শনিবার, ২ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

জার্মানি-ইতালি ফুটবল যুদ্ধ

রাশেদুর রহমান

জার্মানি-ইতালি ফুটবল যুদ্ধ

ইতালির গোলরক্ষক বুফন (বামে) এবং জার্মানির গোলরক্ষক নিউয়ার। এ দুজনের যে কেউ আজ জয়ের নায়ক হয়ে উঠতে পারেন —এএফপি

কয়েক মাস পরই ৩৯ পূর্ণ করবেন ইতালিয়ান অধিনায়ক জিয়ানলুইগি বুফন। একজন গোলরক্ষকের জন্য বয়সটা অনেক বেশি। ফিটনেস ধরে রাখার ঝামেলা তো আছেই। তা ছাড়া ফুটবলে উদ্ভাবনী শক্তিও অনেকটা কমে যায় এ বয়সে। অথচ কেমন টগবগে যুবকের শক্তি প্রদর্শন করে চলেছেন বুফন! ইতালিয়ান এ অধিনায়ক এখনো ফুটবল দুনিয়ায় সেরা গোলরক্ষকের দাবিদার। আজ অবশ্য একটা কঠিন পরীক্ষাই হতে যাচ্ছে তার। ওদিকে জার্মানির ম্যানুয়েল নিউয়ার ৩০ বছরের যুবক। একজন বিশ্বজয়ী। একের পর এক রেকর্ড গড়ে চলেছেন। এই তো দিন কয়েক আগে নিজ দেশের প্রথম গোলরক্ষক হিসেবে টানা পাঁচ ম্যাচ গোলশূন্য থাকার রেকর্ড গড়লেন। আজ উয়েফা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে বুফনের ইতালি আর নিউয়ারের জার্মানি।

ইউরোপিয়ান ফুটবলের পাওয়ার হাউস জার্মানি ও ইতালি। দুদলই চার বার করে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। উয়েফা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে অবশ্য এগিয়ে আছে জার্মানরাই। এখানে তারা তিনবারের চ্যাম্পিয়ন। ইতালি জিতেছে একবার। শিরোপা সংখ্যায় জার্মানি এগিয়ে থাকলেও জয়-পরাজয়ের পরিসংখ্যানে কিন্তু এগিয়ে ইতালিয়ানরাই। দুই দলের ৩৭বারের সাক্ষাতে ইতালিই জয় পেয়েছে ১৬বার। জার্মানির মোট জয় ৯টা। বাকি ১২টা ম্যাচ ড্র হয়েছে। জার্মানির জন্য সবচেয়ে ভয়ের ব্যাপার হলো, বিশ্বকাপ কিংবা উয়েফা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে কখনোই তারা ইতালিকে হারাতে পারেনি। হয়তো ড্র হয়েছে। অথবা পরাজয় স্বীকার করতে হয়েছে। এই ভয় নিয়েই আজ বরড্যাক্সে ইউরো কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানরা মুখোমুখি হচ্ছে ইতালিয়ানদের।

গত ইউরো কাপের সেমিফাইনালে জার্মানি ২-১ গোলে ইতালির কাছে হেরে যাওয়ার পর জার্মান কোচ জোয়াকিম লো বলেছিলেন, এই দলটার সঙ্গেই আবার খেলতে নামলে জার্মানি নিঃসন্দেহে জিতবে। ওরা পরে জিতেছেও। এইতো সেদিন প্রীতি ম্যাচে ইতালিকে ৪-১ গোলে হারিয়েছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। কিন্তু বিশ্বকাপ অথবা ইউরো কাপের মতো আসরে জার্মানরা বরাবরই ইতালির কাছে অসহায়। ২০০৬ সালের বিশ্বকাপ সেমিফাইনালেও তো ইতালিয়ানদের কাছে ২-০ গোলে পরাজয় স্বীকার করেছিল জার্মানি। অতীতের এসব দুঃখ ভুলতেই যেন আরও একবার ইউরোতে ইতালির সঙ্গে জার্মানির দেখা করিয়ে দিলো ভাগ্য-বিধাতা। কিন্তু জার্মানি কি পারবে অতীতের পরাজয়গুলোর প্রতিশোধ নিতে! নাকি আরও একবার ফুটবলের ইতালিয়ান দেয়ালে মুখ থুবড়ে পড়বে জার্মানির সব আক্রমণ!

জার্মানরা দাবি করছে, অতীতের পরাজয়গুলোর একটা কঠিন প্রতিশোধই এবার নিতে চায় তারা ইতালির বিপক্ষে। তা ছাড়া ২০১২ ইউরো কাপের ভুল শোধরানোর ব্যাপারটাও তো রয়েছে। হামেলস বলেছেন, ‘আমরা ২০১২’র পরাজয় থেকে শিক্ষা নিয়েছি।’ মিডফিল্ডার টনি ক্রুজ বলেছেন, ‘আমার কাছে এর কোনো অর্থই নেই যে আমরা বড় টুর্নামেন্টে ইতালিকে কখনোই হারাতে পারিনি। আমরা জানি, ইতালি ভালো দল। তাদের হারানোর জন্য প্রস্তুতি নেওয়াটাই হলো আমাদের কাজ।’ ইতালিয়ানরাও পরিসংখ্যানকে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না। বর্তমান জার্মানি যে ভয়ঙ্কর দল, এটা ইতালিয়ানরা ভালোই জানে। ইতালিয়ান ফুটবলার ইমোবাইল বলছেন, ‘আমরা জার্মানিকে অতীতে বহুবার হারিয়েছি। তবে আমরা জানি, বর্তমানে জার্মানি অনেক শক্তিশালী দল। আমরাও অনেক আত্মবিশ্বাসী। বিশেষ করে স্পেনকে হারানোর পর এই আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়েছে।’ শেষ ষোলতে ইতালিয়ানরা স্পেনকে হারিয়েছে। আর জার্মানি শেষ ষোলতে হারিয়েছে স্লোভাকিয়াকে।

ইতালিয়ান তরুণরা ভক্তদের সামনে স্বপ্ন দেখার দারুণ এক সুযোগ এনে দিয়েছে। স্পেনের বিপক্ষে ইতালির ৩-৫-২ ফরমেশন দারুণ কাজ করেছে। বিশেষ করে তাদের মিডফিল্ড স্পেনকে খেলতেই দেয়নি। আর ডিফেন্সেও দেখা গেছে ইতালির সেই পুরনো শান-শওকত। ইতালির এ তরুণ প্রজন্ম কী নতুন কিছু উপহার দিবে ভক্তদের!

হেড-টু-হেড

     ইতালি  জার্মানি পশ্চিম জার্মানি  পূর্ব জার্মানি

জয়     ১৬ ৫    ৩    ১

পরা.  ৯    ১১   ৪    ১

ড্র    ১২   ৪    ৬    ২

গোল  ৬৩   ২৭   ১৩   ৩

তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া।

সর্বশেষ খবর