সোমবার, ১ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

রেফারিং নিয়ে বিতর্কের ঝড়

রেফারিং নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। এখন এর দায়-দায়িত্ব কি শুধু রেফারিদের

ক্রীড়া প্রতিবেদক

রেফারিং নিয়ে বিতর্কের ঝড়

ক্রিকেটে আম্পায়ারিং নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। হকিতে নিরপেক্ষ খেলা পরিচালনার জন্য বিদেশি আম্পায়ার আনা হয়েছিল। ফুটবলেও রেফারিং নিয়ে বিতর্কের ঝড় বয়ে যাচ্ছে। লিগ কমিটির চেয়ারম্যান ও বাফুফে সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাম মুর্শেদী বলেন, রেফারিরা কিছু ভুল করছেন এটা আমিও স্বীকার করছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কিছু ক্লাব থেকে মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। লিখিতভাবে আসলে বিষয়টি নিয়ে আমরা বসতে পারতাম। অন্য কেউ নন, রেফারি নিয়ে স্বয়ং অভিযোগ তুলেছেন ফেডারেশনের এক সহ-সভাপতি। ফেডারেশন কাপে তার দল এগিয়ে থেকেও ১-২ গোলে হেরে গেছে। প্রতিপক্ষ দল যে দুটি গোল করেছে তা তিনি অবৈধ দাবি করেছেন। টিভি সাক্ষাৎকারে তার দল রেফারির পক্ষপাতিত্বের শিকার হয়েছে এ কথা জোর গলায় বলেছেন। একজন সহ-সভাপতি যদি এমন অভিযোগ তোলেন তাহলে দেশের রেফারির মান কোন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে তা নিয়ে আর কি বলার থাকতে পারে।

জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার ছাইদ হাছান কানন বলেন, ‘দেশে আগের সেই মান সম্পন্ন রেফারি নেই। মুনীর হোসেন, দলিল খান, মো. আজিজ, আর আলম বা রফিকুল ইসলামরা যে সাহসিকতার সঙ্গে খেলা পরিচালনা করেছেন তা এখন দেখা যায় না। অথচ দেশে ফুটবলে যে রুগ্নদশা সেখানে মানসম্পন্ন রেফারি থাকাটা জরুরি ছিল। ঘরোয়া আসরে ভুল রেফারিংয়ের শিকার হচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক ফুটবলে খেলোয়াড়রা কোনটা ফাউল বা অফসাইড তা বুঝে উঠতে পারছে না। কানন বলেন, ফুটবলারের যেমন প্রশিক্ষণের দরকার রয়েছে। দেশে রেফারিদের উপযুক্ত ট্রেনিংয়ের প্রয়োজন রয়েছে। খেলায় হারজিত থাকবেই। কিন্তু দুর্বল রেফারিংয়ে একটা দল পয়েন্ট হারাবে তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

সাবেক ফিফা ব্যাজধারী রেফারি আর আলম বলেন, ‘রেফারিং নিয়ে বিতর্ক নতুন কিছু নয়। অতীতেও হয়েছে। বিদেশেও ভুল হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে ভুলের মাত্রা অতিরিক্ত। যা দেখে আমিও হতবাক। এ জন্য অবশ্যই আমি ফেডারেশনকে দায়ী করব। দেখেন পেশাদার লিগ দেশের ১ নম্বর ফুটবলের আসর। বাফুফের কি উচিত ছিল না যারা ম্যাচ পরিচালনা করবে তাদের সঙ্গে বসা। গুরুত্বপূর্ণ লিগে ভুলত্রুটি যেন না হয় ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা। এ ব্যাপারে সাবেক অভিজ্ঞ রেফারিদের সহযোগিতা নেওয়া যেত। এখন আমাদের যদি না ডাকে জোর করে দায়িত্বতো নিতে পারি না। এবার পেশাদার লিগে রেফারি নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। এখন এর দায়-দায়িত্ব কি শুধু রেফারিদের। বাফুফে কি এখানে নীরব দর্শক হয়ে বসে থাকবে?

