সোমবার, ২৮ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

স্বপ্নিল শুরু বিষাদে শেষ

এশিয়া কাপটা যেখানে শেষ করেছিল বাংলাদেশ, বিশ্বকাপটা যেন সেখান থেকেই শুরু করে টাইগাররা। প্রথম রাউন্ডে প্রতিপক্ষকে দুমড়ে দিয়ে সুপার টেন-এ ওঠেন মাশরাফিরা। টি-২০তে বাংলাদেশের উত্থানটা যেন অনেকের চক্ষুশূল হয়ে গেল! তাই কিনা টাইগারদের শক্তিমত্তা খর্ব করতে এবং মনোবল ভেঙে দিতে নিষিদ্ধ করা হলো দলের দুই তারকা বোলার তাসকিন ও সানিকে। এই ধাক্কায় থেকে শেষ পর্যন্ত আর মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতেই পারেননি মাশরাফিরা। শেষ ম্যাচে তো সর্বনিম্ন রানের লজ্জাতেই পড়তে হলো। স্বপ্নিল শুরুর পরও বিশ্বকাপের শেষটা হয়ে গেল বিষাদময়।

তবে দলীয় পারফরম্যান্স যাই হোক না কেন ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স কিন্তু অসাধারণ! দল খারাপ করলেও মু্স্তাফিজুর রহমান ছিলেন আপন মহিমায় উজ্জ্বল। ইনজুরি থেকে ফিরেই দেখিয়ে দিয়েছেন তার ক্যারিশমা। তিন ম্যাচই ৯ উইকেট। সুপার টেন-এ সর্বোচ্চ উইকেট শিকার বোলার তিনি। এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ মোট সাত ম্যাচ খেলেছে। কিন্তু মুস্তাফিজ খেলার সুযোগ পেয়েছেন শেষের তিন ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে নিজের জাত চিনিয়েছেন।

মুস্তাফিজ যে ক্রিকেট বিশ্বে ‘হট কেক’ তা বোঝা যায় তার সামনে পড়া ব্যাটসম্যানদের আনাড়িপনা দেখে। তিন ম্যাচে করা ১২ ওভারের ৭২ বলেই যেন ছিল বৈচিত্র্য! মুস্তাফিজকে সাধারণত বোলিংয়ে আনা হয় ‘ক্রুসিয়াল মমেন্টে’! যে কারণে তার ইকোনমি রেটটা একটু বেশি। তারপরেও ওভার প্রতি ৭.১৭ এর রান তিনি দেননি। তবে ৭২ বলের মধ্যে ‘ডট’ করেছেন ৩২টি। এরমধ্যে ৯ বলেই ছিল উইকেট। কাটার মাস্টারের করা যে ৪০টি বল থেকে প্রতিপক্ষ দলের ব্যাটসম্যানরা রান নিয়েছেন, সেক্ষেত্রে বেশির ভাগ বলে আন্দাজে ব্যাট চালিয়েছেন।

মুস্তাফিজের কাটার ব্যাটসম্যানদের কাছে এখনো ভীষণ দুরহ! টাইগার পেসার ওভারে হয়তো একটি কিংবা দুটি কাটার দেন। কিন্তু ওভারের ঠিক কোন বলটি কাটার হবে তা বুঝতে না পেরে পুরো ওভারেই আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয় ব্যাটসম্যানকে। এ কারণেই দেখা যায়, মুস্তাফিজের বলে অধিকাংশ ব্যাটসম্যানই বোকার মতো আউট হয়ে যান।

এবারের বিশ্বকাপে তামিম ইকবাল হচ্ছে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের একমাত্র ভরসা। ছয় ম্যাচ খেলে করেছেন ২৯৫ রান। গড় ৭৩.৭৫। স্টাইকরেটও অসাধারণ- ১৪২.৫১। টি-২০তে একজন ওপেনারের মতো যে আগ্রাসী ভাবটা থাকে তা ছিল তামিমের ভিতর। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে টি-২০তে সেঞ্চুরিও করেছেন তিনি। একটি হাফ সেঞ্চুরিও রয়েছে তামিমের। এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রানের মালিকও বাংলাদেশের এই ড্যাসিং ওপেনার। সর্বোচ্চ ১০৩ রানের স্কোরটিও তামিমের। টি-২০ বিশ্বকাপে এবার হয়েছে মাত্র দুটি সেঞ্চুরি। অন্যটি করেছেন ক্যারিবীয় ঝড় ক্রিস গেইল। কাঁটায় কাঁটায় ১০০ রান করেছিলেন টি-২০র সম্রাটখ্যাত মারকুটে ব্যাটসম্যান।

