বুধবার, ২৯ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

ফিরে এসো মেসি

রাশেদুর রহমান

ফিরে এসো মেসি

১. কোপা আমেরিকার ফাইনালে টাইব্রেকারে পেনাল্টি মিস করার পর হতাশ লিওনেল মেসি ২. বুয়েন্স আয়ার্স বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার পথে অসংখ্য ভক্তকে দেখে অবাক আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার মারকোস রোহো ৩. মেসিকে ফিরিয়ে আনার দাবিতে রাতের অন্ধকার এবং বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিমানবন্দরের ফটকে হাজির ছিল এই ছোট্ট শিশুটিও ৪. ‘মেসি, তুমি ফিরে এসো’ লেখা প্লা-কার্ড হাতে এক স্কুলবালক ৫. আর্জেন্টিনার পতাকায় কাতালুনিয়ার ভাষায় ‘মেসিই সেরা’ লিখে দুই মেসি ভক্ত দাঁড়িয়ে আছে বুয়েন্স আয়ার্স বিমানবন্দরের পাশে

বুয়েন্স আয়ার্স বিমানবন্দরে তখন রাত। বৃষ্টি হচ্ছে। এরই মধ্যে অসংখ্য মানুষের ভিড়। ছেলে-বুড়োদের সঙ্গে বালক-বালিকারাও শামিল। বেশিরভাগের হাতেই প্ল্যা-কার্ড আছে। শব্দগুলো ভিন্ন হলেও বক্তব্যটা হলো, মেসি, তুমি ফিরে এসো। রাতের অন্ধকারেই পরাজিত আর্জেন্টিনা বুয়েন্স আয়ার্স বিমানবন্দরে নেমে এলো। মার্সিডিস বেঞ্জের বাসে চড়ে গেটওয়ে পাড়ি দেবার পথেই ভক্তদের সঙ্গে দেখা। অবাক হয়ে গেলেন মেসিসহ রোহো-আগুয়েরোরা। কোপা আমেরিকা ফাইনালে পরাজয়ের চেয়েও যেন আর্জেন্টাইনদের দুঃখ বেশি মেসির অবসরে। কেবল সাধারণ ভক্তশ্রেণিই তো নয়, মেসির অবসরে নড়ে উঠেছে আর্জেন্টাইন প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ ক্যাসা রোসাডাও। এমনকি যে ম্যারাডোনা দিন কয়েক আগেও মেসির নেতৃত্বের সমালোচনা করেছেন, সেই তিনিই মেসিকে ফিরে আসার জোর আহ্বান জানাচ্ছেন। পুরো জাতিই যেন মেসির দরোজায় হুমড়ি খেয়ে পড়েছে!

দুই বছরের মধ্যে টানা তৃতীয় ফাইনাল খেলল আর্জেন্টিনা। হেরে গেল তিনটাতেই লিওনেল মেসি এর আগেও একবার কোপা আমেরিকা ফাইনাল হেরেছেন ব্রাজিলের কাছে (২০০৭)। চারটা ফাইনাল খেলেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেননি মেসি। এ দুঃখ কোনোভাবেই সামলে নিতে পারলেন না আর্জেন্টাইন জাদুকর। ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলকেই বিদায় জানিয়ে দিলেন নিজের প্রতিই বিক্ষুব্ধ মেসি। কিন্তু দুনিয়াজুড়ে ভক্তরা জানেন, মেসি চলে গেলে আন্তর্জাতিক ফুটবল হারিয়ে ফেলবে তার শ্রী। বিশ্বকাপে দেখা যাবে না ফুটবলের অবর্ণনীয় সৌন্দর্য্য। ম্যাজিক্যাল মোমেন্টামও তৈরি হবে না আর। ফুটবলের ব্যাকরণে যোগ হবে না নতুন নতুন অধ্যায়। মেসিকে কেবল আর্জেন্টিনারই তো নয়, পুরো ফুটবল দুনিয়ারই প্রয়োজন। এ কারণেই মেসির অবসরে বিশ্বব্যাপী তোলপাড়। আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ থেকে গরিবের কুটির পর্যন্ত এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাচ্ছে। আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনা বলছেন, ‘মেসিকে জাতীয় দলে থাকতে হবে। রাশিয়া বিশ্বকাপে তাকে দলের সঙ্গে থাকতে হবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য।’ আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট মরিসিও মাকরি মেসিকে ফোনে অবসরে না যাওয়ার অনুরোধ করেছেন।

রোসারিওতে মেসির প্রথম কোচ ছিলেন আর্নেস্তু বেচ্চিও। তিনি মেসির পক্ষ নিয়ে বলেন, ‘তাকে সবাই কঠোর সমালোচনার পাত্র বানিয়ে নিয়েছে। সব দোষ যেন তারই। অথচ দলটা ১১ জন ফুটবলার নিয়ে গড়া হয়।’ ম্যারাডোনা তো আর্জেন্টাইন ফুটবল ফেডারেশনেরই কঠোর সমালোচনা করলেন। মেসি ফিরে আসবেন কী না তা কেবল ভবিষ্যতই বলতে পারে। তবে অবসরের ঘোষণা দিয়ে আবারও জাতীয় দলে ফেরার ঘটনা অনেক আছে। জিনেদিন জিদানও তো অবসরে চলে গিয়েছিলেন! এইতো কয়েক বছর আগে জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচও অবসর নিয়েছিলেন। তাদেরকে আবারও জাতীয় দলে ফিরতে হয়েছে। জিদান তো দলে ফিরে বিশ্বকাপের ফাইনালও খেলেছিলেন ২০০৬ সালে। বিশ্বজয়ী জার্মান কোচ বেকেনবাওয়ারও নাকি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আগে অবসর নিয়েছিলেন। ২৯ বছরের লিওনেল মেসির পক্ষে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরে আসাটা খুব কঠিন কিছু নয়। আর্জেন্টইনরা যেভাবে নাছোড়বান্দা হয়ে   মেসির দুয়ারে হাজির হয়েছে, তাকে না নিয়ে বুঝি আর ফিরবেই না। মেসি কী এতগুলো আর্জেন্টাইন ভক্তের হৃদয় ভাঙতে পারবেন! নিজের প্রতি অভিমান থেকেই আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানিয়েছেন মেসি। এ অভিমান কতদিন টিকে থাকে তাই এখন দেখার বিষয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর