মঙ্গলবার, ৩ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

বাংলাদেশ ৪ : ০ ভারত

ক্রীড়া প্রতিবেদক

অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

আবারও চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের মেয়েরা। এএফসি কাপ আঞ্চলিক পর্ব ফাইনালে ভারতকে হারানোর পর উৎসবে মেতেছে বাংলাদেশ —ওয়েবসাইট

ফুটবলে প্রাণ নেই। মৃতপ্রায় ফুটবলকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টায় কত জনই না কত কিছু বলছেন। তারপরও জাতীয় দলের ব্যর্থতার মিছিল থামছেই না। এরই মধ্যে নীরব বিপ্লব ঘটিয়ে চলেছেন গোলাম রব্বানী। মেয়েদের ফুটবলে অনূর্ধ্ব-১৪ দলের মেয়েদের নিয়ে একের পর এক রূপকথা লিখেই চলেছেন তিনি। রবিবার তাজিকিস্তানের রাজধানী দুশানবেতে আরও একবার গৌরবদীপ্ত করল দেশের ফুটবলকে তার শিষ্যরা। এএফসি আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে বাংলাদেশের মেয়েরা ৪-০ গোলে ভারতকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে।

এক বছর আগের এপ্রিল। ভয়াবহ ভূমিকম্পে তছনছ হয়ে গিয়েছিল নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর আশপাশের এলাকা। সে সময় বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৪ দলের মেয়েরা ছিল নেপালে। গ্রুপপর্ব আর সেমিফাইনাল পেরিয়ে পৌঁছে গিয়েছিল ফাইনালে। ভূমিকম্পের ভয়াবহতা দলটাকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। বাংলাদেশ থেকে বিশেষ বিমান নেপালে গিয়ে মেয়েদের উদ্ধার করে এনেছিল। তবে সেই না খেলা ফাইনাল গত বছরই খেলেছিল। নেপালকে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৪ দলের মেয়েরা জয় করেছিল এএফসি আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম শিরোপা। গতবারের ফাইনালে মার্জিয়াদের সাফল্য দেশের ফুটবলভক্তদের উপহার দিয়েছিল উৎসবের উপলক্ষ। ফুটবলীয় ব্যর্থতা ভুলে ভক্তরা আনন্দে ভেসেছিল। সেই উৎসবের আমেজ আরও একবার ফিরিয়ে আনলো অনূর্ধ্ব-১৪ দলের মেয়েরা। রবিবার তাজিকিস্তানের রাজধানী দুশানবেতে ভারতকে ৪-০ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো এএফসি আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের গৌরব অর্জন করেছে মার্জিয়ারা।

ভারতীয় মেয়েদের মাঠে দাঁড়াতেই দেয়নি বাংলাদেশের মেয়েরা। ম্যাচ শুরুর দ্বিতীয় মিনিটেই তহুরার গোলে এগিয়ে যায় গোলাম রব্বানীর শিষ্যরা। ৩২ মিনিটে অনুচিত মোগিনির গোলে ২-০তে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। এরপর ৫২ ও ৬৪ মিনিটে দুটি গোল করে নিজের হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন তহুরা। টুর্নামেন্টে তিনি ১০টি গোল করেছেন। এর আগে গ্রুপ পর্বে ভারতের বিপক্ষেই ৩-১ গোলে এবং নেপালকে ৯-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। সেমিফাইনালে স্বাগতিক তাজিকিস্তানকে ৯-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন মার্জিয়ারা। সেমিফাইনালের ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেছিলেন তহুরা এবং মনিকা চাকমা। তাছাড়া গ্রুপ পর্বে নেপালের বিপক্ষে ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেছেন অধিনায়ক মার্জিয়া ও অনুচিত মোগিনি। সবমিলিয়ে টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ প্রতিপক্ষের জালে ২৫ গোল দিয়েছে। বিপরীতে গোল হজম করেছে মাত্র ২টি!

বাফুফে নির্বাচনে কাজী সালাউদ্দিনের বিজয়কে অনেকেই ফুটবলের বিজয় বলছেন। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতির বিরুদ্ধে বাঁচাও ফুটবল পরিষদের আহ্বান কোনো কাজেই আসেনি। বাংলাদেশের ছেলেরা ফুটবলে বার বার ব্যর্থ হলেও নীরব বিপ্লব করে চলেছে মেয়েরা। বিশেষ করে অনূর্ধ্ব-১৪ ফুটবলে মেয়েরা দুর্দান্ত করছে। বছর পাড়ি দিতে না দিতেই তারা দেশের জন্য দ্বিতীয়বারের মতো বয়ে এনেছে গৌরবজনক সম্মান। দ্বিতীয়বারের মতো আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের পর গত রাতেই দেশে ফেরার কথা ছিল মার্জিয়াদের। এবার ছেলেদের ফুটবলের চেয়ে মেয়েদের ফুটবল ঘিরেই ভক্তদের আগ্রহ থাকবে বেশি। এক সময় এই মেয়েরাই হয়তো জাতীয় দলকে এনে দিবেন গৌরবজনক কোনো সম্মান। অবশ্য এজন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, ছোটো ছোটো এসব মেয়েদের ফুটবল মাঠে ধরে রাখা। ওদের অর্জনকে স্বীকৃতি দিলেই কেবল তা সম্ভব হতে পারে। শিরোপা জয়ী বাংলাদেশের কিশোরীরা গতকাল রাতেই দেশে ফিরেছে।

 

সর্বশেষ খবর