তবে তামিম প্রথম রাউন্ডের মতো সুপার টেন-এ প্রতিপক্ষকে বিধ্বস্ত করে দিতে পারেননি। তা কিভাবেই বা পারবেন? পেটের পীড়ার কারণে দ্বিতীয় ম্যাচে তো অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে মাঠেই নামতে পারেননি তিনি। পরের দুই ম্যাচেও ছিলেন খুবই ক্লান্ত। তারপরেও বাংলাদেশ সুপার টেন-এ যেখানে কোনো জয়ই পায়নি সেখানে তামিম এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক, এটিই তো অনেক বড় অর্জন।

বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপেও সেরা অলরাউন্ডার। বল হাতে ১০ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ব্যাট হাতেও ৩২.২৫ গড়ে করেছেন ১২৯ রান। একটি হাফ সেঞ্চুরিও রয়েছে তার। তবে প্রথম রাউন্ডে সাকিব খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। কিন্তু সুপার টেন-এ দারুণ খেলেছেন। 

সাব্বির রহমান বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ২৪.৫০ গড়ে করেছেন ১৪৭ রান। কিন্তু সাব্বিরের কাছ থেকে বাংলাদেশ দলের প্রত্যাশা যতটা ছিল ততটা পূরণ করতে পারেননি। তাছাড়া স্বভাবসুলভ আগ্রাসী সাব্বিরকে দেখা যায়নি বিশ্বকাপে। তার সর্বোচ্চ রান ৪৪।

অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের অপরাজিত ৪৯ রানের ইনিংসটি ছিল অসাধারণ। বাংলাদেশ জিততে না পারলেও প্রশংসিত হয়েছেন তিনি। কিন্তু ওই একটি ইনিংস ছাড়া বলার মতো বড় স্কোর নেই তার। ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচে শেষ ওভারে মুশফিক আউট হয়ে যাওয়ার পর যখন বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল দুই বলে দুই রান তখন ছক্কা হাঁকানোর বল পেয়েও ক্যাচ তুলে দেওয়ায় যেন ‘খলনায়ক’ হয়ে যান রিয়াদ! সাত ম্যাচে ব্যাট করে তার সংগ্রহ মাত্র ৮৬ রান।

বিশ্বকাপে বাজে সময় পার করেছেন সৌম্য সরকার। এই আসরে না করতে পেরেছেন রান, না ছিল তার মধ্যে আগ্রাসী ভাব। স্টাইকরেট মাত্র ৮৮.২৩। সাত ম্যাচে ১০.৭১ গড়ে রান করেছেন মাত্র ৭৫ রান। টি-২০তে সবচেয়ে বেশি রান হয় পাওয়ার প্লের প্রথম ছয় ওভারে। তাই সৌম্যর গড়টা খুবই হতাশার।

মুশফিকুর রহিমকে বলা হয় বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড। কিন্তু পুরো টুর্নামেন্টে নিজেকে যেন খুঁজেই পেলেন না নিজেকে। আল আমিন খুব একটা খারাপ বোলিং করেননি। তবে নিজেকে আলাদা করে তুলে ধরতে পারেননি এই টুর্নামেন্টে। মাশরাফির সময়টাও খুব বাজে গেছে। বল হাতেও আগ্রাসী হয়ে উঠতে পারেননি, অধিনায়ক হিসেবেও নন। সুপার টেন-এ তার আহামরি কোনো চমক সিদ্ধান্ত চোখে পড়েনি। ক্যাপ্টেনের ‘নড়েবড়ে’ অবস্থার মতো বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশনেও যেন ব্যর্থতার ষোলকলা পূরণ হয়ে গেল। সুপার টেন-এ বাংলাদেশই একমাত্র দল যারা শূন্য হাতে দেশে ফিরেছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর