ রান করে করার মতো। ২৭০-২৮০ রানের উইকেট। আমাদের বোলাররা ভালো করে ওদের কমে আটকে রেখেছে। শুরুতে আমাদের উইকেট পড়ে যাওয়ায় একটু সমস্যা হয়েছে। কিন্তু আমি আর জাকির সেট হওয়ার পর ভালো ব্যাট করেছি। সমস্যা হয়নি।’

জাকির হাসানের ব্যাটিং দেখে মুগ্ধ দলপতি। মিরাজ বলেন, ‘জাকির অবিশ্বাস্য খেলেছে। আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লেগেছে যে বিষয়টা, জাকির অনেক দিন পর রানে ফিরেই খুব ভালো ইনিংস খেলেছে। দলের জন্য খুব ভাইটাল সময়ে এ রকম একটা ইনিংস খেলল। দলের খুব দরকার ছিল এটা।’

 

সংক্ষিপ্ত স্কোর

নেপাল, অনূর্ধ্ব-১৯ : ২১১/৯, ৫০ ওভার (ধামালা ২৫, রিজাল ৭২, আরিফ ২১, আইরি ২২, তামাং ২২*। সাইফুদ্দিন ২/৩৮)।

বাংলাদেশ, অনূর্ধ্ব-১৯ : ২১৫/৪, ৪৮.২ ওভার (পিনাক ঘোষ ৩২, সাইফ ৫, জয়রাজ ৩৮, নাজমুল ৮, জাকির ৭৫*, মিরাজ ৫৫*। ধামালা ২/৩৩)।

ফল : বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী

সর্বশেষ খবর