রবিবার, ৩ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

বেল ম্যাজিকে ধরাশায়ী বেলজিয়াম

রাশেদুর রহমান

বেল ম্যাজিকে ধরাশায়ী বেলজিয়াম

জয়ের পর উল্লসিত বেল

ফিফার দরবারে ইউরোপ সেরা দলের নাম বেলজিয়াম। র‌্যাঙ্কিংয়ে এখন ওরা দুই নম্বরে। আর্জেন্টিনার ঠিক নিচেই। সেই দলের মুখোমুখি হতে কার না ভয় লাগে! ওয়েলসও নিশ্চিন্ত থাকতে পারেনি। কিন্তু ১১ জনের দলের চিন্তা-চেতনায় যখন বিজয়ের রঙ লেগে যায়, তখন কারই বা কী করার থাকে! ওয়েলস খেলল ঠিক ওরকমভাবেই। গেরেথ বেলে, অ্যারন রামসি কিংবা অ্যাশলি উইলিয়ামস কেবল তিনজন তারকার নাম। ওয়েলস দলে এদের গুরুত্ব আছে বটে। তবে টেইলর, অ্যালেন কিংবা লেডলির গুরুত্বও কম নয়। গত শুক্রবার গভীর রাতে ফ্রান্সের পিয়েরে-মৌরি স্টেডিয়ামে বেলজিয়ামকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে ঐক্যবদ্ধ ওয়েলস। এ জয়ে সেমিফাইনালে নিশ্চিত হয়ে গেল রোনালদো-বেলে দ্বৈরথ। রিয়াল মাদ্রিদের এ দুই সতীর্থ এবার পরস্পরের চরম শত্রুর ভূমিকায়।

কী দুরন্ত খেলছেন গেরেথ বেলে। নিজের গোলের সুযোগগুলোকেও ঠেলে দিচ্ছেন সতীর্থদের দিকে। কাগজে-কলমে অ্যাশলি উইলিয়ামস অধিনায়ক হলেও ওয়েলসের খেলাটা পরিচালনা করেন বেলেই। রিয়াল মাদ্রিদ এ তারকা বেলজিয়ামের বিপক্ষে দারুণ খেলেছেন। আরও একজন আলো ছড়িয়েছেন। অ্যারন রামসি। তিনি দুটো গোলেই এসিস্ট করেছেন। বেলে-রামসিদের ফুটবল দেখে যে কেউই এখন মুগ্ধ হতে পারে। ওয়েলসের কিংবদন্তি ফুটবলার রায়ান গিগস  তো শনিবার রাতটাকে তাদের ইতিহাসের সেরা রাত বলে উল্লেখ করেছেন এরই মধ্যে। এমন ভালো ফুটবল নাকি তারা কখনোই খেলেনি। নেইনগোলানের গোলে ম্যাচের ১৩ মিনিটেই এগিয়ে যাওয়া বেলজিয়ামকে অপরাজেয়ই মনে হচ্ছিল। ওয়েলসিয়ানরা প্রথমদিকে কেমন যেন বিহ্বল হয়ে পড়েছিল। তবে ধীরে ধীরে ফুটবলের সব সুর-তাল ঠিক করে নিল তারা। পূর্ণ ছন্দে ইউরোপ সেরাদের দম্ভচূর্ণ করে দিলেন বেলেরা। অধিনায়ক অ্যাশলি উইলিয়ামসের ৩১ মিনিটের গোলে সমতায় ফিরে ওয়েলস। তারপর রবসন কানু ৫৫ ও ভোকস ৮৬ মিনিটে আরও দুটি গোল করে দলের জয় নিশ্চিত করেন। প্রথমবারের মতো উয়েফা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে এসেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত করল ওয়েলস।

দীর্ঘ ৫৮ বছর পর কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলছে ওয়েলস। ১৯৫৮ সালে বিশ্বকাপ খেলার পর থেকে আর কোনো আসরেই তাদের উপস্থিতি ছিল না। দীর্ঘ এ অনুপস্থিতিতে ওয়েলসে রায়ান গিগসের মতো অনেক মহাতারকার আগমন হলেও কোনো পরিবর্তন হয়নি। তবে বর্তমান ওয়েলস ইউরোপিয়ান ফুটবলের নতুন পাওয়ার হাউজই হয়ে উঠছে।

প্রিয় দলের এমন দুরন্ত ফর্ম দেখে ওয়েলসিয়ানরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েছে। বেলজিয়ামের বিপক্ষে জয়ের পর কার্ডিফের ‘ফ্যান জোনে’ উৎসবে ফেটে পড়ে ভক্তরা। ফ্রান্সের লিলিতেও দেখা যায় লাল সমুদ্র। শ্যাম্পেইনে গোসল করে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে আর পরস্পরকে জড়িয়ে চিৎকার করে গলা ফাঁটিয়ে উৎসব করে ওয়েলসিয়ানরা। তাদের এ উন্মত্ত উল্লাস দেখে মনে হতে পারে বেলেরা বুঝি কোনো শিরোপা জিতেছেন। প্রথমবারের মতো ইউরো কাপ খেলতে এসেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত করা কোনো অংশেই ওয়েলসের জন্য শিরোপা জয়ের চেয়ে কম নয়। এ জয়ের পর কোচ কোলম্যান এবার আরও বড় লক্ষ্য নির্ধারণ করতেই পারেন। সেটা কী শুধু ইউরো কাপের ফাইনাল? নাকি আরও বড় কিছু! এখনো পর্যন্ত পর্তুগালের চেয়ে একটা দল হিসেবে নিজেদেরকে অনেক বেশি যোগ্য প্রমাণ করেছে ওয়েলসিয়ানরা। তবে ইউরো কাপের মতো আসর জিততে হলে কেবল দলীয় ঐক্যই নয়, প্রয়োজন ঐতিহ্যও। যা রয়েছে জার্মানি, ইতালি, কিংবা ফ্রান্সের মতো দলের। তবে সময় তো অনেক বদলেছে। ফুটবলেও অনেক কিছু বদলে গেছে। ইউরো কাপও তো বদলে গেছে আকারে। এবার কী তবে নতুন কোনো চ্যাম্পিয়ন দেখতে পাবে ইউরোর দর্শকরা!

সর্বশেষ খবর