রবিবার, ৩ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

সময়টা তামিমের

মেজবাহ্-উল-হক

সময়টা তামিমের

সময়টা এখন তামিম ইকবালের। যা করছেন, যেভাবে করছেন, তাতেই সফল। অনেক দিন থেকেই ব্যাট হাতে রীতিমতো রানের ফোয়ারা বইয়ে দিচ্ছেন। তবে শুধু ব্যাট হাতেই নয়, নেতৃত্বেও সফল তিনি। সদ্য সমাপ্ত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে চ্যাম্পিয়ন করেছেন ঢাকা আবাহনীকে।

লিগে তামিম আবাহনীকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকে। যখন কোনো দলের অধিনায়ক সেরা পারফরম্যান্স দেখান তখন দলের অন্য খেলোয়াড়রাও ভালো করার ব্যাপারে বাড়তি অনুপ্রেরণা পান। এবারের প্রিমিয়ার লিগে তামিম করেছেন ৭১৪ রান। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোরার। ৪৭.৬০ গড়ে এই রান করেছেন তামিম। দুই সেঞ্চুরির সঙ্গে চারটি হাফ সেঞ্চুরি। স্টাইক রেটও দারুণ—৯০.৭২। নেতৃত্বের পাশাপাশি পারফর্মার হিসেবেও তামিম সেরা। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে, লিস্ট-এ ম্যাচে ছয় হাজার রান করার অনন্য গৌরব অর্জন করেছেন জাতীয় দলের তারকা ওপেনার।

তামিমের চাচা আকরাম খানের নেতৃত্ব গুণের কথা কারও অজানা নয়। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশকে আইসিসিতে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন। আকরামের নেতৃত্বেই বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পায়। মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত আইসিসি ট্রফিতে নেদারল্যান্ডের বিরুদ্ধে অধিনায়ক আকরামের ম্যাচ জয়ী সেই ৬৮ রানের ইনিংসের কথা ভোলার নয়। ওই ম্যাচ জেতার পরই টাইগারদের বিশ্বকাপ নিশ্চিত হয়েছিল।

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও অধিনায়ক হিসেবে দারুণ সফল ছিলেন আকরাম খান। আবাহনীকে বেশ কয়েকবার প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা এনে দিয়েছেন। এই আবাহনীকে এবার প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা এনে দিয়ে চাচার পর এখন ভাতিজাও (তামিম) শিরোপা এনে দিলেন। সত্যি  এটা অন্যরকম একটা রেকর্ড। চাচা-ভাতিজা দুজনই আবাহনীর শিরোপা জয়ী অধিনায়ক।

টি-২০ বিশ্বকাপেও দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন তামিম ইকবাল। বাংলাদেশ ভালো করতে না পারলেও ড্যাসিং এই ওপেনার হয়েছেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। তামিম করেছেন ২৯৫ রান। ২০১৫ সালটা ছিল তামিমের জন্য স্বপ্নিল এক বছর। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তিনি ১ হাজারের রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ২০১০ সালেও এই কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন তামিম। ২০১৫ সালের আবেদনটা ড্যাসিং ওপেনারের কাছে একটু বেশিই। ইএসপিএন-ক্রিকইনফোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তামিম বলেছেন, ‘২০১০ সালটা ছিল সেরা একটা সময়। সেটা ছিল অনেক বড় অর্জন। ২০১৫ সালেও আমি এই অর্জন করেছি। আমার লক্ষ্য ছিল টেস্ট ও ওয়ানডেতে ৫০-র উপরে গড় রাখা। দারুণ একটি বছর পার করেছি।’

শুধু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই যে দাপট দেখিয়েছেন তা নয়। জনপ্রিয় ঘরোয়া টি-২০র আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগেও (বিপিএল) তামিম দাপুটে ব্যাটিং করেছেন। ৯  ম্যাচে করেছিলেন ২৯৮ রান।

বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে এখন টেস্টের সর্বোচ্চ স্কোরার তামিম ইকবাল। ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে খুলনা টেস্টে ২০৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংসটি খেলেন। এর আগে টেস্ট ডাবল সেঞ্চুরি ছিল কেবল মুশফিকুর রহিমের। শ্রীলঙ্কায় ২০০ রানের একটি দারুণ ইনিংস খেলেছিলেন টেস্ট অধিনায়ক। এছাড়া বাংলাদেশের আর কোনো ব্যাটসম্যান ডাবল সেঞ্চুরি করতে পারেননি।

খুলনা টেস্টে ইমরুল কায়েসের সঙ্গে মহাকাব্যিক এক জুটিও গড়েছিলেন তামিম। ৩১২ রানের ওই জুটি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ক্রিকেটাতিহাসে সর্বোচ্চ। ওই জুটি সম্পর্কে তামিম বলেছেন, ‘পাকিস্তান ৬২৮ রান করার পর টেস্টটি বাঁচানো আমাদের জন্য খুবই কঠিন ছিল। যদিও উইকেটটি খুবই ব্যাটিং সহায়ক ছিল, তারপরেও কঠিন ছিল। তবে আমরা ডিফেন্স করব না। করিওনি। আমাদেরকে অনেক রান করতে হবে, এটা মনে ছিল। প্লান অনুযায়ী ব্যাটিং করেছি। নিজের পছন্দের শটগুলো খেলেছি। যখন বিনা উইকেটে ১৫০ রান হলো, তখন মনে একটা বাড়তি আত্মবিশ্বাস করছিল। আমার ভাবনায় কেবল একটা বিষয়ই ছিল কিভাবে ম্যাচটা বাঁচানো যায়। সেঞ্চুরির পূরণ হওয়ার পর মনে হয়েছিল ডাবল সেঞ্চুরিও সম্ভব। তবে তাদের বোলারদের বিরুদ্ধে খেলা মোটেও সহজ ছিল না। অনেক আবেগ ও কাহিনী রয়েছে ওই পার্টনারশিপের মধ্যে। ইমরুল কায়েস আমাকে খুবই সহযোগিতা করেছে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর