বৃহস্পতিবার, ৫ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

লিস্টারের বুনো উচ্ছ্বাস

রাশেদুর রহমান

লিস্টারের বুনো উচ্ছ্বাস

তিন মিনিট তেতাল্লিশ সেকেন্ডের ভিডিওটা ইউটিউবে ভাইরাল হয়ে গেছে। ভিডিওতে জেমি ভার্ডি-মাহরিজরা বুনো উল্লাসে মত্ত। সঙ্গে আছে লিস্টার সিটির ফুটবলাররা। ওদের কে জানতো! কে চিনতো! ওদের একটা ছোট্ট ভিডিও বার বার দেখার হলোই বা কী! লিস্টার সিটি বর্তমান ফুটবল দুনিয়ার সর্বাধিক প্রচারিত নাম। ফুটবল ভক্ত কিংবা সমালোচক সবার মুখে এই একটা নাম বার বার উচ্চারিত হচ্ছে। আর লিস্টারের অপরিচিত ফুটবলাররা কে কোথায় কী করছে, তাই নিয়ে সবাই ব্যস্ত। যেমন স্কাই স্পোর্টস তার বিশেষ টিম পাঠাল লিস্টারের ফুটবলারদের বুনো উচ্ছ্বাসের ভিডিও ফুটেজ নিতে। ব্রিটিশ প্রাইম মিনিস্টার থেকে শুরু করে ফুটবলের সর্বাধিনায়ক জিয়ানি ইনফ্যান্টিনো পর্যন্ত কিং পাওয়ার স্টেডিয়ামের বাসিন্দাদের নিয়ে গর্বিত। হবে নাই বা কেন! আধুনিক ফুটবলে নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছে বিখ্যাত হয়ে উঠা লিস্টার সিটি নামের অখ্যাত এক ক্লাব। এই আনন্দে ফুটবলার থেকে শুরু করে সাধারণ-অসাধারণ ভক্তরা নেচে-গেয়ে পুরো ফুটবল দুনিয়াকেই জানান দিচ্ছে, দেখ, আমরাও পারি! উচ্ছ্বাসের একটা নতুন মাত্রাই দেখল ফুটবল বিশ্ব।

চলতি মৌসুমটা কেমন স্বপ্নের মতো গেলো লিস্টার সিটির। জেমি ভার্ডি আর রিয়াদ মাহরিজ যেনো তাদের সেই নায়ক যাদের দূরন্তপনার সামনে দূর্জেয় কেল্লাও ভেঙ্গে পরে। ক্লাউডিও রেনেরি ঘুমন্ত নগরীতে সেই মন্ত্রের নাম যা জঁপলে কোলাহল মুখর হয় পুরী। সুখের উল্লাসে মাতোয়ারা হয় সবাই। তারপর রাতের অন্ধকার কেটে গেলে প্রভাত ফেরিতে একে-অপরের হাত ধরে বেরিয়ে আসে রাস্তায়। লিস্টারশায়ারের ছোট্ট শহর লিস্টার এখন আর ছোট্টো নেই। পাহাড়-পর্বত আর সমুদ্র-মহাসমুদ্রের দূরত্ব পেরিয়ে তার নাম-ডাক ছড়িয়েছে ফুটবল দুনিয়ার অলি-গলিতে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে চলতি মৌসুমে ‘বিগ ফাইভ’কে কাঁচকলা দেখিয়েছে গত মৌসুমে রেলিগেশন থেকে কোনো রকমে বেঁচে যাওয়া লিস্টার সিটি। চেলসি, ম্যানসিট আর ম্যানইউর মতো দল লিস্টারের সঙ্গে একটা ম্যাচও জিততে পারেনি! লিভারপুল একটাতে কোনোরকমে জিতলেও হেরেছে দ্বিতীয়টা। আর্সেনালই কেবল লিস্টারের গতি রুদ্ধ করতে পেরেছে বর্তমান মৌসুমে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে গত কয়েক দশকে এমন দুঃসাহস আর কেই বা দেখিয়েছে!

লিস্টারের এমন সাফল্যের পিছনে অনেকেই অনেক কারণ খুঁজে বেড়াচ্ছে। কেউ বলছে, বড় ক্লাবগুলোর খারাপ পারফর্মই লিস্টারকে সফলতা এনে দিয়েছে। কেউ বলছে, লিস্টারের মতো টিম স্পিরিট গত কয়েক দশকে খুব কম ক্লাবই দেখাতে পেরেছে। যেমন লিস্টার সিটির টুইটার অ্যাকাউন্টে টুইট করা আছে, ‘আমরা একে অপরের জন্য মরতেও পারি।’ অনেকে আবার বলছেন, থাইল্যান্ডের এক বৌদ্ধ সাধু নাকি প্রতিপক্ষের উপর এমন মন্ত্র ছুঁড়েছে যাতে তারা লিস্টারকে হারাতে না পারে! এর মধ্যে সত্যতা কতটুকু কে জানে। তবে সত্যিটা হলো চলতি মৌসুমে লিস্টার সিটি মাত্র তিনটা ম্যাচ হেরেছে। দুইটা আর্সেনালের কাছে। একটা লিভারপুলের কাছে! ২২টা জয় ছাড়াও তাদের রয়েছে ১১টা ড্র।

লিস্টার সিটি দুর্দান্ত একটা মৌসুম কাটালো। চারদিক থেকে তাদের দিকে ছুটছে প্রসংশাবান। কিন্তু ক্লাউডিও রেনেরি বলছেন, এই সফলতা ধরে রাখা কঠিন হবে। লিস্টার সিটির থাই মালিকপক্ষ যদি উদার হস্তে খরচ করতে রাজি না হন, তবে আগামী মৌসুমের জন্য উপযুক্ত দল গঠন করাই কঠিন হবে রেনেরির জন্য। রেনেরির এমন হুঁশিয়ারির পর থাই মালিকপক্ষ কী করবে কে জানে! তবে আপাতত লিস্টার ভক্তরা পৃথিবীজুড়েই উৎসবের বন্যা ছুটিয়ে দিয়েছে। এই বন্যা লিস্টারকে কতদূর নিয়ে যাবে, তা কেবল ভবিষ্যতই বলতে পারে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর