শনিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

জাদুকর সামাদ হারিয়ে যাচ্ছেন!

পার্বতীপুরেই শুয়ে আছেন তিনি

মঞ্জুরুল হক মঞ্জু, পার্বতীপুর প্রতিনিধি

জাদুকর সামাদ হারিয়ে যাচ্ছেন!

উপ-মহাদেশের প্রখ্যাত ফুটবলার ‘ফুটবল জাদুকর’ সামাদ দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুরের মাটিতে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। আগে কিছু কিছু ক্রীড়া সংগঠনের পক্ষ থেকে তার মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হতো। এখন আর সেটুকুও কেউ স্মরণ রাখে না, মনে রাখেনি তার স্মৃতিকথা। ১৯৬৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ফুটবল জাদুকর সামাদ রেল জংশন-খ্যাত পার্বতীপুর শহরের রেলওয়ে সাহেবপাড়া কলোনিতে তৎকালীন সরকার নির্ধারিত রেলওয়ে কোয়ার্টারে অনেকটা নিঃসঙ্গ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। পার্বতীপুর শহরের ইসলামপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

পার্বতীপুর রেলওয়ে এলাকায় ফুটবল জাদুকর সামাদের নামে আজও রয়েছে রেলওয়ে সামাদ ইনস্টিটিউট। সেই সঙ্গে তার জন্য নির্ধারিত রেলওয়ে কোয়ার্টারটিও তার চারণভূমি পার্বতীপুরে রয়েছে অনেক স্মৃতি। শহরের পুরাতন বাজার এলাকার ইসলামপুর করবস্থানে তার কবরে নির্মিত হয়েছে স্মৃতিসৌধ। অযত্নে-অবহেলায় তার স্মৃতিগুলো ম্লান হয়ে যাচ্ছে। ১৮৯৫ সালে ভারতের পুর্নিয়ায় ফুটবল জাদুকর সামাদের জন্ম। তার পুরো নাম সৈয়দ আবদুস সামাদ।

  ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন। চাকরি নেন রেলওয়েতে। পার্বতীপুর রেলওয়ে প্লাটফর্ম ইন্সপেক্টর হিসেবে তাকে পদায়ন করা হয়। সেই সুবাদে তার নামে বরাদ্দ দেওয়া হয় রেলওয়ে সাহেবপাড়ায় টি-১৪৭ নম্বর রেলওয়ে কোয়ার্টার। এই রেলওয়ে কোয়ার্টারে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি বসবাস করেন। তার স্ত্রী-সন্তান থাকা সত্ত্বেও তিনি একাকী পার্বতীপুরে বসবাস করেন। উপমহাদেশের ফুটবল জগতের কিংবদন্তি ফুটবল জাদুকর সামাদ। ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে অপূর্ব ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করে ফুটবল জগতে আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই ক্রীড়াবিদ ১৯৬৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পার্বতীপুরে মৃত্যুবরণ করেন। ফুটবল জাদুকর সামাদকে বলা হয় কিংবদন্তি মহানায়ক, জাদুকর উপাধি জাদুবিদ্যা জানার জন্য নয়, ফুটবল খেলার অপূর্ব দক্ষতা এবং উন্নতমানের ক্রীড়া কৌশল প্রদর্শনের জন্যই তার এ জাদুকর উপাধি। ১৯১৫ সাল থেকে ১৯৩৮ সাল ২৩ বছর ছিল সামাদের খেলোয়াড়ি জীবন। তিনি ছিলেন একজন রেল কর্মচারী। সে সময় ইবিআর নামে যে রেলওয়ে ফুটবল টিম ছিল সামাদ তাতে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। সেই কারণে ইবিআর সামাদ নামে পরিচিত ছিলেন তিনি। সামাদের ২৩ বছর খেলোয়াড়ি জীবনে বেশ কিছু বিস্ময়কর ঘটনা ঘটেছে যা খেলার জগতে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। দেশে এবং দেশের বাইরেও তার অভিনব খেলা দেখে মানুষ হতবাক হয়েছে। তার জাদুকরী ক্রীড়া কৌশল দেখে দর্শকরা উল্লাসে ফেটে পড়তেন। করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানাতেন। একবার খেলার আগ মুহূর্তে মাঠের চারদিকে পায়চারি করে এসে সামাদ ক্রীড়া কমিটির কাছে অভিযোগ করে বলেছিলেন এ মাঠ আন্তর্জাতিক মাপ হিসেবে ছোট বিধায় এ মাঠে আমাদের টিম খেলতে পারে না। পরে মাঠ মাপার পর অভিযোগ সত্য বলে প্রমাণিত হয়। আরেকবার মাঠের মধ্যস্থল থেকে বল নিয়ে সব খেলোয়াড়কে বোকা বানিয়ে বল ড্রিবলিং করে নিক্ষেপ করেন গোলে, বল গোলে প্রবেশ না করে গোলপোস্টের কয়েক ইঞ্চি উপর দিয়ে বাইরে চলে গেলে রেফারি বাঁশি বাজিয়ে বলকে আউট ঘোষণা করেন; কিন্তু সামাদ তা গোল হয়েছে বলে চ্যালেঞ্জ করেন। আমার শটে নিশ্চিত গোল হয়েছে। সামাদের শটের মেজারমেন্ট কোনো দিন ভুল হয়নি। গোলপোস্ট উচ্চতায় ছোট। মেপে দেখা গেল সত্যিই তাই। তার খেলোয়াড়ি জীবনের এমন বহু ঘটনা আজো দেশ-বিদেশের ক্রীড়াঙ্গনে অগণিত সামাদ ভক্তের মুখে মুখে। যদিও রেলওয়ের কোনো প্লাটফর্ম ইন্সপেক্টর পদ নেই তবুও জাদুকর সামাদের জন্য রেল কর্তৃপক্ষ পার্বতীপুরে এই পদ সৃষ্টি করেছিলেন এবং পূর্ব পাকিস্তান রেলওয়ে পার্বতীপুর জংশনে প্লাটফর্ম ইন্সপেক্টর হিসেবে তাকে নিযুক্তি দিয়েছিল। তিনি রেলওয়ে সাহেবপাড়া কলোনি ১৪৭ নম্বর বাসায় থাকতেন এবং মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি এ বাসাতেই ছিলেন।

সর্বশেষ খবর