রবিবার, ১ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

এ বিজয় ফুটবলের

মেজবাহ্-উল-হক

এ বিজয় ফুটবলের

হাসবেন নাকি কাঁদবেন—যেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না কাজী সারাজিন। পাশে তার স্বামী অ্যালেক্সকেও দেখা গেল আনন্দে উত্ফুল্ল। উত্তেজনায় কাজী সালাউদ্দিনের মেয়ে ও জামাই দুজনই যেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। পাশে মিডিয়াকর্মীদের জটলা। বৈশাখের তীব্র তাপদাহে সবার গা থেকেই ঝরঝর করে ঘাম ঝড়ছে। সেদিকে কারও খেয়াল নেই। ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়ের বক্তব্য রেকর্ড করতে ব্যস্ত মিডিয়াকর্মীরা।

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের বহুল আলোচিত নির্বাচনে কাজী সালাউদ্দিনের বিজয়ের অনানুষ্ঠানিক ঘোষণার পর ভোটকেন্দ্র হোটেল র‌্যাডিসনের দোতলার চিত্র এটি। একই সময়ে এক ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, কাঁদছেন সালাউদ্দিন। চোখ মুছতে দেখা যায়, সালাম মুর্শেদী, মহিউদ্দীন আহমেদ মহি ও হারুন-অর-রশিদকে। তারা সবাই সালাউদ্দিনের সম্মিলিত পরিষদ থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। গতকাল নির্বাচনকে ঘিরে যেন আবেগ ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। বাফুফের নির্বাচনকে ঘিরে গতকাল দফায় দফায় শো-ডাউন করা হয়েছে র‌্যাডিসনে। নির্বাচন চলাকালীন দুপুর তিনটার দিকে একবার ‘বাঁচাও ফুটবল পরিষদ’-এর সমর্থকরা নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডায় লিপ্ত হয়। উভয় পরিষদের সমর্থকরাই ছিলেন প্রস্তুত। যারা হোটেলের ভিতরে ঢুকতে পারেননি তারা মূল গেটের বাইরে অপেক্ষা করেছেন।

গতকাল পরিস্থিতি এমন ছিল যে, নির্বাচনের কেন্দ্র যদি বাফুফে ভবন কিংবা অন্য কোথাও হতো তাহলে হয়তো বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা হতেও পারতো। আর পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরেই কিনা কাল র‌্যাডিসন হোটেল নিরাপত্তার চাদরে আবৃত করা হয়। কার্ড ছাড়া কাউকেই ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাচনে সরব উপস্থিতি ছিল ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তাদের। নির্বাচনকে ঘিরে বিসিবি যেন দুই ভাগে বিভিক্ত হয়ে গিয়েছিল। কাজী সালাউদ্দিনকে সমর্থন করেছিলেন বোর্ড পরিচালক ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির। ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ইসমাইল হায়দার মল্লিকসহ আরও অনেকে ছিলেন কামরুল আশরাফ খানের বাঁচাও ফুটবল পরিষদের পক্ষে। আরেক বোর্ড পরিচালক মনজুর কাদের তো বাঁচাও ফুটবল পরিষদের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী ছিলেন। শেষ মুহূর্তে তিনি সরে দাঁড়ান। কিন্তু প্রেসিডেন্ট পদে কামরুল আশরাফ খানকে জেতানোর জন্য শেষ পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়েছেন। জেতাতে পারেননি। ৩৩ ভোটে জিতে যান সালাউদ্দিন।

কালকের নির্বাচনে বিজয় হয়েছে ফুটবলের মানুষের। কাজী সালাউদ্দিনের সঙ্গে এদেশের ফুটবলের সঙ্গে সম্পর্ক যে কতটা গভীরে তা কারও অজানা নয়। এক কথায় বাংলাদেশের ফুটবলের কিংবদন্তি তিনি। টানা দুই মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার পর এবার হ্যাটট্রিক করেছেন কাজী সালাউদ্দিন।

এবারের নির্বাচনে বিজয়ের পথটা মোটেও মসৃণ ছিল না কাজী সালাউদ্দিনের জন্য। গতকাল ভোট গ্রহণের আগ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে চালানো হয়েছে অপপ্রচার, অনেক হুমকি-ধামকিও নাকি দেওয়া হয়েছে! একথা সালাউদ্দিন নিজেই বলেছিলেন। গতকাল সকালে হঠাৎ শোনা যায়, আ জ ম নাছির নাকি শেষ পর্যন্ত চাপের মুখে ‘বাঁচাও ফুটবল পরিষদ’কে সমর্থন দিয়েছেন! ক্ষণে ক্ষণে আরও অনেক গুজব ছড়িয়ে গেছে সালাউদ্দিনের নামে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই সালাউদ্দিনই জিতে গেলেন।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি ছিল শতভাগ। ১৩৪ জন ভোটারই তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। তবে একটি ভোট নষ্ট হয়েছে। ১৩৩ ভোটের মধ্যে ৮৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন সালাউদ্দিন।

হারেননি কামরুল আশরাফ খানও। তিনি ফুটবল অঙ্গনের মানুষ নন। জাতীয় সংসদের এমপি। ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। তারপরেও কাজী সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে ৫০ ভোট পাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। তবে নির্বাচনের পর ফলাফল মেনে নিয়ে কামরুল বলেছেন, ‘নির্বাচনে হার-জিত আছেই। তবে নির্বাচিত কর্মকর্তারা আমাকে চাইলে আমি ফুটবলের উন্নয়নে কাজ করবো।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর