মঙ্গলবার, ২৮ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

আর্জেন্টিনাকে কাঁদিয়ে চ্যাম্পিয়ন চিলি

রাশেদুর রহমান

আর্জেন্টিনাকে কাঁদিয়ে চ্যাম্পিয়ন চিলি

দলটা নাচছে। গাইছে। একে-অপরকে জড়িয়ে ধরছে। হাতে কোপা আমেরিকার সোনালি রঙা চকচকে ট্রফি। গলায় ঝুলছে স্বর্ণপদক। কেউ শ্যাম্পেনের বোতল হাতে ছিপি খোলায় মন দিয়েছে। একক, দলীয় কিংবা যৌথ ছবি তুলতে ব্যস্ত অন্যরা। নিউ জার্সির ইস্ট রাদারফোর্ডে মেটলাইফ স্টেডিয়ামের সবুজ চত্বরে ব্রাভো-সানচেজ-ভারগাস-ভিডালদের এমন উদ্বাহু নৃত্যে শামিল হলো ভক্তরাও। কেবল মেটলাইফ স্টেডিয়ামেই নয়, ৫ হাজার ২৭৭ মাইল দূরে চিলিতেও তখন চলছে বিজয়োৎসব। অন্যদিকে চিলির এমন পাগলামি উল্লাস দেখতে দেখতেই মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়ছিলেন আর্জেন্টাইন ভক্তরা। ঠিক লিওনেল মেসির মতো। সুদূর আর্জেন্টিনায় তখন শোকের মাতম। লিওনেল মেসির মতোই অশ্রুভরা চোখ নিয়ে কেউ কেউ সান্ত্বনা খুঁজছিলেন পাশের জনের বুকে। কিন্তু ‘হতাশ্বাসের ধূলো’ কী আর এমনিতেই ঝেড়ে ফেলা যায়! সে জড়িয়ে থাকে। মাঠ থেকে ড্রেসিং রুমে, সেখান থেকে জীবনে। এ ধূলো সারা জীবনের জন্য লেগে যায় শরীরের প্রতিটি লোম কূপে।

প্রতিশোধ নেওয়ার উদগ্র বাসনা। ২৩ বছরের শিরোপা আক্ষেপ দূর করার অদম্য ইচ্ছা। সেসঙ্গে আকাশচুম্বি আত্মবিশ্বাস। কোনো কিছুই কাজে এলো না আর্জেন্টিনার। লিওনেল মেসির ক্যারিয়ার সেরা ফর্ম আর দলীয়ভাবে নতুন করে জেগে উঠা আর্জেন্টিনা, কোনো কিছুই শিরোপা উপহার দিতে পারল না ভক্তদের। দুই বছরের মধ্যে তৃতীয় ফাইনালে পরাজিত হলো আলবেসিলেস্তরা। বিশ্বকাপ, কোপা আমেরিকা এবং কোপা আমেরিকা। প্রথমটা জার্মানির কাছে, পরের দুইটা চিলির কাছে হেরে শিরোপাহীন আর্জেন্টিনার দহন যন্ত্রণার পরিধিটা কেবল বাড়লই। ২৩ বছরের আক্ষেপ কত বছরে গিয়ে শেষ হয় এবার কে জানে! আর্জেন্টিনা ইস্ট রাদারফোর্ডে শুরু করেছিল চ্যাম্পিয়নের মতোই। মেসি-আগুয়েরো-বানেগাদের আক্রমণে বিপর্যস্ত ছিল চিলি। কিন্তু ফাইনালে সেই চিরায়ত আর্জেন্টিনাকেই দেখা গেল। গোলের দারুণ সব সুযোগ মিস করার প্রতিযোগিতায় মেতেছিল যেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড লাইন। অবশ্য চিলিও দুর্দান্ত ফুটবল খেলেছে। মেসি আর আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড লাইনের যোগসূত্র কেটে দিতে পেরেছে তারা। বিশেষ করে রোহোর দুর্ভাগ্যজনক লাল কার্ড আর ডি মারিয়ার অফ ফর্ম আর্জেন্টিনাকে বেশ ভুগিয়েছে। লাল কার্ড অবশ্য চিলির দিয়াজও দেখেছেন। দুই দলই ম্যাচের বেশিরভাগ সময় খেলেছে ১০ জন নিয়ে। তবে রোহোর অনুপস্থিতিতে লিওনেল মেসি অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছিলেন। চিলির পক্ষে সুবিধা হয়েছিল, আগুয়েরোদের সঙ্গে মেসির সাপ্লাই লাইন কেটে দিতে। তবে নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ে গোল শূন্য থাকা ম্যাচটা এরপরও জয়ের সুযোগ ছিল মেসিদের সামনে। টাইব্রেকারে ভিডালের প্রথম শটটা ফিরিয়ে দিয়ে সার্জিও রোমেরো সেই সুযোগ এনে দিয়েছিলেন। কিন্তু লিওনেল মেসির লক্ষ্যভ্রষ্ট শটে  আশায় গুড়ে বালি নিক্ষেপ করে। বিগলিয়া পেনাল্টি মিস করার পর চিলিয়ানরা একদিকে বিজয়োৎসবের জন্য প্রস্তুত হয় অন্যদিকে আর্জেন্টিনা মাথা নত করে মাঠ ছাড়তে শুরু করে।

টানা দ্বিতীয় কোপা আমেরিকা জয় করে চিলির আর্জেন্টাইন কোচ হুয়ান অ্যান্টোনিও পিজ্জি উল্লসিত হলেও মেসির প্রাপ্য সম্মান দিতে মোটেও ভুললেন না। চ্যাম্পিয়নের শিরোপা হাতে তিনি বলেন, ‘মেসি এমনকি কিছু না জিতেও সর্বকালের সেরা। এতে কোনো সন্দেহ নেই।’ আর চিলিয়ানরা টানা দুটি কোপা আমেরিকা জয় করে ইতিহাসের সেরা সময়ই কেবল পাড় করছে না। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে আরও দুরন্ত হয়ে উঠার গল্পও শুনাচ্ছেন সানচেজ-ভিডাল-ব্রাভোরা। এবারের কোপা আমেরিকায় ভারগাস সেরা গোলদাতা, সানচেজ সেরা ফুটবলার আর ব্রাভো সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার জিতেছেন। আর্জেন্টিনাও একেবারে খালি হাতে ফেরেনি। তারা ফেয়ার প্লে অ্যাওয়ার্ড জিতেছে।

সর্বশেষ খবর