বুধবার, ৪ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

এমন জয় আবাহনীও ভাবেনি

ঢাকা আবাহনী ৬ : ০ শেখ জামাল

আসিফ ইকবাল

এমন জয় আবাহনীও ভাবেনি

আবাহনীর বিজয়ের নায়ক সানডে

ক্লদিও রানিয়েরির হাত ধরে অধরা স্বপ্ন স্পর্শ করেছে ইংলিশ ফুটবল ক্লাব লিস্টারশায়ার। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ম্যানচেস্টার সিটি, আর্সেনাল, চেলসির মতো বড় বড় দলকে পেছনে ফেলে সাত সমুদ্র তের নদীর ওপারের দেশটিতে প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জিতে নিয়েছে লিস্টার। অথচ মৌসুমের শুরুতে দলটির পক্ষে বাজির দর ছিল ৫০০০ঃ১! ভাবা যায়, সেই দল দুই ম্যাচ হাতে রেখে শিরোপা জিতে চমকে দিয়েছে ফুটবল বিশ্বকে। স্বপ্ন পূরণ না হলেও বিলেত থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে বাংলাদেশে কাল অবিশ্বাস্য ফুটবল খেলেছে আবাহনী। শুধু অবিশ্বাস্যই নয়, দুর্দান্ত, দুরন্ত, চোখ-ধাঁধানো, নান্দনিক, সুজনশীল— আরও নানা উপমা দেওয়া ফুটবল খেলে ২০১১ সালের পর ফের কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠল আবাহনী। অথচ স্বাধীনতা কাপের প্রথম সেমিফাইনালের আগে আকাশি-হলুদ শিবিরের পক্ষে বাজির দর নিশ্চিত কম ছিল বলাই যায়! অভাব ছিল বাজি ধরার লোকেরও। কিন্তু নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার সানডে চিজোবা ও ইংলিশ ফুটবলার লি অ্যান্ড্রু টাক অতিমানবীয় ফুটবল খেলে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবকে ৬-০ গোলে বিধ্বস্ত করে স্বপ্নের অনেকটাই পূরণ করে দেন আবাহনীর। অবিশ্বাস্য জয়ের নায়ক সানডে একাই করেন হ্যাটট্রিকসহ চারটি এবং লি টাক করেন জোড়া গোল। আসলে শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে এমন জয় পাবে আবাহনীও ম্যাচের আগে ভাবেনি।

প্রচণ্ড গরম না হলেও আবহাওয়া যে খুব সুখকর ছিল, তা নয়। গরম উপেক্ষা করে স্বাধীনতা কাপের প্রথম সেমিফাইনাল দেখতে মাঠে উপস্থিত ছিলেন হাজার দেড়েক দর্শক, যার অধিকাংশই আবার আকাশি-হলুদ শিবিরের। তারাও এসেছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে থাকা শেখ জামালের বিপক্ষে প্রিয় দলের হার দেখতে! অথচ ইউরোপিয়ান কোচ দ্রাগো মামিকের অনুপস্থিতিতে অমলেশ সেনের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় বদলে যাওয়া আবাহনী শুরু থেকে গতিশীল ফুটবল খেলে বিপর্যস্ত করে ফেবারিট শেখ জামালকে। গতকালের হেভিওয়েট লড়াইয়ে প্রথম অ্যাটাক করে আবাহনী। ৭ মিনিটে ইংলিশ ফুটবলার লি টাক দ্রুতগতিতে বল বাড়িয়ে দেন ফাঁকায় দাঁড়ানো সানডেকে। নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার বল ধরে প্রতিপক্ষের গোলরক্ষক হিমেলকে একা পেয়েও গোলের খাতা খুলতে পারেননি। ২ মিনিট পর সহজ গোল মিস করেন সেনেগালের স্ট্রাইকার সাররা কামারা। আবাহনীর আক্রমণেই খেলা চলছিল দ্রুতগতিতে। খেলার গতি যখন আবাহনীর পালে হাওয়া দিচ্ছিল, তখন ৩৬ মিনিটে নিশ্চিত গোল খাওয়া থেকে বেেঁচ যায় আবাহনী। ফাঁকায় বল পেয়েও গোল করতে পারেননি জামালের হাইতিয়ান স্ট্রাইকার ওয়েডসন আনসেলমে। পরের মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাক থেকে নিশ্চিত গোল হাতছাড়া করেন কামারা। আক্রমণ—পাল্টা আক্রমণের প্রথমার্ধে গোল পায়নি কোনো দল। ফলে গোলশূন্যতেই বিরতির বাঁশি বাজে।

দ্বিতীয়ার্ধে নতুন উদ্যমে নামে আবাহনী। শুরুতেই পেয়ে যায় বহু আকাঙ্ক্ষিত গোল। ৪৮ মিনিটে সানডে ও কামারা ‘ওয়ান ইজ টু ওয়ান’ করে ঢুকে পড়েন জামালের রক্ষণভাগে। ছোট বক্সেও মাথা থেকে কামারা শট নিতে গেলে পেছন থেকে কেষ্টকুমার ফেলে দেন। রেফারি পেনাল্টির নির্দেশ দেন এবং লি টাক ঠাণ্ডা মাথায় এগিয়ে নেন আবাহনীকে (১-০)। ২ মিনিট পর আবাহনীর মুষ্টিমেয় সমর্থককে ফের উচ্ছ্বাসে ভাসান লি টাক। কামার-সানডে দেয়াল ভেঙে ঢুকে পড়েন জামালের রক্ষণভাগে। এরপর সানডে হঠাৎ পেছনে দাঁড়ানো লি টাককে বল দেন, লি বল ধরে মাথা ঠাণ্ডা রেখে বাঁ পায়ের টোকায় গোলসংখ্যা দ্বিগুণ করেন (২-০)। ২ গোলে এগিয়ে আক্রমণের ধার বাড়িয়ে দেয় আবাহনী। ৬০ মিনিটে হ্যাটট্রিকম্যান সানডে চিজোবা নিজের গোলের সূচনা করেন। কাউন্টার অ্যাটাকে লির কাছ থেকে বল পেয়ে আড়াআড়ি শটে গোলসংখ্যা ৩-এ উন্নীত করেন সানডে (৩-০)। ৪ মিনিট পর ম্যাচের চতুর্থ এবং নিজের দ্বিতীয় গোল করেন সানডে (৪-০)। জালে ৪ গোল যাওয়ার পর ম্যাচ থেকে পুরোপুরি ছিটকে পড়ে শেখ জামাল। বিপরীতে আক্রমণের ধার বাড়িয়ে দেয় আবাহনী। ৬৯ মিনিটে প্রায় ৩০ মিটার দূর থেকে আচমকা শটে গোলসংখ্যা ৫-এ নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি হাটট্রিক পূরণ করেন সানডে (৫-০)। স্বাধীনতা কাপে এটা পঞ্চম হ্যাটট্রিক। ৭২ মিনিটে ম্যাচের ষষ্ঠ ও নিজের ৪ নম্বর গোল করে শেখ জামালের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন সানডে চিজোবা (৬-০)।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর