সোমবার, ৪ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা
এক দিনে একই মাঠে বিশ্বকাপে দুই ট্রফি জয়

বিশ্ব দেখল নতুন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে

বিশ্ব দেখল নতুন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে

টি-২০ মহিলা বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। হট ফেবারিট অস্ট্রেলিয়াকে পরাজিত করে ট্রফি হাতে উল্লসিত ক্যারিবীয় নারী ক্রিকেটাররা —এএফপি

ব্যাট শূন্যে ছুড়ে মেরে ড্রেসিং রুমের দিকে দৌড় শুরু করে দিলেন ডিনড্রা ডটিন। হেলমেট ও গ্লাভস ২২ গজে রেখে ডটিনকে অনুসরণ করলেন ব্রিটনি কুপারও। উইকেটে থাকা দুই ব্যাটসম্যানকে অভিনন্দন জানাতে ততক্ষণে ওয়েস্ট ইন্ডিজ মহিলা দলের অন্য সদস্যরা মাঠে ঢুকে গেছেন উসাইন বোল্টের গতিতে দৌড়ে। কার্টলি অ্যামব্রস, ড্যারেন স্যামি ও ডোনাইন ব্রাভোরাও দৌড়ে মাঠে ঢুকে পড়লেন। ডটিন লাফিয়ে অ্যামব্রসের কোলে উঠে গেলেন, কুমার উঠলেন স্যামির কোলে। তারপর চলতে থাকল উত্তাল নৃত্য! ক্যারিবীয় মেয়েদের থামানোই যাচ্ছিল না! চ্যাম্পিয়ন দলের ফরমাল ছবি তোলার জন্য পোজ দেওয়ার সময়ও ক্যারিবীয় মেয়েদের শরীর দুলছিল নৃত্যের তালে। গতকাল ইডেন গার্ডেনে বিকালে উৎসব করল মেয়েরা। আর রাতে ছেলেরা। মেয়েরা অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে পেয়েছিল ৮ উইকেটের সহজ জয়, আর ছেলেরা মহানাটকীয় ম্যাচে ইংল্যান্ডকে হারাল ৪ উইকেটে। এক দিনে দুই বিশ্বকাপ জিতে গতকাল কলকাতার ইডেন গার্ডেনে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সত্যিই ক্রিকেট বিশ্ব দেখল নতুন এক ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। আসলে বছরটাই যেন উইন্ডিজের ইতিহাস গড়ার। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ঢাকায় যুব বিশ্বকাপের শিরোপাও জিতেছে এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এক বছরে তিন-তিনটি বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তুলল ক্যারিবীয়রা। ক্লাইভ লয়েড যুগের পর ঝিমিয়ে পড়া ক্যারিবীয় ক্রিকেটে যেন আবার গতির সঞ্চার হলো। ড্যারেন স্যামি বলেন, ‘চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় সবাইকে অভিনন্দন। এই বিজয়ে ক্যারিবীয় ক্রিকেট এক নতুন মাত্রা পেল। আশা করি সামনেও অনেক ভালো কিছু অপেক্ষা করছে। সতীর্থ, কোচিং স্টাফ ও ক্যারিবীয় সমর্থকদের অভিনন্দন।’ ২০১২ সালে শ্রীলঙ্কায় প্রথম টি-২০ বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছিল গেইলরা। তবে স্টেফানিরা এবারই প্রথম। তাই তাদের উৎসবের মাত্রাটাও ছিল বাঁধভাঙা। ম্যাচ শেষে অভিভূত ক্যারিবীয় মহিলা দলের অধিনায়ক স্টেফানি টেলর বলেন, ‘এই মুহূর্তের জন্য আমরা অনেক দিন থেকে অপেক্ষা করছি। যদিও আমাদের শুরুটা ভালো ছিল না, কিন্তু ব্যাটসম্যানরা অসাধারণ খেলেছেন।’ উইকেটকিপার মেরিসা অ্যাগুইরা বলেন, ‘যেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।’

অস্ট্রেলিয়ার মেয়েদের ওয়েস্ট ইন্ডিজ হারিয়েছে ৮ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে। ক্রিকেটে যেন আবারও উইন্ডিজ যুগ শুরু হতে যাচ্ছে হয়তো এটা তারই একটা নমুনা মাত্র। ছেলেদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মেয়েরাও এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বকাপের আগে মেয়েদের টি-২০ র?্যাঙ্কিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছিল পঞ্চম। ফাইনালে ফেবারিটের তকমাও তাদের গায়ে ছিল না। কিন্তু দাপুটে ক্রিকেট খেলে ঠিক অস্ট্রেলিয়াকে উড়িয়ে দিয়েছেন স্টেফানিরা। প্রথমে ব্যাটিং করে অস্ট্রেলিয়ার মেয়েরা ১৪৯ রানের টার্গেট দেওয়ায় মনে হচ্ছিল ম্যাচটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য। কিন্তু দুই ওপেনার স্টেফানি টেলর ও লেইহে ম্যাথুজ ওপেনিং জুটিতে ১২০ রান তুলে ম্যাচ হাতের মুঠোয় নিয়ে নেন। ম্যাথুজ ৪৫ বলে খেলেন ৬৬ রানের তাণ্ডবে ইনিংস। আর স্টেফানি ৫৭ বলে করেছেন ৫৯ রান। শুরু থেকেই অসি বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে খেলতে থাকেন ম্যাথুজ। ইনিংসে তিনটি বিশাল ছক্কার পাশাপাশি ছয়টি বাউন্ডারিও হাঁকিয়েছেন। অসাধারণ ইনিংসের জন্য ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার উঠেছে ম্যাথুজের হাতে। আর স্টেফানি হয়েছেন সিরিজ সেরা। ছয় ম্যাচে ৪২ গড়ে ২৪৬ রান করেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্যাপ্টেন।

ম্যাথুজের বয়স মাত্র ১৮। প্রথম বিশ্বকাপে খেলতে এসেই টুর্নামেন্টের সেরা হওয়ায় যেন আবেগাপ্লুুত হয়ে পড়েন। প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, ‘আমার মুখ থেকে এখনো কথা বের হতে চাচ্ছে না। আমি যেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।

 

ইংল্যান্ড : ১৫৫/৯ (২০ ওভার), ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ১৬১/৬ (১৯.৪) ওভার (পুরুষ)

অস্ট্রেলিয়া : ১৪৮/৫ (২০ ওভার), ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ১৪৯/২ (১৯.৩) ওভার (নারী)

সর্বশেষ খবর