মঙ্গলবার, ২১ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

আর্জেন্টিনা না যুক্তরাষ্ট্র

ফাইনালে ওঠার লড়াই

ক্রীড়া ডেস্ক

আর্জেন্টিনা না যুক্তরাষ্ট্র

রাত পোহালেই যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ফাইনালে ওঠার লড়াই। মাঠে নামার আগেই গা গরম করে নিচ্ছেন মেসিরা —এএফপি

দিয়েগো ম্যারাডোনা সদ্য বিদায় নিয়েছেন ফুটবল থেকে। তারপরও দলটাতে টিকে ছিল আর্জেন্টাইন গ্রেটদের অনেকেই। গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা ছাড়াও ছিলেন অর্তেগা, আয়ালা আর জানেত্তিরা। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামনে সেদিন আর্জেন্টাইন গর্ব ধূলোয় মিশে গিয়েছিল। ১৯৯৫ সালের ১৪ জুলাই। উরুগুয়ের মাটিতে অনুষ্ঠিত কোপা আমেরিকার ম্যাচে আলবেসিলেস্তদের সেদিন ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। অবশ্য সেবার আর্জেন্টিনার খুব একটা ক্ষতি হয়নি। গ্রুপপর্ব পাড়ি দিয়ে আলবেসিলেস্তরা ঠিকই কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছিল। দীর্ঘ দুই দশক পর কোপা আমেরিকায় আবারও মুখোমুখি আর্জেন্টিনা-যুক্তরাষ্ট্র। গত দুই দশকে দুই দল আরও ৬ বার মুখোমুখি হয়েছে। এর মধ্যে তিনবারই জিতেছে আর্জেন্টিনা। একবার জিতেছে যুক্তরাষ্ট্র।

অতীত-বর্তমানের পরিসংখ্যান ছাপিয়েও আগামীকাল অনেক বড় বিষয় হয়ে থাকছে লিওনেল মেসির পারফরম্যান্স। ফুটবল দুনিয়া যে কজন তারকাকে ধারণ করে রাখতে চায় এর মধ্যে নিঃসন্দেহে লিওনেল মেসি একজন। এরই মধ্যে তিনি নিজেকে সর্বকালের সেরাদের মধ্যে শামিল করেছেন। আগামীকাল সকালে কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষের নামও লিওনেল মেসিই। যিনি একাই ম্যাচের গতিপথ বদলে দেওয়ার সামর্থ্য রাখেন। যেমনটা করেছেন কোয়ার্টার ফাইনালে ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে। কিন্তু কোপা আমেরিকার শতবার্ষিকী টুর্নামেন্টের স্বাগতিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জার্মান কোচ জার্গেন ক্লিন্সম্যান আর্জেন্টিনাকে ভয় পেতে মোটেও রাজি নন। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ‘আমরা কেন কোপা আমেরিকা জিততে পারবো না। আমি তো না জেতার কোনো কারণ দেখি না।’ ক্লিন্সম্যান সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনাকে মোটেও পাত্তা দিতে রাজি নন। এর কারণটাও তিনি বলে দিলেন। ‘আমরা গত কয়েক বছরে ইউরোপ-আমেরিকায় অনেক কঠিন ম্যাচ খেলেছি। আমরা এগুলোতে জয়ও পেয়েছি।’ ক্লিন্সম্যান মনে করেন, আর্জেন্টিনার বিপক্ষে জয় পাওয়া খুব কঠিন কিছু হবে না। ক্লিন্সম্যান যাই বলুন না কেন, তাকে কয়েকটা ধাঁধার সমাধান করতেই হবে। নাহলে এমন দৃঢ়তা দিয়ে শুধু আর্জেন্টিনার বিপক্ষে কিছুই করতে পারবেন না। লিওনেল মেসির সামনে বাধ দিতে হবে। রুখতে হবে আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডকে। যেখানে রোহোরা যে কোনো মুহূর্তেই প্রলয়ঙ্করী ঝড় তুলতে পারেন। হিগুয়েন, আগুয়েরোরা গোলের জন্য মুখিয়ে থাকেন প্রতি মুহূর্তে। আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডকে রুখতে পারলেও মেসি-মাসকারেনোর বুঝা-পড়াকে ক্লিন্সম্যান রুখবেন কী করে! আর্জেন্টাইন ডিফেন্স থেকে ফরোয়ার্ডে যে সাপ্লাই লাইন তা কাটবেন কী করে ক্লিন্সম্যান! সবমিলিয়ে আর্জেন্টিনাকে রুখতে হলে যুক্তরাষ্ট্রকে ভিনগ্রহের ফুটবলই খেলতে হবে।

এদিকে লিওনেল মেসি কোপা আমেরিকার শিরোপা ভিন্ন চিন্তাই করতে পারছেন না। বার বার ঘুঘু ধান খেয়ে যাচ্ছে। এবার তিনি ওত পেতে বসে আছেন। প্রতিটা ম্যাচে তার পারফরম্যান্সই এর প্রমাণ। দিনে দিনে তিনি আকাশি নীল-সাদা জার্সিতে আরও বেশি ছন্দময়, আরও বেশি শৈল্পিক হয়ে উঠছেন। মেসির সঙ্গে যোগ হয়েছে হিগুয়েন-আগুয়েরোদের পরিপক্বতা। আছেন এরিক লামেলা আর লেভেজ্জিদের মতো যোগ্য সঙ্গী। আর্জেন্টিনা তার সর্বকালের সেরা একটা জেনারেশন দেখছে। অথচ দলটার প্রাপ্তি বলতে গেলে একেবারেই শূন্য। ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থাকা আলবেসিলেস্তদের সামনে শিরোপা উৎসবের জন্য মাত্র দুটো বাধা। সেমিফাইনাল জিতলেই ফাইনালে থাকবে কলম্বিয়া অথবা চিলি। গত কোপা আমেরিকা ফাইনালে চিলির কাছে হেরেই শিরোপাবঞ্চিত হয়েছিলেন লিওনেল মেসি। আবারও কী সেই চিলির সামনেই পরতে যাচ্ছে আলবেসিলেস্তরা! অবশ্য তার আগে মার্কিনীদের ব্যরিয়ারটাও পাড়ি দিতে হবে আর্জেন্টিনাকে। লিওনেল মেসিরা এজন্য প্রস্তুতি নিয়ে বসেই আছেন। দেখা যাক, এবার আর্জেন্টাইনদের ভাগ্যে কোপা আমেরিকা আছে কী না!

সর্বশেষ খবর