শনিবার, ১৬ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

অনুশীলনে নিরাপত্তা পাবেন মাশরাফিরা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

অনুশীলনে নিরাপত্তা পাবেন মাশরাফিরা

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে জাতীয় দলের অনুশীলনে ফুটবলারদের নির্দেশনা দিচ্ছেন কোচ টম সেইন্টফিট —বাংলাদেশ প্রতিদিন

শুক্রবার ছুটির দিন। তার ওপর আষাঢ়ের ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। জীবনযাত্রায় নেই চঞ্চলতা। অলস মুহূর্ত যেন পার করছেন সবাই! বর্ষার এমন ছুটির দিনের হাওয়া লেগেছে মিরপুর স্টেডিয়ামেও। লোকজনের আনাগোনা নেই। এমন পরিস্থিতিতে অলস সময় পার করার কথা প্রহরারত নিরাপত্তাকর্মীদের। কিন্তু তেমনটি করার কোনো উপায় নেই। সঙ্গিন হাতে সটান দাঁড়িয়ে প্রহরা দিচ্ছেন স্টেডিয়াম। প্রস্তুতি যেন যুদ্ধের! আন্তর্জাতিক কোনো ক্রিকেট নেই, তার পরও কেন এমন নিরাপত্তাব্যবস্থা? কারণ একটাই, গুলশানের হলি আর্টিজান ও শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে জঙ্গি হামলার পর নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে সারা দেশে। তারই ধারাবাহিকতায় বাড়ানো হয়েছে মিরপুর স্টেডিয়ামের নিরাপত্তাও। শুধু স্টেডিয়ামের নিরাপত্তাই বাড়ানো হয়নি, ক্রিকেট দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সাত বিদেশি কোচিং স্টাফের নিরাপত্তাব্যবস্থাও বাড়ানো হচ্ছে। তাদের অনুরোধে গানম্যান দেওয়ার কথা ভাবছে বিসিবি। কোচিং স্টাফদের নিরাপত্তায় গানম্যান থাকলেও জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের শুধু অনুশীলনেই নিরাপত্তা দেওয়ার কথা ভাবছে ক্রিকেট বোর্ড।

গত সেপ্টেম্বরে ইতালিয়ান নাগরিক তাভেলা সিজারের হত্যাকাণ্ডের পর বাড়তি নিরাপত্তার জন্য টাইগারদের হেড কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহেকে গানম্যান দেওয়া হয়। গানম্যান পেয়েছিলেন তৎকালীন বোলিং কোচ হিথ স্ট্রিকও। তাদের গাড়িতে গানম্যানরা থাকতেন। ১০ মাসের ব্যবধানে এবার নতুন করে তাদের নিরাপত্তায় গানম্যান দিতে যাচ্ছে বিসিবি। অবশ্য পাঁচ মাস ধরে গানম্যান ব্যবহার করছেন হাতুরাসিংহে। গুলশানের জঙ্গি হামলার পর এখন বিসিবির কোচিং স্টাফদের সাতজন নিরাপত্তার জন্য গানম্যান চেয়ে আবেদন করেছেন বিসিবি বরাবর। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই গানম্যানের বন্দোবস্ত করা হচ্ছে বলেন বিসিবির নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর (অব.) হোসেন ইমাম, ‘হাতুরাসিংহের নিরাপত্তায় আগে থেকেই গানম্যান ব্যবহূত হচ্ছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদেশি কোচিং স্টাফদের জন্য এই নিরাপত্তাব্যবস্থা করা হচ্ছে।’ সে ক্ষেত্রে গানম্যান পাচ্ছেন সহকারী কোচ রুয়ান কালপাগে, ট্রেনার মারিও ভিলাভারায়ন, ফিল্ডিং কোচ রিচার্ড হালসাল। নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত বোলিং কোচকেও দেওয়া হবে এই বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা। এইচপির হেড কোচ সাইমন হেলমেটও পাবেন গানম্যান। যদিও তিনি এখনো ঢাকায় আসেননি। এইচপির অনুশীলন শুরু আগামীকাল। অথচ তিনি থাকছেন না। কবে আসবেন, তাও জানা নেই। তিনি বর্তমানে ক্যারিবীয় প্রিমিয়ার লিগে (সিপিএল) সময় পার করছেন।

নিরাপত্তার জন্য বিদেশি কোচিং স্টাফরা গানম্যান পাচ্ছেন। কিন্তু জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের ওপর বাড়তি নজর দেওয়ার কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই বিসিবির। দায়সারাভাবে শুধু অনুশীলনে নিরাপত্তা দেওয়ার কথা ভাবছে বিসিবি। আগামী ২০ জুলাই শুরু হবে জাতীয় দলের কন্ডিশনিং ক্যাম্প। আগামীকাল শুরু হচ্ছে এইচপির ক্যাম্প। এইচপির ক্যাম্পে বাড়তি কোনো নিরাপত্তা থাকছে না। শুধু মাশরাফিদের কন্ডিশনিং ক্যাম্পেই বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়া হবে বলেন বিসিবির নিরাপত্তা উপদেষ্টা, ‘ক্রিকেটারদের সবাই আলাদা থাকেন। সবাইকে আলাদা নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়। আর তারা নিরাপত্তার জন্য কিছু বলেননিও। তবে আমরা ক্রিকেটারদের অনুশীলনে নিরাপত্তা দেব। মিরপুর থানা থেকে পুলিশের বন্দোবস্ত করব।’

জাতীয় দলের অনুশীলনে এর আগেও পুলিশ ছিল। ভবিষ্যতেও থাকবে। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিসিবির কি উচিত নয় ক্রিকেটারদের নিরাপত্তায় বাড়তি নজর দেওয়া? বলতে খারাপ শোনালেও জঙ্গিদের নেই কোনো দেশপ্রেম। নেই জাতীয়তা। নেই কোনো ক্রীড়াপ্রেম। তাদের কাজ শুধু ধ্বংস করা। ২০০৯ সালে লাহোরে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটারদের ওপর জঙ্গিদের নারকীয় হামলার পর পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেট মুখ থুবড়ে পড়েছে। সেসব মাথায় রেখেই পরিকল্পনা করা উচিত বিসিবির।

সর্বশেষ খবর