মঙ্গলবার, ২৬ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

ক্রীড়া উন্নয়নে ‘ক্রীড়া বিজ্ঞান’

রাশেদুর রহমান

ক্রীড়া উন্নয়নে ‘ক্রীড়া বিজ্ঞান’

একজন ক্রীড়াবিদের শারীরিক, মানসিক ও কৌশলগত দিকগুলোর উন্নয়ন করতে হলে এর বিজ্ঞানভিত্তিক চর্চার বিকল্প নেই। একে বলে ক্রীড়া বিজ্ঞান। একজন ক্রীড়াবিদের শারীরিক সক্ষমতাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে যেমন শতভাগ ফিটনেসের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে ঠিক তেমনি মানসিক ও কৌশলগত দিক থেকেও শতভাগ নিশ্চয়তার প্রয়োজন। এর যে কোনো একটির অভাব থাকলে একজন ক্রীড়াবিদ ভিন্ন পরিবেশে গিয়ে ব্যর্থ হতে পারেন। যেমন, চেনা পরিবেশে একজন ক্রীড়াবিদ হয়তো দারুণ করছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে গিয়ে তিনিই ব্যর্থ হচ্ছেন। এসব বিষয়ের মধ্যে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে একজন ক্রীড়াবিদকে সফল হতে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়াই হচ্ছে ক্রীড়া বিজ্ঞানের কাজ।

২০০১ সাল থেকে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগ ক্রীড়াবিদদের শক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রকে সমন্বিত করার জ্ঞান বিতরণ করছে। ক্রীড়া বিজ্ঞান স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা কোর্সের অধীনে বিকেএসপিতে এ পর্যন্ত ১৯১ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন। এদের প্রায় সবাই ক্রীড়া উন্নয়নে ‘ক্রীড়া বিজ্ঞানে’র কার্যকারিতা প্রমাণ করছেন কর্মক্ষেত্রে। ক্রীড়া বিজ্ঞান আসলে কী ধরনের ভূমিকা পালন করে? গতকাল বিকেএসপির ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক নুসরাৎ শারমীন ক্রীড়া বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন এ প্রতিবেদকের কাছে। তিনি বলেন, ‘ক্রীড়া বিজ্ঞানের মাধ্যমে একজন ক্রীড়াবিদকে খুব সহজেই তার সর্বোচ্চ পারফরম্যান্স লেভেলে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।’ এজন্য অবশ্য কোচ এবং ক্রীড়া বিজ্ঞানীদের মধ্যে বিষয়গুলো আলোচনা হতে পারে বলে দাবি করেন তিনি। এক্সারসাইজ ফিজিওলজি, স্পোর্টস সাইকোলজি, স্পোর্টস বায়োমেকানিকস এবং সায়েন্স অব স্পোর্টস ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে একজন ক্রীড়াবিদের মানসিক ও শারীরিক দক্ষতাকে ‘পারফেক্ট’ লেভেলে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। যেমন, কম শক্তি খরচ করেও কেবলমাত্র শারীরিক গঠনের খুঁটিনাটি জানা থাকলে অনেকক্ষেত্রে বিজয়ী হওয়া সম্ভব। ফুটবলার, ক্রিকেটার কিংবা হকি প্লেয়ার সবার জন্যই এটা সমানভাবে প্রযোজ্য। দলগত কিংবা ব্যক্তিগত ইভেন্টগুলোতেও ক্রীড়া বিজ্ঞানের ভূমিকা অনেক। ‘ক্রীড়া বিজ্ঞান’ নিয়ে বাংলাদেশে তেমন একটা আগ্রহ ছিল না অতীতে। তবে বর্তমানে এর প্রসার ঘটেছে। নুসরাৎ শারমীনের দাবি, কোচদের সঙ্গে ক্রীড়া বিজ্ঞানীদের নিয়মিত আলোচনার ফলে অনেক ক্ষেত্রে দ্রুত উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে। ক্রীড়াবিদকে খুব সহজেই উচ্চতর পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। একজন ক্রীড়াবিদের শারীরিক সক্ষমতার পরিমাপ করা সম্ভব হচ্ছে এ বিজ্ঞানের মাধ্যমে। এর ফলে অতিরিক্ত চাপে পড়তে হচ্ছে না ক্রীড়াবিদকে। তিনি ব্যক্তিগত সেরাটা উপহার দিতে পারছেন। বিকেএসপির ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগ বাংলাদেশের ক্রীড়া উন্নয়নে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে বলে জানান নুসরাৎ শারমীন।

এদিকে গতকাল বিকেএসপির ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের ১৪তম ব্যাচের স্ন্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ‘ক্রীড়া বিজ্ঞান’ নামক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সামছুর রহমান। এসময় তিনি দাবি করেন, ‘বাংলাদেশের ক্রীড়া বিজ্ঞান জগতে ‘ক্রীড়া বিজ্ঞান’ গ্রন্থটি এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।’ প্রথমবারের মতো ক্রীড়া বিজ্ঞান নিয়ে বাংলায় কোনো বই প্রকাশ করল বিকেএসপি। এ বইতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত ‘ক্রীড়া বিজ্ঞান’ কোর্সের সিলেবাস ভিত্তিক বিষয়গুলো স্থান পেয়েছে। এতদিন ইংরেজি বইয়ের ধারস্থ হতেন শিক্ষার্থীরা। এবার বাংলা বই থেকেই প্রয়োজনীয় জ্ঞান আহরণ করা যাবে।

সর্বশেষ খবর