মঙ্গলবার, ৩১ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

ইংরেজি ও ব্যাটিংয়ে ভয় মুস্তাফিজের

মেজবাহ্-উল-হক

ইংরেজি ও ব্যাটিংয়ে ভয় মুস্তাফিজের

ভারত মাতিয়ে গতকাল রাতে দেশে ফিরেন ‘কাটার মাস্টার’ মুস্তাফিজুর রহমান। আইপিএলে সানরাইজ হায়দরাবাদকে চ্যাম্পিয়ন করে ঢাকায় ফেরার পর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে লাল গোলাপের মুকুট পরিয়ে বরণ করে নেওয়া হয় তাকে —রোহেত রাজীব

দ্য ফিজ+ভুমি+ওয়ার্নার = আইপিএল ট্রফি! —এটি পরিমিতির কোনো সূত্র নয়! আইপিএল শেষে এক ক্রিকেটামোদীর মন্তব্য। ছোট্ট এক বাক্যে অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এবারের আইপিএলের সার-সংক্ষেপ। এই তিন ক্রিকেটারই এবার সান রাইজার্স হায়দরাবাদকে চ্যাম্পিয়ন করেছে। 

আইপিএলে তারকার ছড়াছড়ি। অথচ সান রাইজার্স হায়দরাবাদে সেই মানের কোনো তারকাই ছিল না। বলতে গেলে সদ্য সমাপ্ত আইপিএলে অতীত পারফরম্যান্সের বিচারে সবচেয়ে ‘পুওর’ দল হায়দরাবাদ! তারপর প্রথম দুই ম্যাচে হারার পর আলোচনাতেই ছিল না। কিন্তু সেই দলটা হয়ে গেল চ্যাম্পিয়ন।

সান রাইজার্স হায়দরাবাদের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পেছনে ‘টনিক’ হিসেবে কাজ করেছে মুস্তাফিজের ক্যারিশম্যাটিক বোলিং! অথচ কী সস্তা দামেই না মুস্তাফিজকে কিনেছিল সান রাইজার্স হায়দরাবাদ! মূল্য ছিল মাত্র দেড় কোটি টাকা। যেন তামার দামে ডায়মন্ড কেনা! যেখানে কিউই বোলার ট্রেন্ট বোন্টকে হায়দরাবাদ কিনেছিল সাড়ে চার কোটি টাকায়। আর সেই বোল্ট খেলার সুযোগ পেয়েছে মাত্র এক ম্যাচ। তাও আবার যে ম্যাচে (কোয়ালিফায়ার) মুস্তাফিজ ইনজুরিতে ছিলেন। কিন্তু মুস্তাফিজের অভাব পূরণ করতে পারেননি মোটেও।

এক মুস্তাফিজই যেন পুরো দলের মনোবল বদলে দিয়েছিলেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, যে মুস্তাফিজ বদলে দিয়েছে সান রাইজার্সকে সেই মুস্তাফিজের ভাষাই কিন্তু কেউ বোঝে না! সবাই বোঝে না— ঠিক তা নয়! একজন বুঝতেন। তিনি হায়দরাবাদের সবচেয়ে কম দামে কেনা স্থানীয় ক্রিকেটার রকি ভুই। তার দাম ছিল মাত্র ১০ হাজার রুপি। মুস্তাফিজ ক্যারিশম্যাটিক পারফরম্যান্স করায় এই ১০ হাজার রুপির রকি ভুই হয়ে যান সান রাইজার্সের ১০ বিলিয়ন রুপির সম্পদ, শুধু বাংলা জানার কারণে। সান রাইজার্স ও মুস্তাফিজের মধ্যে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল এই ভুই।

হায়দরাবাদ দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে মুস্তাফিজের সঙ্গে আগে থেকেই পরিচয় ভারতের স্থানীয় ক্রিকেটার ভুইয়ের সঙ্গে। ২০১৪ সালে ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে খেলার সময় মুস্তাফিজের সঙ্গে তার পরিচয়।

টিম মিটিংয়ে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত কিংবা ওয়ার্নারের মেসেজ ভুই তা মুস্তাফিজকে বুঝিয়ে দিতেন। আবার মুস্তাফিজের কথা অধিনায়ক ও কোচিং স্টাফদের বুঝিয়ে দিতেন। কিন্তু মাঠে গেলে সমস্যায় পড়তে হতো। তখন সংকেতে যোগাযোগ করতেন। ভুই বলেন, ‘যে বলটি ও স্লোয়ার দেবে তার আগে হাত দেখাতেন। আর বলটি বাউন্স করবেন, তার আগে মাথা দেখাতেন। তখন সেভাবে ফিল্ডিং সাজাতেন ওয়ার্নার।’

ইংলিশ না বুঝলেও ইঙ্গিতেই মুস্তাফিজের সব কথা যেন বুঝে ফেলতেন ওয়ার্নার। ইঙ্গিতে উপদেশও দিতেন। একই কাজ করতেন কোচ টম মুডিও। নিজের প্রতিভা ও কোচ-অধিনায়কের পরামর্শে বোলিং করেই আইপিএল জয় করলেন মুস্তাফিজ।

এবারের আইপিএলে কাটার মাস্টার যে আতঙ্ক ছড়িয়েছেন, তার তুলনায় ১৭ উইকেট শিকার খুব বড় কিছু নয়। ডেথ ওভারেও মুস্তাফিজের সামনে পড়লে কাঁপাকাঁপি শুরু করে দিতেন ব্যাটসম্যানরা। ফাইনালে মাত্র এক উইকেট নিয়েছেন। অথচ ম্যাচে ‘টর্নেডো’ টাইপের ব্যাটিং করা ক্রিস গেইলও সমীহ দেখিয়েছেন কাটার মাস্টারকে।

আইপিএলে এক ম্যাজিকের নাম ছিল— মুস্তাফিজ! দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পুরস্কার হিসেবে ‘উদীয়মান ক্রিকেটার’ পুরস্কারও জিতেছেন। যে পুরস্কারটি এর আগে ভারতের বাইরের কোনো ক্রিকেটার পাননি। মুস্তাফিজই প্রথম বিদেশি ক্রিকেটার হিসেবে জিতেছেন। মুস্তাফিজ পেয়েছেন ৮৩.২ ভোট, নিকততম প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের লোকেশ রাহুল পেয়েছেন মাত্র ৬.৫ ভোট। দাপুটে পারফরম্যান্স দেখিয়ে মুস্তাফিজ ভারতীয়দের মনও জয় করে নিয়েছেন।

আইপিএল খেলতে গিয়ে কী কষ্টই না করতে হয়েছে কাটার মাস্টারকে। সতীর্থদের মধ্যে একমাত্র রকি ভুই ছাড়া আর কারো সাথে কথা হতো না। কোথাও ঘুরতেও যেতেন না। সারা দিন হোটেল রুমেই থাকতেন। মুস্তাফিজ সম্পর্কে ভুই বলেন, ‘সে সব সময় নিজের রুমেই থাকত। ইংলিশ না পারার কারণে ফেসবুকেও বসত না। আমার সঙ্গে যখনই তার কথা হতো, সে তার পরিবার নিয়ে কথা বলত। নিজের বলিং সম্পর্কে তেমন কিছু বলত না। সে কিভাবে এই পর্যায়ে এসেছে সে কথা বলতেই বেশি পছন্দ করত। তবে অধিকাংশ সময় স্কাইপে তার ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলত। তার ভয়ের কারণ ছিল দুটি— একটি ইংলিশ, আরেকটি ব্যাটিং করা।’

সর্বশেষ খবর