বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

ইতিহাস গড়ার অপেক্ষায় যুবারা

আসিফ ইকবাল

ইতিহাস গড়ার অপেক্ষায় যুবারা

সেমিফাইনালে নামার আগে শেষ প্রস্তুতিটা সেরে নিচ্ছেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্রিকেটাররা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের চার বছর আগের কান্নার সেই অভাবিত দৃশ্য ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে এখনো জাগরূক। ২০১২ সালের এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে মাত্র ২ রানে হেরেছিল বাংলাদেশ। এমন দুঃখের হারে সেদিন কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন দুই ক্রিকেটার। তাদের কান্নার সঙ্গী হয়েছিল গোটা দেশ। কষ্টের সেই কান্নার শক্তিতে বলিয়ান মাশরাফিরা ভালো খেলে চলেছেন। সিনিয়রদের দেখানো সাফল্যের পথে হাঁটছে জুনিয়ররাও। প্রথমবারের মতো অনূর্ধ্ব-১৯ যুব বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠে নতুন ইতিহাস লেখার সুবর্ণ সুযোগ এখন মেহেদী হাসান মিরাজদের সামনে। প্রথমবারের যুব বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠার আজকের লড়াইয়ে বাংলাদেশের যুবাদের প্রতিপক্ষ পরিচিত ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জিতলেই ১৪ ফেব্রুয়ারি মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে যুব বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি হবে তিনবারের চ্যাম্পিয়ন ভারতের। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ের আড়ালে আরও একটি লড়াইয়ে মাতবে দুই দেশ। স্বাগতিক স্পিনারদের সঙ্গে ক্যারিবীয়দের গতির লড়াই।

গ্রুপ পর্ব থেকে কোয়ার্টার ফাইনাল-দাপুটে ক্রিকেট খেলেছেন মিরাজরা। প্রতিপক্ষকে লড়াইয়ের ক্ষেত্র তৈরি করতে দেয়নি যুবারা। গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচে দাঁড়াতেই দেয়নি গত আসরের চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকা, স্কটল্যান্ড ও নামিবিয়াকে। কোয়ার্টার ফাইনালে নেপাল একটু লড়াই করেছিল, কিন্তু সেটা আবার বড় বাধা হতে পারেনি। টানা চার জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে ক্যারিবীয় যুবাদের উড়িয়ে দিতে, গুঁড়িয়ে দিতে প্রস্তুত মিরাজ বাহিনী। প্রস্তুত স্পিন দিয়ে। মিরাজ, শাওন, সাইফুদ্দিনদের ঘূর্ণিতে প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিতে চাইছে যুবারা। দলনায়ক মিরাজও তাই বলেছেন, ‘আমরা খুব ভালো করে জানি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটারদের। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে ক্যারিবীয় যুবাদের স্পিন দিয়ে গুঁড়িয়ে দিতে। আমাদের স্পিনাররা ভালো বোলিং করলে ওরা দাঁড়াতেই পারবে না।’ মিরাজরা চাইছেন প্রতিপক্ষকে স্পিনে গুঁড়িয়ে দিতে। কিন্তু এটাও সত্যি, ইতিহাস লিখতে আজ ক্যারিবীয়দের চেয়ে প্রবল প্রতিপক্ষ গতি। তবে এ নিয়ে চিন্তিত নন জুনিয়র টাইগার অধিনায়ক, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল সম্পর্কে আমাদের পরিষ্কার ধারণা রয়েছে। তারা জোরে বোলিং করে ঠিকই, কিন্তু এটাও সত্যি, আমাদের ওপেনাররা পেস ভালো খেলেন।’

যুব বিশ্বকাপের শুরু ১৯৮৮ সালে। ১০ বছর বিরতি দিয়ে পুনরায় যাত্রা করে ১৯৯৮ সাল থেকে। তখন থেকেই টানা খেলছে বাংলাদেশ। দুবার প্লেট পর্বের শিরোপা জিতলেও এই প্রথম কাপ পর্বের সেমিফাইনাল খেলছে। যুবাদের বিশ্বসেরা হতে মাত্র দুটি ম্যাচ বাকি। আজ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি। ম্যাচ দুটি জিতলেই নাম লেখাবে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার পাশে। সেই সম্ভাবনা বেশ উজ্জ্ব্বল। বিশ্বসেরা হওয়ার আগে আজ জিততেই হবে। জিততে হবে বলেই বাড়তি চাপ থাকছে গোটা দলের ওপর। কিন্তু যুবাদের অধিনায়ক মিরাজ চাপ ভাবছেন না। ভাবছেন না সেমিফাইনাল। তার ভাবনায় আজকের ম্যাচটি অন্য দিনের মতো শুধুই সাধারণ ম্যাচ, ‘টুর্নামেন্ট শুরুর পর থেকেই বাবুল (মিজানুর রহমান বাবুল, কোচ) স্যার বলছিলেন আমরা যেন ভবিষ্যতের কথা না ভাবি। আমরা প্রতিটি ম্যাচ খেলব এবং জিতে মাঠ ছাড়ব। সেই ভাবনাতেই আমরা খেলছি। আজ সেমিফাইনাল টার্গেট করে নামছি না। আজকের ম্যাচটিকে অন্যগুলোর মতোই ভাবছি। আমাদের ওপর বাড়তি কোনো চাপও নেই।’

বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নজির খুব বেশি নেই। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফাইনাল খেলার রেকর্ড সাকুল্যে একটি। তাও এশিয়া কাপের ফাইনাল। এবার সুযোগ এসেছে আরও একটি ফাইনাল খেলার। আজ ক্যারিবীয় যুবাদের হারালেই নতুন ইতিহাস লেখার রসদ পেয়ে যাবেন মিরাজরা। এখন শুধু ইতিহাসের সাক্ষী হওয়ার অপেক্ষা।

সর্বশেষ খবর