আগের আট আসরে যায় ঘটুক এবার পেশাদার লিগ হবে জৌলুসময় এই ঘোষণা বাফুফের। প্রথমবারের মতো লিগ চার ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে। এক্ষেত্রে বাফুফে ধন্যবাদ পেতেই পারে। কিন্তু লিগ শুরু হয়েছে যে কলঙ্ক দিয়ে তা কি বাফুফে খেয়াল করেছে। চট্টগ্রাম এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে লিগের নবম আসরে উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হয় শেখ জামাল ধানমন্ডি ও আরামবাগ। সে ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হয়। দ্বিতীয় ম্যাচে শেখ রাসেল লড়ে উত্তর বারিধারার বিপক্ষে। তারকানির্ভর দল গড়েছে শেখ রাসেল। তাই ফুটবলপ্রেমীদের ধারণা ছিল ম্যাচ সহজভাবেই জিতবে শেখ রাসেল। বাস্তবে ফল হয় উল্টো। অপ্রত্যাশীতভাবে ম্যাচে শক্তিশালী শেখ রাসেল ০-১ গোলে হেরে গেছে। বড় দলকে হারানোয় বারিধারা প্রশংসা পেতেই পারে। কিন্তু এ ম্যাচকে ঘিরে ক্রীড়াঙ্গনে বিতর্কের ঝড় বয়ে যাচ্ছে। পেনাল্টি গোলে জয় পেয়েছে উত্তর বারিধারা।

ম্যাচে পেনাল্টি হতেই পারে। কিন্তু সেদিন যে পেনাল্টি ছিল তা কি জেনুইন ছিল। রেফারি যেন সুযোগ খুঁজছিলেন কিভাবে শেখ রাসেলকে হারানো যায়। আর তা বাস্তবায়ন করলেন অবৈধ পেনাল্টি দিয়ে। মজার ব্যাপার ম্যাচে শেখ রাসেল পরিষ্কার পেনাল্টি পেয়েছিল। রেফারি তা এড়িয়ে গেছেন। এতে কি বোঝা যায়? এ নিয়ে সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘পেনাল্টি নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলবেন না। লিগ কমিটির দায়িত্বে আছি এ ব্যাপারে আমার মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে জরুরিভিত্তিতে কমিটি রেফারিদের সঙ্গে বসবে।

রহমতগঞ্জের বিপক্ষেও একতরফা প্রাধান্য বিস্তার করে শেখ রাসেল ০-২ গোলে হার মানে। লক্ষ্য করা গেছে শেখ রাসেল আক্রমণে গেলে রেফারি অযথা অফসাইডের পতাকা উড়িয়েছেন। তাহলে কি ধরে নেব পরিকল্পিতভাবেই শেখ রাসেলের পয়েন্ট নষ্ট করা হচ্ছে। কোনো বিশেষ মহল কি চায় না শেখ রাসেল চ্যাম্পিয়ন হোক। কিসের বিনিময়ে রেফারিরা এই এক পক্ষ বেছে নিয়েছেন। প্রসঙ্গ শুধু শেখ রাসেল নয়, দেশসেরা লিগে এমন জঘন্য রেফারিং হচ্ছে কেন? ফুটবলের দুর্দিনের মধ্যেও শেখ রাসেল ছাড়াও আরও কটি দল অঢেল অর্থ খরচ করে দল গড়ছে। যাতে জনপ্রিয় খেলাটা টিকে থাকে। এখন যদি কোনো দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয় তাহলে দেশে ফুটবল খেলে আর লাভ কি? জানি না বাফুফে এ ব্যাপারে কি ভাবছে। তবে এ অবস্থা থাকলে দেশের ফুটবল ধ্বংসের মুখে এগিয়ে যাবে। এ নিয়ে কারও সংশয় নেই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর