বৃহস্পতিবার, ১৪ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মিরপুর স্টেডিয়াম

মেজবাহ্-উল-হক

নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মিরপুর স্টেডিয়াম

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সশস্ত্র পাহারা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

দুপুর দেড়টার দিকে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের দুই নম্বর গেট দিয়ে গাড়ি নিয়ে ঢুকছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নিরাপত্তা-কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী! গাড়ি থামিয়ে দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে চেক করতে শুরু করে দিলেন স্টেডিয়ামের গেটে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা। কেউ মিরর মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে চেক করছেন, কেউ-বা মেটার ডিটেক্টর দিয়ে বিস্ফোরক কোনো দ্রব্য আছে কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছেন। কেউ কেউ আবার শর্টগান তাক করে ধরে রেখেছেন।

ক্রিকেট বোর্ডে এতো বেশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে যে গাড়ির যাত্রী কে তা দেখারও প্রয়োজন বোধ করছেন না নিরাপত্তা-কর্মীরা। তারা নিরলসভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। ম্যাচের দিন ছাড়া শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে এর আগে কখনো এতো বেশি নিরাপত্তা জোরদার করতে দেখা যায়নি।

সকালে জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাকেও স্টেডিয়ামে ঢোকার সময় কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনি পার হতে হয়েছে। গতকাল দেখা গেল বিসিবির এক কর্মকর্তার গাড়ি থামিয়েও কয়েক মিনিট ধরে চেক করছেন নিরাপত্তা-কর্মীরা। ক্রিকেটারদের ব্যাগ তন্ন তন্ন করে খুঁজছেন। মিডিয়াকর্মী ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও চেক করে স্টেডিয়ামে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। সাধারণ মানুষের তো প্রবেশের অনুমতিই নেই।

গত ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার পর পাল্টে গেছে নিরাপত্তার চিত্র। স্টেডিয়ামের চারপাশে অন্তত ৬০টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা রয়েছে। কে কখন স্টেডিয়ামে ঢুকছেন সব নজরদারি করা হচ্ছে। এমনকি স্টেডিয়ামের বাইরে রাস্তার সাধারণ মানুষের চলাচলের গতিবিধির ওপরও নজর রাখা হচ্ছে। যদিও মোহাম্মদ আলীর দাবি, নিরাপত্তাকর্মীর সংখ্যা বাড়ানো হয়নি। তার মতে, ‘এখন সতর্কতা বাড়ানো হয়েছে।’ আগামী সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে আসছে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল। সে কথা চিন্তা করেই শেরেবাংলা স্টেডিয়ামকে কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘স্টেডিয়াম এলাকায় যাতে কোনো রকম অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে এজন্যই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এমন ব্যবস্থা আগেও ছিল। কিন্তু মাঝে কিছুদিন অনুসরণ করা হয়নি। আজ (গতকাল) থেকে আবার নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা কঠোর হচ্ছি।’

শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে এখন কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হচ্ছে না। এমনকি ঘরোয়া কোনো টুর্নামেন্টও নেই। অনুশীলনও হচ্ছে না। ব্যক্তিগত উদ্যোগে কোনো ক্রিকেটার আসছেন। এছাড়া কর্মকর্তা ও মিডিয়াকর্মীরা আসছেন। তারপরেও নিরপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের এই কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে স্বাগত জানিয়েছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। নিরাপত্তা সম্পর্কে টাইগার ক্যাপ্টেনের এক কথায় মন্তব্য, ‘এটা ভালো হয়েছে।’

নিরাপত্তা আগেও জোরদার করা হয়েছিল। কিন্তু কখনো ক্রিকেটারদের ব্যাগ তল্লাশি করা হয়নি। কিন্তু গতকাল দেখা যায়, ক্রিকেটার আলাউদ্দীন বাবু মূল ফটক দিয়ে স্টেডিয়ামে ঢোকার সময় তার ব্যাগ তন্ন তন্ন করে খোঁজা হচ্ছে। নিরাপত্তার এমন চিত্র দেখে মোটেও বিরক্ত নন তিনি। আলাউদ্দীন বলেন, ‘সামনে ইংল্যান্ড সিরিজ আছে। সে কারণেই এমন নিরাপত্তা হয়েছে। এতে আমি খুশিই হয়েছি।’

ইংল্যান্ড বাংলাদেশ সফর করার আগে যাতে কোনো ক্রমেই স্টেডিয়াম এলাকায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে এজন্যই সর্বোচ্চ সতর্কতা। এর আগে দুই বিদেশি নাগরিক গুপ্ত হত্যার শিকার হওয়ার পর বাংলাদেশ সফর বাতিল করেছিল অস্ট্রেলিয়া। তাদের দেখাদেখি দক্ষিণ আফ্রিকা মহিলা দলও বাংলাদেশে আসেনি। এরপর বাংলাদেশ সুষ্ঠুভাবে আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপের আয়োজন করে বিশ্ববাসীকে বুঝাতে সমর্থ হয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য নিরাপদ। কিন্তু সাম্প্রতিক জঙ্গি তত্পরতায় আবারও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। তবে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের দাবি, মিরপুর এখন সম্পূর্ণ নিরাপদ। স্টেডিয়ামের আশেপাশে কারও গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হলেই তাকে সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হবে। মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমরা মিরপুর থানাকে একটা চিঠি দিয়েছি। তারাও আমাদেরকে সব রকম সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন। তা ছাড়া যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সব রকম প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে।

সর্বশেষ খবর