শনিবার, ২৫ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

তারকা ক্রিকেটারদের দাপট

মেজবাহ্-উল-হক

তারকা ক্রিকেটারদের দাপট

সদ্য সমাপ্ত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে সর্বোচ্চ ৭১৯ রান করেছেন রকিবুল হাসান। যিনি জাতীয় জার্সি সব শেষ খেলেছেন ২০১১ সালে। সর্বোচ্চ ৩০ উইকেট পেয়েছেন চতুরঙ্গ ডি সিলভা। শ্রীলঙ্কার স্পিনার। সেরা অলআউট আল-আমিন— ৬৭২ রান ও ১৬ উইকেট। ২২ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার এখনো জাতীয় দলের হয়ে খেলার সুযোগ পাননি।

—এই পরিসংখ্যান দেখে মনে হতে পারে জাতীয় দলের তারকা ক্রিকেটার বুঝি ব্যর্থ লিগে! মোটেও না। এবারের আসরে রীতিমতো দাপট দেখিয়েছেন জাতীয় দলের তারকা ক্রিকেটাররা। দেশের সেরা ওপেনের তামিম ইকবাল ৪৭.৬০ গড়ে করেছেন ৭১৪ রান। এবারের আসরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি। দুই সেঞ্চুরির সঙ্গে ৪ হাফ সেঞ্চুরিও রয়েছে তার। তামিমের স্ট্রাইকরেটও দারুণ—৯০.৭২।

ভারতীয় সেলিব্রেটি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আইপিএলে খেলার কারণে সাকিব আল হাসান খেলতে পারেননি পুরো লিগ। কিন্তু শেষ দিকে আবাহনীর নতুন করে জ্বলে ওঠার পেছনে বড় অবদান তারই। প্রতিটি ম্যাচেই দারুণ পারফরর্ম করেছেন। মাত্র ৮ ম্যাচে নিয়েছেন ১৮ উইকেট। দুটি হাফ সেঞ্চুরিও রয়েছে সাকিবের।

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের দল শেখ জামাল সুপার লিগে উঠতে ব্যর্থ। তাই ১১ ম্যাচের বেশি খেলতে পারেননি জাতীয় এই তারকা অলরাউন্ডার। কিন্তু গ্রুপ পর্বের প্রতিটি ম্যাচেই দারুণ খেলেছেন রিয়াদ। ১১ ম্যাচে ২১ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ৪৯.৭০ গড়ে করেছেন ৪৯৭ রান। দুই দুটি সেঞ্চুরিও রয়েছে তার। মাহমুদুল্লাহ যেভাবে পারফর্ম করছিলেন সুপার লিগে খেলতে পারলে হয়তো বোলিং-ব্যাটিং দুই বিভাগেই সেরা হতে পারতেন। তাই আফসোসই হতে পারে জাতীয় দলের এই তারকা ক্রিকেটারের।

ডায়মন্ড যে নর্দমার মধ্যে থাকলেও চকচক করে তা-ই যেন বুঝিয়ে দিয়েছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। এবারের প্রিমিয়ার লিগে এমন একটি দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন যে দলে (কলাবাগান ক্রীড়া চক্র) তিনি ছাড়া আর কোনো বড় তারকাই ছিল না। তারপরেও সুপার লিগে ওঠার লড়াইয়ে ছিল তার দল। অসাধারণ খেলেছেন নড়াইল এক্সপ্রেস। বোলার হয়েও এক ম্যাচে সাইক্লোন গতির এক সেঞ্চুরিতে দলকে জিতিয়েছেন। তা ছাড়া ১১ ম্যাচে নিয়েছেন ২২ উইকেট।

মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত— জাতীয় দলের এই তরুণ তুর্কি যে এক সব্যসাচী ক্রিকেটার তা আরেকবার বুঝিয়ে দিলেন। বল হাতে ১৫ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ব্যাট হাতে করেছেন ৬২২ রান। গড় ৭৭.৭৫। স্টাইকরেটও একশর ওপরে। তবে শুধু পরিসংখ্যান দেশে মোসাদ্দেকের সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া কঠিন। কেন না বেশ কয়েকটি ম্যাচে প্রায় হারতে বসা ম্যাচ থেকে আবাহনীকে জয় এনে দিয়েছেন।

