শনিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

মুস্তাফিজ ‘দ্য অরেঞ্জ আর্মি’

মেজবাহ্-উল-হক

মুস্তাফিজ ‘দ্য অরেঞ্জ আর্মি’

মুস্তাফিজুর রহমানকে এক কোটি ষাট লাখ টাকায় কেনার পর সান রাইজার্স হায়দরাবাদ কর্তৃপক্ষ কিছুটা দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েছিল কিনা! বাংলাদেশি হ্যাংলা-পাতলা এক পেসারকে এতো বেশি দামে কেনার কী আছে —এমনটা হয়তো অনেকেই ভেবেছিলেন। সমর্থকদের অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হায়দরাবাদ মেন্টর ভিভিএস লক্ষ্মণকে সরাসরি খোঁচাও দিয়েছিলেন।

বাংলাদেশি ক্রিকেটের ফ্যান বলেই মুস্তাফিজকে পছন্দ হয়েছিল লক্ষ্মণের —এমন কথাও শুনতে হয়েছে ভারতের সাবেক তারকা ক্রিকেটারকে। কিন্তু লক্ষ্মণ কারো কথার জবাব না দিয়ে ধৈর্য্য ধারণ করার কথা বলেছিলেন। কাটার মাস্টারকে কেনার ব্যাপারে জোড়াজুড়ি করায় লক্ষ্মণকে যেন কিছুটা মানসিক চাপের মধ্যেই পড়তে হয়েছিল। যদিও দলটির মালিক সান নেটওয়ার্কের কর্ণধার কালানিধি মারান কিছু বলেননি। বরং অভিষেক সিরিজে ভারতকে বিপাকে ফেলে দেওয়ার পর তিনিও মুস্তাফিজকে দলে নেওয়ার পক্ষেই ছিলেন।

টি-২০ বিশ্বকাপে ইনজুরির কারণে প্রথম দিকের ম্যাচগুলো খেলতে না পারায় হয়তো লক্ষ্মণের রক্তচাপ বেড়ে যাচ্ছিল। তাছাড়া ইনজুরি থেকে ফিরে মুস্তাফিজের কতটা ভালো করতে পারবেন, তা নিয়েও ছিল শঙ্কা। কিন্তু মুস্তাফিজ শেষের তিন ম্যাচ খেলে ক্যারিশম্যাটিক পারফরম্যান্স দেখিয়ে যেন লক্ষ্মণের বুক থেকে একটা মস্ত পাহাড় সড়িয়ে দেন।

তারপর আইপিএলের প্রথম ম্যাচে রয়েল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে অসাধারণ বোলিংয়ের পর হায়দরাবাদের ভক্তরা তো এখন মুস্তাফিজ বলতে পাগলপ্রায়। প্রতি ম্যাচেই মুস্তাফিজ নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। এই মুহূর্তে আইপিএলের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বোলার সাতক্ষীরার সুপারম্যান খ্যাত পেসার।

অন্য বোলাররা যখন সেট ব্যাটসম্যানের সামনে পড়ে কচুকাটা হয়ে যাচ্ছে ঠিক এমন সময়ই মুস্তাফিজকে ব্যবহার করেন হায়দরাবাদের অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার। আর মুস্তাফিজ বল হাতে নেওয়ার পরই গেম চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে। ব্যাটসম্যানরা ছক্কা-চার হাঁকানোর পরিবর্তে নিজের উইকেট সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন।

সব শেষ ম্যাচে গুজরাটের বিরুদ্ধে চার ওভারে মাত্র ১৯ রান দিয়ে নিয়েছেন এক উইকেট, যা দলের জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে। আইপিএলে চার ম্যাচে উইকেট ৫টি। কিন্তু মুস্তাফিজের ইকোনোমি রেট অসাধারণ—৬.৬২। কাটার মাস্টারকে দিয়ে বোলিং করানো হয় পাওয়ার প্লেতে ও স্লোগ ওভারে। যখন উইকেটের চিন্তা না করে ব্যাটসম্যানরা শুধু রান তোলায় ব্যস্ত থাকেন।

মুস্তাফিজ বল হাতে নিলেই গ্যালারীতে গর্জন ওঠে। চার ম্যাচেই কাটার মাস্টার বুঝিয়ে দিয়েছেন তার সামর্থ্য। দর্শকের মাঝেও একটা বিশ্বাস তৈরি হয়ে গেছে—মুস্তাফিজ বল হাতে নিলেই কিছু একটা ঘটবে! ঘটাচ্ছেনও। কখনো উইকেট তুলে নিচ্ছেন, আবার কখনো রানের গতি কমিয়ে দিচ্ছেন হঠাৎ করে!

সান রাইজার্স হায়দরাবাদের অফিসিয়াল ফ্যানপেজও এখন মুস্তাফিজময়। কাটার মাস্টার কোথায় যাচ্ছেন, কি করছেন —সব ছবি পোস্ট করা হচ্ছে ফ্যানপেজে। ম্যাচের পর বোলিং ফিগার উল্লেখ করে ছবি তো পোস্ট করাই হচ্ছে। ভক্তরাও এখন মুস্তাফিজকে নিয়ে মাতোয়ারা। মুস্তাফিজকে নিয়ে স্ট্যাটাস থাকলেই সেখানে লাইকের বন্যা। মুর্হূতেই শত শত কমেন্ট জমা হয়ে যায়।

হাদরাবাদের ক্রিকেটপ্রেমীরা এখন মুস্তাফিজ ম্যানিয়ায় ভুগছেন। শুধু দর্শক কেন, দলের সতীর্থ ক্রিকেটার, কোচ, অফিশিয়াল থেকে শুরু করে মালিক— সবাই এখন মুস্তাফিজের ভক্ত। কাটার মাস্টার ইংলিশ ভালো বোঝেন না। বলতেও পারেন না তেমন একটা। তাই মুস্তাফিজের সঙ্গে কম্যুনিকেট করতে যাতে সমস্যা না হয় এজন্য একটু একটু করে বাংলা শিখছেন ক্যাপ্টেন ডেভিড ওয়ার্নার, কোচ টম মুডি ও মেন্টর লক্ষ্মণ!

সান রাইজার্স হায়দরাবাদের ডাক নাম ‘অরেঞ্জ আর্মি’! কিন্তু এটি যেন এমন মুস্তাফিজের নামের সমার্থক হয়ে গেছে। সবার কাছে মুস্তাফিজ এখন ‘দ্য অরেঞ্জ আর্মি’!

সর্বশেষ খবর