বুধবার, ৪ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

ভালোবাসায় সিক্ত তহুরা-মার্জিয়ারা

এএফসি কাপে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ভালোবাসায় সিক্ত তহুরা-মার্জিয়ারা

এএফসি কাপ আঞ্চলিক পর্বের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের কিশোরী ফুটবলারদের বাফুফে গতকাল সংবর্ধনা দেয় —বাংলাদেশ প্রতিদিন

হঠাৎ করেই কেউ একজন বলে উঠলেন, তহুরা, মার্জিয়ারা আসছেন। শুনেই ফটোগ্রাফার, টিভি ক্যামেরাম্যানরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন ছবি তুলতে। তহুরারা ঢুকছেন বাংলাদেশের জার্সি গায়ে, বাফুফে সংবাদ সম্মেলন কক্ষে তখন বাজছে ‘চ্যাম্পিয়ন, চ্যাম্পিয়ন’ গানটি। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ দক্ষিণ-মধ্যাঞ্চল আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান কাভার করতে আসা এক সাংবাদিক টি-২০ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের গানটি বাজিয়ে স্বাগত জানান চ্যাম্পিয়ন তহুরাদের। শুধু গান দিয়েই নয়, অনুষ্ঠানটির স্পন্সর সাইফ পাওয়ার টেক ও বিএসএল চ্যাম্পিয়ন দলের প্রতিটি ফুটবলার, কোচ ও কর্মকর্তাদের একটি ক্রেস্ট ও নগদ ১৫ হাজার টাকা করে আর্থিক পুরস্কার দেয়।

মধ্য এশিয়ার দেশ তাজিকিস্তানে গেল সপ্তাহে ভারত, ইরান, তাজিকিস্তান, নেপালের মতো দলগুলোকে পেছনে ফেলে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৪ দল। তহুরা, মার্জিয়ারা ফাইনালে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করে প্রতিবেশী ভারতকে। টুর্নামেন্টের শুরুতে অবশ্য ভারতকে ৩-১ গোলে হারিয়ে যাত্রা করেন তহুরারা। এরপর নেপালকে ৯-০ গোলে এবং সেমিফাইনালে স্বাগতিক তাজিকিস্তানকে হারায় ৯-১ গোলে। অসাধারণ ফুটবল খেলে সোমবার দেশে ফেরার পর গতকাল সংবর্ধনা দেয় দলটিকে। অনুষ্ঠানে বাফুফের তৃতীয়বারের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন বলেন, ‘চ্যাম্পিয়ন দলটিকে হৃদয়ের গভীর থেকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। তোমরা এখন থেকে খেলবে, আমরা তোমাদের দেখব।’ বাফুফের নবনির্বাচিত সভাপতি তহুরাদের পাশাপাশি ধন্যবাদ জানান বাফুফের ওম্যান কমিটিকেও।

টুর্নামেন্টে হার দূরের কথা, কোনো ম্যাচে পয়েন্ট হারায়নি বাংলাদেশ। লিগ পর্বের দুই ম্যাচ এবং সেমিফাইনাল ও ফাইনালসহ চার ম্যাচে গোল করে ২৫টি। দৃঢ় রক্ষণভাগের জন্য গোল খায় মাত্র ২টি। স্ট্রাইকার তহুরা একটি হ্যাটট্রিকসহ গোল করেন ১০টি। কাল মিডিয়ার মুখোমুখিতে টুর্নামেন্টের সেরা স্ট্রাইকার বলেন, ‘তাজিকিস্তান ম্যাচের আগে আমরা যখন জাতীয় সংগীত গাইছিলাম, তখন শরীর শিহরিত হয়ে উঠেছিল। উদ্দীপ্ত হয়েছি। আমরা কষ্ট করেছি। স্যার (গোলাম রব্বানি ছোটন) আমাদের অনুশীলনে বলতেন, তোমরা যতই ভালো খেল, কোনো লাভ নেই, যদি ডিসিপ্লিন না হও। আমরা স্যারের কথা মেনে চলেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছি।’ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের সঞ্চালক বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ ছোট্ট একটি ইনফরমেশন জানান তহুরাকে নিয়ে। সেরা ফুটবলারের পুরস্কারটি দেশে নিয়ে আসার পর নাকি একবারের জন্যও ক্রেস্টটি হাতছাড়া করেননি তহুরা!

তহুরা, মার্জিয়াদের নিয়ে দেশকে অভাবিত সাফল্য এনে দেওয়ার নায়ক কোচ ছোটন বলেন, ‘নেপালে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পাঁচ মাস পর তাজিকিস্তান যাই। দলটিতে আগের ১০ ফুটবলার নেই। দলটি গড়া হয়েছে সারা দেশ থেকে বাছাই করা ফুটবলারদের নিয়ে। ১৫০ জন ফুটবলার বাছাই করার পর সেখান থেকে নেওয়া হয় সেরা ৬৭ জন থেকে। এরপর তাদের নিয়ে অনুশীলন করি। সাফল্য পেতে মড়িয়া বাচ্চাদের দুই মাস সপরিবার পরিজন থেকে দূরে রেখে অনুশীলন করানো হয়। সবই করানো হয়েছিল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য। তারা কষ্ট করেই সাফল্য পেয়েছে। আমরা শিরোপা জয়ের টার্গেটেই গিয়েছিলাম, শিরোপা জিতেছি দলের স্পিরিটের জন্য। ভারতকে প্রথম ম্যাচে হারানোর পর বাচ্চাদের বলেছিলাম ইতিহাস গড়তে। তারা ইতিহাস গড়েছে।’ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের স্পন্সর সাইফ পাওয়ার টেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিএসএলের কর্ণধার রুহুল আমি তরফদার বলেন, ‘মেয়েরা ইতিহাস গড়েছে এবং অসামান্য সাফল্য অর্জন করেছে। আমরা এদেরকে সহায়তা করা অব্যাহত রাখব।’

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাফুফে সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী, সহসভাপতি তাবিথ আওয়াল, সহসভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদ মহি, সদস্য পদে নির্বাচিত আমিরুল ইসলাম বাবু, ফজলুর রহমান বাবুল, অমিত খান শুব্রসহ আরও অনেকে।

সর্বশেষ খবর