শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

নতুনরূপে পেশাদার লিগ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

নতুনরূপে পেশাদার লিগ

পেশাদার লিগ উপলক্ষে গতকাল চট্টগ্রাম এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে মনোমুগ্ধকর এক কনসার্টের আয়োজন করা হয় —বাংলাদেশ প্রতিদিন

আন্তর্জাতিক আসর ছাড়া ফুটবলে বড় ধরনের অনুষ্ঠান খুব কমই হয়েছে। ২০০৭ থেকে শুরু হওয়া বাংলাদেশে পেশাদার লিগ কোনো আসরই জাঁকজমক হয়নি। বলা যায় করার জন্য করা। একেক করে আট আসর হয়ে গেছে তাও লিগ জমজমাট হচ্ছে না। কোনোভাবেই লিগ জমছে না। পৃথিবীর সবচেয়ে নিম্নমানের পেশাদার লিগটা বাংলাদেশেই হচ্ছে। পেশাদারিত্বে যে গুণাবলী তার ছিটেফোঁটাও বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে না। কিছু ক্লাব ছাড়া লিগের শর্তও মেটাচ্ছে না। পেশাদার লিগ অথচ বকেয়া পেতে কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে পেশাদার লিগ শুরুর পর গ্যালারি প্রায় দর্শক শূন্য হয়ে গেছে। বড় বা হাইভোল্টেজ ম্যাচগুলোতেও দর্শকদের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। ফুটবল উন্নয়নের লক্ষ্যে ফিফা ও এএফসির গাইড লাইন অনুযায়ী বাংলাদেশে পেশাদার লিগ শুরু হয়। কিন্তু ভালোর চেয়ে মন্দটাইতো বেশি হচ্ছে। তাহলে বাংলাদেশে পেশাদার লিগ করে লাভ কি? বরং আগের মতো লিগ হোক দর্শকরা যা দেখে খেলোয়াড়দের বাহবা দেবে।

দর্শকদের কথা বাদই দিলাম, বেশ কজন সাবেক ফুটবলারও চান না বাংলাদেশে পেশাদার লিগ হোক। কিন্তু চাইলেতো হবে না এখানে ফিফা বা এএফসির ব্যাপারটি জড়িত। যাক আশার কথা নবম আসরে এসে পেশাদার লিগে নতুনত্ব আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের ব্যবস্থাপনায় লিগ হয়ে আসছিল। ২০০৭-০৮ মৌসুমে লিগ শুরুর পর তৎকালীন সভাপতি এসএ সুলতান দৃঢ়ভাবে বলেছিলেন, শুরুতে না হলেও পরবর্তীতে পেশাদার লিগের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে উঠবে। কিছুই হয়নি। সালাউদ্দিনের মতো ফুটবল ব্যক্তিত্ব দীর্ঘদিন দায়িত্বে থাকলেও লিগের কোনো পরিবর্তন আনতে পারেননি। প্রতিবার লিগ হচ্ছে এটা নিয়েই কৃতিত্ব নিচ্ছেন। এক্ষেত্রে বাফুফেকে ব্যর্থ বললেও ভুল হবে না। দেশের প্রধান লিগ অথচ কি হ-য-ব-র-ল অবস্থা।

এবারে ব্যতিক্রম আসতে পারে। লিগের স্বত্ব কিনে নিয়েছে সাইফ পাওয়ার টেক। পাঁচ বছরে প্রতিষ্ঠানটি প্রতি মৌসুমে বাফুফেকে ৪ কোটি টাকা করে দেবে। স্বত্ব বিক্রি করলেও লিগের দায় দায়িত্ব একেবার বাফুফের হাত ছাড়া হয়ে যাবে না। তবে ঝিমিয়ে পড়া লিগকে জাগিয়ে তুলতে মূল কাজটি করবে সাইফ পাওয়ার টেক। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার রুহুল আমিনকে সাহসীই বলতে হয়। যেখানে ফুটবল নিঃশেষ হতে চলেছে, সেখানে তিনি জাগিয়ে তোলার চ্যালেঞ্জ নিলেন কীভাবে? দেশের ক্রীড়াঙ্গনে আলোচিত হয়ে উঠেছেন তরফদার। ফুটবলের চাকা সচল করতে কি চেষ্টা না করছেন তিনি। তিনি চান পেশাদার লিগের মাধ্যমে ফুটবলকে জাগিয়ে তুলতে। এজন্য নতুন কিছু পথ বেছে নিয়েছেন। বর্ণাঢ্যভাবে লোগো উন্মোচন। গতকাল চট্টগ্রাম এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে মনোমুগ্ধকর কনসার্ট হয়েছে। প্রথমে ছয় ভেন্যুতে লিগ আয়োজনের সিদ্ধান্ত হলেও এখন হবে চার ভেন্যুতে। তরফদার আশা করছেন ঘরোয়া ফুটবলে আবার দর্শক ফিরে আসবে। দর্শকরা চায় নতুনত্ব ও আধুনিকতা, তা যদি তুলে ধরা যায় তাহলে ফুটবলে কেন দর্শক আসবে না। কনসার্টের মাধ্যমে লিগের উদ্বোধন হয়েছে। মাঠের লড়াই ২৪ জুলাই থেকে। এই প্রথম ঢাকার বাইরে লিগের যাত্রা শুরু হচ্ছে। চট্টগ্রামে এবার পেশাদার লিগের পর্দা উঠবে। ঢাকায় দর্শক হয় না, কিন্তু তিন ভেন্যুতে দর্শক মিলবে আশা করা যায়।

হুট করে পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। এতদিন যা হয়ে এসেছে তা দূর করতে একটু সময় নেবেই। অসম্ভবকে সম্ভবে রূপান্তরিত করা যায় তার প্রমাণ দিয়েছেন তরফদার। মাত্র কয়েক মাসের ঘোষণা দিয়ে চট্টগ্রামে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ফুটবলের আয়োজন করে দেশবাসীকে তাক লাগিয়ে দেন। পেশাদার লিগে পরিবর্তন বা সৌন্দর্যটা জরুরি হয়ে পড়েছে। পাঁচ বছরের স্বত্ব নিয়ে সাইফ পাওয়ার টেক কি করে সেটাই দেখার বিষয়। সত্যি কথা বলতে কি মানোন্নয়নের যতই চেষ্টা করা হোক না কেন, পেশাদার লিগ জমজমাট  না হলে কিছুই হবে না। নতুনরূপে না হলেও পরিবর্তন করেইতো পেশাদার লিগ মাঠে গড়াচ্ছে। দেখা যাক দর্শকরা তাতে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে পারেন কিনা?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর