রবিবার, ৩ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

এখনই কিছু ভাবছে না বিসিবি

ক্রীড়া প্রতিবেদক

এখনই কিছু ভাবছে না বিসিবি

এমন নারকীয় ঘটনা কখনো হয়নি বাংলাদেশে। হামলা করলেও জঙ্গিরা জিম্মি করে রাখেনি কখনো দেশি-বিদেশি নাগরিকদের। এবারই প্রথম জিম্মি করলো এবং নির্মমভাবে হত্যা করে বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বকে ভয়ঙ্কর রাত উপহার দিল জঙ্গিরা। এমন উদ্বুত নির্মম পরিস্থিতিতে বাকরুদ্ধ গোটা দেশ। জঙ্গিদের এমন বর্বর হত্যাকাণ্ডে স্থবির হয়ে গেছে জীবনযাত্রা। এই জঙ্গি হামলার ধাক্কা কি ক্রীড়াঙ্গনে আচড় কাটবে? সময় বলবে। তবে ১৭ কোটি ক্রিকেটপাগল বাঙালি চাইছেন, এর ধাক্কা যেন কোনোভাবেই বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড সিরিজের গায়ে না লাগে। কোনোভাবেই যেন সিরিজটি বন্ধ না হয়। গত অক্টোবরে নিরাপত্তার অজুহাতে বাংলাদেশ সফর স্থগিত করেছিল অস্ট্রেলিয়া। অসিরা সফর না করলেও ইংল্যান্ডের আসার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী বিসিবি এখনই চাচ্ছে না অন্য কিছু ভাবতে।  

অক্টোবরে সামান্য নিরাপত্তার অজুহাতে বাংলাদেশে ক্রিকেট খেলতে আসেনি অস্ট্রেলিয়া। অথচ বিশ্বকাপ ফুটবলের বাছাইপর্ব খেলে গেছে অস্ট্রেলিয়ান ফুটবল দল।  খেলা শেষ করে ঢাকা ছাড়ার পূর্বে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রশংসাও করেন টিম কাহিলরা। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল নাক উঁচু ভাব দেখিয়ে না আসলেও এখানে অনূর্ধ্ব-১৯ যুব বিশ্বকাপ, এশিয়া কাপের মতো বড় বড় আসরগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছে নির্বিঘ্নে। টুর্নামেন্টগুলোতে খেলতে আসা দলগুলোকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয় বাংলাদেশ। তাই আসন্ন ইংল্যান্ড সিরিজেও সর্বোচ্চ নিরাপত্তা থাকবে বলেই বিশ্বাস ক্রিকেটপ্রেমীদের।

দুই টেস্ট ও তিন ওয়ানডে ম্যাচ সিরিজ খেলতে ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসছে অ্যালিস্টার কুক, জেসন রয়, অ্যালেক্স হেলস, জেমস অ্যান্ডারসন, স্টুয়ার্ট ব্রডদের ইংল্যান্ড। জঙ্গি হামলার নারকীয় ঘটনায় বাকরুদ্ধ দেশে কি আসতে দ্বিধাগ্রস্ত হবে ইংল্যান্ড? বিশ্বাস, না। ২০১০ সালে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলে যাওয়া ইংল্যান্ড ২০১১ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেট এবং ২০১৪ সালে টি-২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেটও খেলে গেছে। অতীতের বিচারে টেনশনে চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলার কোনো কারণ নেই! জঙ্গিদের নারকীয় ঘটনার পর ইংল্যান্ড কি সিরিজ নিয়ে নতুন কিছু ভাববে, এ প্রসঙ্গে বিসিবি পরিচালক ও মিডিয়া ম্যানেজার জালাল ইউনুস বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে এখনই মন্তব্য করার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি।

বাংলাদেশে এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো সফরে আসবে ইংল্যান্ড। ২০০০ সালে টেস্ট পায় বাংলাদেশ। ইংল্যান্ড ২ টেস্ট ও ৩ ওয়ানডে ম্যাচের সিরিজ খেলতে ঢাকায় আসে ২০০৩-০৪ মৌসুমে। এরপর বাংলাদেশ প্রথম ইংল্যান্ড সফর করে ২০০৫ সালে। ওই সফরেই বাংলাদেশ অবিশ্বাস্য ক্রিকেট খেলে হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়াকে। কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়া বধের নায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল খেলেছিলেন অবিশ্বাস্য এক সেঞ্চুরির ইনিংস। ২০০৯-১০ মৌসুমে ইংল্যান্ড দ্বিতীয়বারের মতো সফরে আসে। দুই দেশ সর্বশেষ সিরিজ খেলে ২০১০ সালে ইংল্যান্ডে। সিরিজ হারলেও দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলেছিল বাংলাদেশ। লর্ডসে সেঞ্চুরি করে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে অনার্স বোর্ডে নাম লেখান তামিম ইকবাল। প্রথম ইনিংসে ৫৫ রান করার পরে দ্বিতীয় ইনিংসে ১০৩ রানের ইনিংস খেলেন বাঁ হাতি ওপেনার তামিম। ওই টেস্টে ৫ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে অর্নাস বোর্ডে নাম লেখান ডান হাতি পেসার শাহাদাত হোসেন রাজিব। ম্যাঞ্চেস্টার টেস্টেও ১০৮ রানের প্রত্যয়ী ইনিংস খেলেছিলেন তামিম। ওই সফরে ব্রিস্টলে স্বাগতিকদের ৫ রানে হারিয়েছিল টাইগাররা। দুই দেশ সব মিলিয়ে চার সিরিজে টেস্ট খেলেছে ৮টি। সবগুলোতেই হেরেছে বাংলাদেশ। ১৬ ওয়ানডের তিনটিতে জিতেছে বাংলাদেশ এবং দুটি আবার বিশ্বকাপ ক্রিকেটে। একটি ইংল্যান্ডের মাটিতে।

জঙ্গি হামলার পর ইংল্যান্ড সিরিজের ভবিষ্যত নিয়ে কেউই আলাদা করে ভাবতে চাইছে না। বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় মাশরাফিদের বিপক্ষে হেলসদের লড়াই দেখতে। এরই মধ্যে পূর্ণাঙ্গ সিরিজের সূচি চূড়ান্ত হয়েছে। ৭ ও ৯ অক্টোবর মিরপুরে প্রথম দুই ওয়ানডে এবং ১২ অক্টোবর তৃতীয় ওয়ানডে খেলবে চট্টগ্রামে। ২০-২৪ অক্টোবর প্রথম টেস্ট চট্টগ্রামে এবং ২৮ অক্টোবর-১ নভেম্বর দ্বিতীয় টেস্ট মিরপুরে। সব শংকা দূর করে খেলতে আসুক ইংল্যান্ড। জয় হউক ক্রিকেটের।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর