শুক্রবার, ২২ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

মুস্তাফিজকে পেয়ে সাসেক্সের উচ্ছ্বাস

মেজবাহ্-উল-হক

মুস্তাফিজকে পেয়ে সাসেক্সের উচ্ছ্বাস

‘দ্য ফিজ হ্যাজ অ্যারাইভড। মুস্তাফিজুর রহমান এখন হোভে।’ —ইংলিশ কাউন্টি ক্লাব সাসেক্সের ফ্যানপেজে লেখা স্ট্যাটাস এটি। কাটার মাস্টার সাসেক্সের মাঠ হোভে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে তার হাতে জার্সি তুলে দিয়ে ছবি তুলে ফ্যানপেজে আপলোড করা হয়। মুস্তাফিজকে পেয়ে ভীষণ উচ্ছ্বসিত সাসেক্স শার্কস। 

আরেকটি স্ট্যাটাসে দেওয়া হয়েছে লকারসহ মুস্তাফিজের ছবি! কাটার মাস্টারকে পাওয়ার পরও যেন দলটির কর্মকর্তারা বিশ্বাসই করতে পারছেন না! সে কারণেই তাদের এতো উচ্ছ্বাস।

মুস্তাফিজকে পেয়ে যে শুধু ক্লাব কর্তৃপক্ষই উচ্ছ্বসিত —তা তো নয়! সবচেয়ে বেশি উচ্ছ্বাস দেখা গেছে কাউন্টি দলটির সমর্থকদের মধ্যে। ফ্যানপেজে মুস্তাফিজের ছবি আপলোড হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝড়ের বেগে পড়তে থাকে লাইক-কমেন্ট। ইংলিশ দর্শক জাস্টিন স্কট তার কমেন্টে লিখেলেন, ‘দেরিতে হলেও ফিজ এসেছেন। এটা দারুণ খবর। শেষ তিনটি টি-২০তে আমরা তাকে দেখতে পাব, এটা ভাবতেই ভালো লাগছে।’

আরেক সাসেক্স সমর্থক থান্ডার উইন্ড লিখেছেন, ‘ফিজকে প্রতি বলেই উইকেট নিতে হবে এমন নয়। আমরা তার বোলিং বৈচিত্র্য দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে আছি। বোলিং জাদু দেখার জন্য অপেক্ষা করছি।’

টি-২০ ব্লাস্টে সাসেক্সের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। নকআউট পর্বে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তাই দলটির সমর্থকদের অনেকে শেষ তিন ম্যাচ দেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু মুস্তাফিজ যোগ দেওয়ায় সবার মধ্যেই উচ্ছ্বাস। সমর্থক গ্যারি উরসিন স্মিত সাসেক্সের ইনস্টাগ্রামের ফ্যানপেজে কমেন্টে লিখেছেন, ‘সাসেক্সের শেষ তিন ম্যাচেই জেতা প্রয়োজন। তবে এখন আমরা আশা করছি রয়্যাল লন্ডন ওয়ানডে নিয়ে। মুস্তাফিজের আসাটা অনেক দেরি হয়ে গেল। একটা ডুবন্ত জাহাজকে উদ্ধার করা প্রায় অসম্ভব। তবে আমরা মুস্তাফিজের বোলিং দেখার জন্য প্রতীক্ষা করছি।’ জেমি হুইলার লিখেছেন, ‘সাসেক্সের সব আশাই শেষ। এখন ফিজের জন্য শেষের ম্যাচগুলোর আকর্ষণ বেড়ে গেল।’ রুপার্ট ক্রসবি লিখেছেন, ‘এই আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আশা করছি, ফিজের আগমনে সাসেক্সের ভাগ্যও বদলে যাবে।’

দীর্ঘ ১৩ ঘণ্টা বিমান জার্নির পর লন্ডনের হিথ্র বিমানবন্দরে পৌঁছেন মুস্তাফিজ। কিন্তু তার মধ্যে কোনো ক্লান্তির ছাপ ছিল না। ছবি হাস্যোজ্জ্বল বাংলাদেশের বোলিং সেনসেশন।

কাটার মাস্টার বিমানবন্দরে পৌঁছার আগেই সেখানে অপেক্ষা করছিলেন সাসেক্সের একটি প্রতিনিধি দল। তারা মুস্তাফিজকে অভিনন্দন জানিয়ে সোজা নিয়ে যান ক্লাবে। হাস্যোজ্জ্বল মুস্তাফিজ সবার সঙ্গে পরিচিত হন।

মুস্তাফিজের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে টি-২০ ও ওয়ানডের জার্সি—একটি কালো, আরেকটি হলুদ। ৯০ নম্বর জার্সি পরে খেলতে নামবেন সাতক্ষীরার সুপারম্যান। বাংলাদেশ দলেও মুস্তাফিজ ৯০ নম্বর জার্সি পরেই খেলেন। ভারতীয় প্রিমিয়ার লিগেও সান রাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে ৯০ নম্বর জার্সিতেই মাত করে দিয়েছেন।

আইপিএলে হায়দরাবাদ ছিল খুবই সাদামাটা এক দল। কিন্তু মুস্তাফিজের ক্যারিশমায় সব কিছু কেমন যেন বদলে যায়। শেষ পর্যন্ত শিরোপাই জিতে যায় সান রাইজার্স। একটি খেলোয়াড়ের জাদুকরি পারফরম্যান্সে অনেক সময়ই যে সবকিছু বদলে যায় তার বড় প্রমাণ মুস্তাফিজ।

বাংলাদেশের তারকা পেসারের ‘কাটার’ ‘স্লোয়ার’ ‘সুইং’ এখন শুধু ব্যাটসম্যানদের কাছেই বিস্ময়কর নয়, ভক্তরাও দারুণ রোমাঞ্চিত! সে কারণেই হয়তো সাসেক্সের জয়-পরাজয়ের চেয়েও অনেকের কাছে মুস্তাফিজের বোলিং দেখতে পাওয়াই অনেক বড় বিষয়! এডিন স্মিথ নামে এক সমর্থক লিখেছেন, ‘সাসেক্সকে আমি খুবই ভালোবাসি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে টি-২০তে আশা নেই বললেই চলে। তাই শেষ তিন ম্যাচে সাসেক্স যদি হেরেও যায় খুব বেশি খারাপ লাগবে না। কিন্তু সত্যি কথা হচ্ছে, মুস্তাফিজের মতো বোলারকে কাছ থেকে দেখতে পাওয়াটা সত্যিই দারুণ কিছু।’

সাসেক্সের ফেসবুক ফ্যানপেজে দেখা যায়, তাদের অন্যান্য স্ট্যাটাসে যেখানে মাত্র কয়েকশ করে লাইক পড়ছে। সেখানে মুস্তাফিজের স্ট্যাটাস দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাজার হাজার লাইক পড়ে যাচ্ছে। মুস্তাফিজ কাউন্টিতে খেলতে যাওয়ায় প্রবাসী বাঙালিরাও উচ্ছ্বাসের জোয়ারে ভাসছেন। ইমরান আহমেদ নামে ইংল্যান্ড প্রবাসী এক বাংলাদেশি লিখেছেন, ‘আমার মনে হয়েছিল, মুস্তাফিজ হয়তো ইংল্যান্ডে আর আসবেই না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চলে আসায় কি যে ভালো লাগছে। কাটার মাস্টারকে খুব কাছে থেকে দেখতে পাবো ভাবতেই দারুণ লাগছে।’ সামাদ ওয়াহিদ নামে আরেকজন লিখেলেন, ‘গুডলাক মুস্তাফিজ। সান রাইজার্সের মতো তুমি সাসেক্সও মাতিয়ে দাও। তুমি অবশ্যই সফল হবে।’

তবে অধিকাংশ কমেন্টের ভাষা অনেকটা এমন, ‘সাসেক্সে আসার জন্য অভিনন্দন মুস্তাফিজ। লাভ ইউ দ্য ফিজ।’

সর্বশেষ খবর