বুধবার, ২৫ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

মুস্তাফিজের খেলা বলে কথা

মনিরুল ইসলাম মনি, সাতক্ষীরা

মুস্তাফিজের খেলা বলে কথা

রবিবার সাতক্ষীরা শহরের ঘরোয়া হোটেল বন্ধ। সব কর্মচারী কাজ বাদ দিয়ে খেলা দেখছেন। আইপিএলে একসঙ্গে মুস্তাফিজ-সাকিবের খেলা— সেদিন কি আর কাজ করা যায়? কথাগুলো বলছিলেন শহরের শহীদ আবদুর রাজ্জাক পার্কের সামনে ঘরোয়া হোটেলের ম্যানেজার রনি। শুধু সাতক্ষীরা শহর নয়, গোটা জেলায় একই দৃশ্য। এদিকে কাটার মাস্টার খ্যাত মুস্তাফিজের বাড়ি কালিগঞ্জ উপজেলার তেঁতুলিয়া স্কুলমাঠ ও বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায় আরেক দৃশ্য। সব মানুষ বড় পর্দায় খেলা দেখছে। মুস্তাফিজের বোলিংয়ের সময় আনন্দ-উল্লাস করছে। হায়দরাবাদের খেলার দিন তার এলাকার সব শ্রেণি-পেশার মানুষ সব কাজ বাদ দিয়ে কাটার মাস্টারের খেলা দেখার জন্য রাতে খেলা হলেও দুপুর থেকে তোড়জোড় শুরু হয়ে দেয়। শুধু মুস্তাফিজের এলাকা নয়, গোটা জেলায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষ সব কাজ বাদ দিয়ে মুস্তাফিজের খেলা দেখে।

সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সদস্য রুহুল কুদ্দুস জানান, ‘মুস্তাফিজের খেলার দিন আগে থেকেই প্রস্তুত থাকি। মুস্তাফিজের খেলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত টিভির সামনে থেকে উঠি না।’ কাটার মাস্টারের খেলার দিন এলাকার কৃষক তার কাজ বাদ দেয়, ব্যবসায়ী তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়, পাড়ার ছেলেরা তাদের খেলা বাদ দিয়ে ক্লাব বা খেলার মাঠে বড় পর্দা টানিয়ে দেখে মুস্তাফিজের খেলা।

কালিগঞ্জের তারালি ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে এমন দৃশ্য। মোবাইল ফোন কোম্পানি রবি আজিয়াটা লিমিটেডের পক্ষ থেকে মুস্তাফিজের বাড়ির পাশে তেঁতুলিয়া স্কুলমাঠে মুস্তাফিজের সৌজন্যে বড় পর্দায় দেখানো হচ্ছে খেলা। মাঝেমধ্যে সেখানে দর্শক ও মুস্তাফিজ-ভক্তদের জন্য খাবার ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করে থাকে মুস্তাফিজের পরিবার। বিশেষ করে মুস্তাফিজের মেজ ভাই মোকলেছুর রহমান পল্টু ও তার বাবা আলহাজ আবুল কাশেম খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করেন।

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ—আইপিলে সানরাইজ হায়দরাবাদের সর্বনিম্ন ইকনোমি বোলিং করে আবারও আলোচনায় এসেছেন কাটার মাস্টার।

১৪ ম্যাচে ১৬ উইকেট নিয়ে এবারের আইপিএল আসরে সেরাদের তালিকায় তার অবস্থান হওয়ায় গোটা দেশবাসীর সঙ্গে আনন্দে ভাসছে সাতক্ষীরাবাসী।

অফিস-আদালত, খেলার মাঠসহ সব জায়গায় চলছে মুস্তাফিজকে নিয়ে আলোচনা। তেঁতুলিয়া স্কুলমাঠে বড় পর্দায় খেলা দেখতে আসা স্থানীয় বরেয়া মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শরীরচর্চার শিক্ষক এ কে এম হাসানুজ্জামান বলেন, ‘আমার ছাত্র মুস্তাফিজের ছবি প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনের দেয়ালে সাঁটা হয়েছে, এতে আমার স্কুল এবং আমাদের গর্ববোধ হচ্ছে।’

মুস্তাফিজের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হাফিজ বলেন, ‘আমার ভালোভাবে মনে আছে বৈশাখের ১১ তারিখে জাতীয় দলে সুযোগ পায়, আজ তার জাতীয় দলে খেলার বয়স হয়েছে ১ বছর ১৪ দিন। মুস্তাফিজের খেলার দিন বড় পর্দার ব্যবস্থা করি এবং সব কাজ বাদ দিয়ে ওর খেলা দেখি। মুস্তাফিজ উইকেট নিলে কী অনুভূতি হয় তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। এলাকার মানুষ যখন বলে তুই মুস্তাফিজের বন্ধু, তখন কী যে ভালো লাগে বলে বোঝাতে পারব না।’

মুস্তাফিজের আরেক বন্ধু যতীন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, ‘আইপিএলেও সত্যি অসাধারণ বল করেছে মুস্তাফিজ। আমার বন্ধু বিশ্বের বাঘা বাঘা বোলারের মধ্যে সেরা তিনে আছে। আমার বন্ধুর এ অর্জনে আমি খুব খুশি।’

মুস্তাফিজের বাবা আলহাজ আবুল কাশেম বলেন, ‘মুস্তাফিজ এখন আর আমার একার নয়, সে এখন সাতক্ষীরা তথা দেশের সবার। সন্তানের অর্জনে পিতা-মাতার চেয়ে কেউ বেশি খুশি হয় না। আইপিএলর মতো আসরে আমার ছেলে ম্যাচসেরা হচ্ছে, এ অনূভূতি আমি বোঝাতে পারব না।’

মুস্তাফিজের এলাকার লোকজন যাতে তার সব ম্যাচ বড় পর্দায় এবং লোডশেডিংয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে দেখতে পারে মোবাইল ফোন কোম্পানি রবি আজিয়াটা লিমিটেডের পক্ষ থেকে সেজন্য জেনারেটরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একে মুস্তাফিজের ভক্তরা স্বাগত জানিয়েছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর