শনিবার, ২ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

গেইলের দিকে তাকিয়ে ক্যারিবীয়রা

গেইলের দিকে তাকিয়ে ক্যারিবীয়রা

ওয়েস্ট ইন্ডিজের সোনালি দিন এখন অতীত। তবে ক্রিস গেইল, ডুইন ব্রাভো, ড্যারেন স্যামিরা চেষ্টা করছেন ফিরিয়ে আনতে সেই গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। ভারতকে হারিয়ে টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠার পর বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন ক্যারিবীয় ক্রিকেটাররা —এএফপি

মুম্বাইকে বলা হয় ‘সিটি অব ড্রিমস’ বা স্বপ্নের নগরী। রাতে কখনো ঘুমায় না শহরটি। ২৪ ঘণ্টা জেগে থাকে বলে নিউইয়র্কের সঙ্গে মুম্বাইকে তুলনা করেন ভারতবাসী! সেই স্বপ্নের শহরেই কিনা বিশ্বকাপের স্বপ্ন ভঙ্গ। সেমিফাইনাল থেকে ভারতের বিদায়ে গোটা আসরটাই যেন ঝিমিয়ে পড়েছে!

সবাই ধরেই নিয়েছিল ইডেন গার্ডেনে ফাইনাল খেলবে ভারত। তাই সবার দৃষ্টি ছিল কলকাতার দিকে। এখানকার আবাসিক হোটেলগুলো কয়েকগুণ বেশি ভাড়াতেও বুকিং হয়ে গিয়েছিল। কলকাতায় আসার বিমান টিকিট, ট্রেনের টিকিটের দামও বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে সেমিফাইনালে পরাজয়ের পর সব শেষ হয়ে গেল। এখন একের পর এক সব বুকিং বাতিল হয়ে যাচ্ছে। চড়া মূল্যে যারা ফাইনালের টিকিট কিনেছিল অনেকে হয় তো আগামীকালের ফাইনাল দেখতে মাঠেও যাবেন না। সবার স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে গেছে। হারের বেদনায় কাঁদছেন সবাই।

ভারতীয়দের হতাশার দিনে টিম টিম করে জ্বলতে থাকা ক্যারিবীয়দের আশার আলোটা এখন প্রজ্বলিত মশাল হয়ে গেছে! টি-২০ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় শিরোপাটা এখন তাদের দৃষ্টির খুব কাছেই। হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যায়, যেন এমন দূরত্বে! ফাইনালে প্রতিপক্ষ হিসেবে উপমহাদেশের কোনো দল না থাকায় যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই কন্ডিশনে উপমহাদেশের দলগুলোর স্পিনের মোকাবিলা করা খুবই কঠিন। ফাইনালে প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে গেছে।

অবশ্য প্রতিপক্ষ কে তা নিয়ে খুব একটা মাথাব্যথা নেই ক্যারিবীয়দের। ২০১২ সালে স্বাগতিক দল শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল। তাই আগের ম্যাচে ভারতকে হারিয়ে ফাইনালের টিকিট পাওয়ায় ক্যারিবীয়দের আত্মবিশ্বাসের জ্বালানিতে বাড়তি ফুয়েল সংযোজিত হয়েছে।

মজার বিষয় হচ্ছে, ব্যাটিংয়ে প্রধান দুই তারকা ক্রিস গেইল ও মারলন স্যামুয়েলস প্রথম দুই ওভারে আউট হওয়ার পরও কী রকম সাংঘাতিক রকম খুনে ব্যাটিং করে জয় তুলে নিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে ফাইনালে ক্যারিবীয়রা তাকিয়ে রয়েছেন গেইলের দিকে। গেইলের বড় ইনিংস ছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়টাকে কেমন যেন অসম্পূর্ণ লাগে! টি-২০-তে যত বিরল ঘটনা তার অধিকাংশই এসেছে গেইলের হাত ধরে। বিভিন্ন দেশের ঘরোয়া টি-২০ লিগে অনেক সেঞ্চুরি করেছেন ক্যারিবীয় তারকা। আইপিএলে রয়েল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে তার অপরাজিত ১৭৫ রানের ইনিংসটি এখনো টি-২০-তে ব্যক্তিগত সবচেয়ে বড় স্কোর। তা ছাড়া ভারতের মাটিতে রান করতে একটু বেশিই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন গেইল। আইপিএলে তার ৫টি সেঞ্চুরির সঙ্গে রয়েছে ১৯টি হাফ সেঞ্চুরি। গেইলের ব্যাটিংয়ে সবচেয়ে বড় বিনোদন তার ছক্কা হাঁকানোর দৃশ্যগুলো। ছক্কা মারতে যেন তাকে খুব বেশি শক্তি ব্যয় করতে হয় না। আলতো করে তুলে দেন, তাতেই বল চলে যায় গ্যালারিতে। আইপিএলে তিনি ২৩০টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন এ পর্যন্ত।

এবারের বিশ্বকাপে গেইল খুব ধারাবাহিক তা কিন্তু নয়! আবার ফর্মহীন বলা যাবে না। কেননা গ্রুপ পর্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ড ১৮২ রানের বিশাল স্কোর করার পরও হেরে গিয়েছিল গেইলের কারণেই। ওয়াংখেড়েতে ওই ম্যাচে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করেছিলেন ক্যারিবীয় মারকুটে এই ব্যাটসম্যান। এ ছাড়া বাকি তিন ম্যাচ খেলতে নেমে শুরুতেই আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে গেছেন। এক ম্যাচে সেঞ্চুরির পরও চার ম্যাচে গেইলের মোট রান ১০৯! তবে কোনো পরিসংখ্যান দিয়ে গেইলের পারফরম্যান্সকে বিচার করা উচিত হবে না। কেননা ক্যারিবীয় তারকা এমনই। যে ম্যাচে খেলবেন সে ম্যাচ একাই শেষ করে দেবেন। আর ভালো না করলে শুরুতেই শেষ। তাই ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের তুরুপের তাস এই গেইল। ভক্তদের বিশ্বাস, ফাইনালে ‘অতিমানবীয়’ একটা কিছু হয় তো করে দেখাবেন মারকুটে তারকা। আর গেইলের হাত ধরেই টি-২০-এর আরেকটি শিরোপা জিতবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ!

সর্বশেষ খবর