সোমবার, ১৬ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

শেষ মুহূর্তে স্বপ্ন ভঙ্গ

মেজবাহ্-উল-হক

শেষ মুহূর্তে স্বপ্ন ভঙ্গ

সিদ্দিকুর রানারআপ

ক্রিকেটে— টি-২০ বিশ্বকাপে বেঙ্গালুরুতে ভারতের বিরুদ্ধে মাশরাফিদের পরাজয়টি যদি হয় ‘কষ্টের নদী’ তবে গলফে— মরিশাসে ইউরোপিয়ান ট্যুরে সিদ্দিকুরের শিরোপা হাতছাড়া হওয়ার ঘটনাটি অবশ্যই ‘বিষাদ সিন্ধু’! শেষ তিন বলে দুই রান করলেই জিতে যেত বাংলাদেশ। এক রান করলে ম্যাচ ‘টাই’। আর কাল শেষ তিন হোলে ‘পার’ কিংবা একটি ‘বগি’ পেলেও শিরোপা জিতে যেতেন সিদ্দিকুর। কিন্তু দেশসেরা গলফার তিন হোলে একটিতে ‘ডাবল বগি’ আরেকটিতে ‘বগি’ খেয়ে নিশ্চিত শিরোপাটা যেন হাতছাড়া করলেন।

শুধু সিদ্দিকুরেরই নয়, স্বপ্নভঙ্গ হয়ে গেল বাংলাদেশের। সিদ্দিকুর আফ্রো-এশিয়া ব্যাংক ওপেনের শিরোপা জিততে পারলে গলফ দুনিয়ায় অনন্য এক উচ্চতায় পৌঁছে যেত বাংলাদেশ। সিদ্দিকুর সামনের দুই বছর ইউরোপিয়ান ট্যুর, আফ্রিকান ট্যুর ও এশিয়ান ট্যুরে সরাসরি খেলার সুযোগ পেতেন। রিও অলিম্পিকেও খেলার যোগ্যতা অর্জন করতেন। কিন্তু সব কিছুই হাতছাড়া হয়ে গেল। যদিও এখনো অলিম্পিকে খেলার সুযোগ রয়েছে। তবে ১০ মিলিয়ন ইউরো প্রাইজমানির এই টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় হওয়াও কিন্তু চাট্টিখানি কথা নয়।

দেশের অন্যতম সেরা গলফার সাখাওয়াত হোসেন সোহেল বলেন, ‘বাংলাদেশের কোনো গলফার ইউরোপিয়ান ওপেন জিততে পারে এটা ছিল কল্পনাতীত। কিন্তু এখন বাস্তব। যদিও সিদ্দিকুর জিততে পারেননি, তবে দেখিয়ে দিয়েছেন আমাদের সামর্থ্য আছে।’

গলফের পরিচিত মুখ মেজর (অব.) মাহমুদ বলেন, ‘জিতলে এটি হতো বাংলাদেশের গলফের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ঘটনা। তারপরও দ্বিতীয় হয়ে সিদ্দিকুর দেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করেছেন। এর আগে আমরা এশিয়ান ট্যুর আয়োজন করেছি। সিদ্দিকুর ইউরোপিয়ান ট্যুরে ভালো করায়, এখন এই টুর্নামেন্টও আয়োজন করা সহজ হবে।’শেষ মুহূর্তে এসে শিরোপা হাতছাড়া হওয়ার ঘটনা সিদ্দিকুরের জন্য নতুন কিছু নয়। এর আগে ২০১৫ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত এশিয়ান ট্যুরের টুর্নামেন্ট প্যানাসনিক ওপেনেও শেষ মুহূর্তে শিরোপা হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল সিদ্দিকুরের। একই বছর থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এশিয়ান ট্যুরের আরেকটি টুর্নামেন্ট কিংস কাপেও শেষ মুহূর্তে স্বপ্নভঙ্গ হয়ে গিয়েছিল। এ ছাড়া আরও দুই দুটি এশিয়ান ট্যুরের শিরোপা হাতছাড়া হয়ে গেছে।

বার বার শেষ তিন চার হোলেই খারাপ করছেন সিদ্দিকুর। বাংলাদেশের অন্য গলফারদের বেলায়ও দেখা যায় শেষ মুহূর্তের চাপটা নিতে পারেন না। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের খুব ভালো করতে না পারার প্রধান কারণ হচ্ছে শেষ মুহূর্তের চাপটা নিতে না পারা। তবে মরিশাসের ট্র্যাজেডিটা ক্রীড়ামোদীদের কষ্ট বাড়িয়ে দিয়েছে। শেষ তিন হোলের আগে সিদ্দিকুর রহমান কোরিয়ান গলফার ওয়াংয়ের চেয়ে তিন ‘আন্ডার পার’ ছিলেন! কিন্তু ১৬তম হোলে ডাবল বগি, ১৭তম হোলে বগি এবং শেষ হোলে ‘পার’! অন্যদিকে ওয়াং দুই হোলে ‘পার’ করে শেষ হোলে ‘বার্ডি’ মেরে শিরোপা জিতে গেলেন। চার রাউন্ড মিলে সিদ্দিকুর পারের চেয়ে ৫ শট কম খেলেছেন। আর ওয়াং খেলেছেন ছয় শট কম। পারের সমান শট খেলেন আর্জেন্টিনার স্ট্যানিসলাও ও বেলজিয়ামের নিকোলাস হয়েছেন তৃতীয়।

গলফে সবচেয়ে বেশি দরকার হয় মানসিক দৃঢ়তা। ভালো খেলোয়াড় হওয়ার পাশাপাশি মনস্তাত্ত্বিকভাবেও শক্ত হতে হয়। গলফের কিংবদন্তি টাইগার উডসকে তার আর্মি অফিসার বাবা মানসিকভাবে শক্ত করতে তিন বছর বয়স থেকেই একজন ক্যাপ্টেনকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। যার কাজ ছিল নিয়মিত উডসকে বিভ্রান্তিতে ফেলে দেওয়া এবং সেখান থেকে পরিত্রাণ করা। এভাবেই ধীরে ধীরে উডস মানষিকভাবে দৃঢ় হয়ে ওঠেন। তারপর তো গলফ দুনিয়ায় রাজত্ব করেন অনেক দিন।

বাংলাদেশের তারকা গলফাররা তো এসেছেন ‘বল বয়’  কিংবা ‘ক্যাডি’ থেকে। ছোটবেলা থেকে গলফ নিয়ে   বড় স্বপ্ন না দেখলেও কোর্সে গলফ খেলা দেখতে  দেখতেই এখন গলফার। তারপরও আমাদের দেশের গলফাররা ‘অদম্য মেধাবী’! কিন্তু শেষ মুহূর্তে মানষিক  চাপটা আর নিতে পারেন না। সে কারণেই শিরোপার খুব   কাছে গিয়েও তা হাতছাড়া হয়ে যায়। এক সময় ক্রিকেটেও এমন সমস্যা ছিল। সামর্থ্য থাকার পরও পারত না বাংলাদেশ।     মাঠে হারার আগেই ক্রিকেটাররা মানসিকভাবে একবার হেরে বসে থাকতেন। কিন্তু মনোবিদ নিয়োগ দেওয়ার পর সেই  সমস্যা অনেকাংশেই দূর হয়ে গেছে। এখন গলফেও একজন সার্বক্ষণিক মনোবিদ নিয়োগ করা জরুরি। তাহলে হয় তো আর এভাবে তীরে এসে তরী ডুববে না।

সর্বশেষ খবর