শুধু বাংলাদেশেই নয়, সাত-আট নম্বরে এক সময় বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যান ছিলেন নাসির হোসেন। তাকে বলা হতো ‘দ্য ফিনিশার’। কিন্তু মাঝে কীভাবে যেন পথ হারিয়ে ফেলেছিলেন। তবে দাপটে পারফর্ম করে আবার দলেও ফিরেছেন। কিন্তু গত টি-২০ বিশ্বকাপে তিনি কোচের কাছ থেকে অবহেলা ছাড়া আর কিছুই পাননি। দলের সঙ্গে থাকলেও এক ম্যাচেও তাকে মাঠে নামানো হয়নি। তবে জাতীয় লিগে দাপুটে পারফরম্যান্স দেখিয়ে নাসির যেন তার উপেক্ষার জবাব দিলেন ভালোভাবেই। বল হাতে ১৪ উইকেট এবং ব্যাট হাতে করেছেন ৫২৮ রান। গড় ৭৫.৪২ —যে কোনো ব্যাটসম্যানের জন্য ঈর্ষণীয়। স্টাইকরেটও একশর কাছাকাছি (৯৬.৮৮)।

এ ছাড়া জাতীয় দলের অন্য ব্যাটসম্যানদের মধ্যে মুশফিকুর রহিম (৫৯৬), নুরুল হাসান সোহান (৫২৭), সাব্বির রহমানও (৫২৩) রানের মধ্যেই ছিলেন। বোলারদের মধ্যে ওপরের সারির অধিকাংশই জাতীয় দলের তারকা। সর্বোচ্চ ২৭ উইকেট শিকারি পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বির অভিষেক না হলেও জাতীয় দলে ছিলেন। ইনজুরির কারণে গত সিরিজে তিনি দলে সুযোগ পাননি। জাতীয় লিগে রাব্বি যেভাবে দাপট দেখিয়েছেন তাতে জাতীয় দলে আবার ফেরাটা তার সময়ের ব্যাপার মাত্র। সাকলাইন সজীব ও তাসকিন আহমেদ নিয়েছেন ২৬টি করে উইকেট। দাপট দেখিয়েছেন পেসার আল-আমিন। ২৫টি উইকেট নিয়েছেন তিনি। ইনজুরি থেকে ফিরে দারুণ বোলিং করেছেন রুবেল হোসেনও। ১৯ উইকেট নিলেও তার বোলিং ছিল অন্যরকম ধার। এ ছাড়া শুভাগত হোম ১৬ উইকেট শিকারের পাশাপাশি ৩০৯ রান করেছেন। জাতীয় দলের ক্রিকেটার মোহাম্মদ মিথুন করেছেন ৫৯০ রান।

জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া মুমিনুল হক ও শামসুর রহমান শুভও অসাধারণ ব্যাটিং করেছেন। মুমিনুল ১৬ ম্যাচে করেছেন ৬৭২ রান, আর শামসুর রহমান শুভ ১১ ম্যাচে করেছেন ৫৫৮ রান।

এখনো জাতীয় দলে সুযোগ পাননি এমন ক্রিকেটারদের মধ্যে ক্যারিশমা দেখিয়েছেন ভিক্টোরিয়ার হয়ে খেলা আবদুল মজিদ। ২ সেঞ্চুরি ও ৫ হাফ সেঞ্চুরিতে তিনি করেছেন ৭০৬ রান। নজর কেড়েছে গত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে খেলা নাজমুল হোসেন শান্ত। এই আসরে ৫৩৭ রান করেছেন এই তরুণ ব্যাটসম্যান। মোহামেডানের হয়ে খেলা স্পিনার নাঈম জুনিয়র নিয়েছেন ২০ উইকেট।

—সব মিলে এবারের জাতীয় লিগে জাতীয় দলের তারকা ক্রিকেটারদেরই জয়জয়কার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর