শুক্রবার, ৫ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

স্বপ্ন পূরণের পথে ব্রাজিল

পর্দা উঠছে অলিম্পিকের

ক্রীড়া প্রতিবেদক

স্বপ্ন পূরণের পথে ব্রাজিল

প্রস্তুত রিও ডি জেনিরো। প্রস্তুত ব্রাজিল স্বপ্ন পূরণে। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়ে যাবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রীড়াযজ্ঞ অলিম্পিক গেমস। মারকানা স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মহড়ায় রাতে রিও ডি জেনিরো আলোকিত আতশবাজির ঝলকানিতে —এএফপি

বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম রাষ্ট্র ব্রাজিল। গহিন অরণ্য আমাজানের পাড় ঘেঁষা ব্রাজিল ল্যাটিন আমেরিকার একমাত্র পর্তুগিজভাষী দেশ। ল্যাটিন আমেরিকার সবচেয়ে বড় দেশটির আলাদা পরিচয় ফুটবলের জন্য। পরিচয় ফুটবলার পেলের জন্য। কিংবদন্তির ফুটবলার পেলের দেশ ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে এবার বসছে ক্রীড়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় আসর অলিম্পিক ‘দ্য গ্রেটেষ্ট শো অন আর্থ’। অলিম্পিকের ৩১ তম আসরটিকে বরণ করে নিতে গোটা দুনিয়া অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। গোটা বিশ্বকে মুগ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে আছে রিওর হাজারের ওপর কলাকুশলী। যাদের অসাধারণ উপস্থাপনা দেখতে মাঠে উপস্থিত থাকবেন প্রায় ৭৮ হাজার দর্শক এবং টিভি সেটের সামনে বসে থাকবে ৩ বিলিয়ন দর্শক। ‘ক্রীড়াযজ্ঞ’ অলিম্পিকে অংশ নিচ্ছে বিশ্বের ২০৬টি দেশ। সূচি অনুযায়ী আজ পর্দা উঠবে রিও অলিম্পিকের। কিন্তু ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশের জনগণ জমকালো, মনোরম ও মনোজ্ঞ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি দেখবেন আগামীকাল সকাল ৬টায়। 

ব্রাজিল যেমন ক্রীড়া বিশ্বের কাছে পরিচিত পেলের জন্য, পরিচিত মারকানা স্টেডিয়ামের জন্য। তেমনি সৌন্দর্য পিয়াসীদের কাছে পরিচিত কোপাকাবানা সমুদ্র সৈকতের জন্য। অলিম্পিককে সামনে রেখে বিশ্বখ্যাত কোপাকাবানা সমুদ্র সৈকত সেজেছে বর্ণিল সাজে। ব্রাজিলে এখন সামার। পর্যটকের ভিড়। কিন্তু সবকিছুকে পেছনে ফেলে কোপাকাবানা এখন হেভি মেটালে উন্মাতাল। অলিম্পিকের সুরে গাইছে। পর্যটকরা  সবাই ব্যস্ত অলিম্পিকের লোগো, মাসকাটের সঙ্গে ছবি তুলে স্মরণীয় করে রাখতে। রিও অলিম্পিক কমিটিও সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে দেশের মাটিতে প্রথম অলিম্পিক আসরটিকে স্মরণীয় করে রাখতে।

পৃথিবীর ২০৬ দেশের ১১ হাজারের উপর অ্যাথলেট ৩০৬টি সোনার জন্য লড়বে ২২ আগস্ট পর্যন্ত। গেমসে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশও। বাংলাদেশ অলিম্পিকে নিয়মিত অংশ নিচ্ছে ১৯৮৪ সালের লস এঞ্জেলস অলিম্পিক থেকে। এবারও অংশ নিচ্ছে। মার্চ পাস্টে বাংলাদেশের পতাকা বহন করবেন বিশ্ববিখ্যাত গলফার সিদ্দিকুর রহমান। এছাড়াও বাংলাদেশের অ্যাথলেটরা অংশ নিবেন ১০ মিটার এয়ার রাইফেল, আরচারি ও অ্যাথলেটিক্সে। অলিম্পিককে স্মরণীয় করে রাখতে আয়োজক কমিটি মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানে রেখেছে নানান বিষয়। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে ৪০০ বছর আগে পর্তুগিজদের ব্রাজিল দখল। লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শোয়ের মাধ্যমে দেখানো হবে পর্তুগিজরা কীভাবে দখল করেছে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম দেশটি। জমকালো অনুষ্ঠানটি দেখতে স্টেডিয়ামে উপস্থিত থাকবেন ৪৫ দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হবে ব্রাজিলের ঐতিহ্যবাহী বৈচিত্র্যপূর্ণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ১২০০ অ্যাথলেট দেশগুলোর জাতীয় পতাকা হাতে প্যারেড করবেন। ব্রাজিলের এক ডজন ‘সাম্বা স্কুল’-এর ১২০০ নৃত্যশিল্পী বিশেষ পোশাক পরে সাম্বার তালে তালে নাচবেন এবং নাচাবেন দর্শকদের। সুরের মায়াজালে দর্শকদের মুগ্ধ করবেন-গিলবার্টো গিল, কায়েটানো ভেলোসো ও জিসেন বান্ডেচেল। এরপর মডেল তারকারা দেখাবেন মনোরম নৃত্য, যাতে থাকবে আধুনিকতার ছোঁয়া। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় মশাল জ্বালাবেন কে? এখনো জানায়নি অলিম্পিক কমিটি। তবে রিও অলিম্পিক গেমস জুড়ে গুঞ্জন লিজেন্ড ফুটবলার পেলে জ্বালাবেন অলিম্পিক মশাল। যেমন আটলান্টা অলিম্পিকে মশাল জ্বালিয়েছিলেন সর্বকালের সেরা মুষ্ঠিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলি। অনুষ্ঠানের সবার শেষে দর্শকদের চোখকে আবিষ্ট করতে থাকবে ১৫ মিনিটের আতশবাজির বর্ণিল কারসাজি। ৩ ঘণ্টা ৩৭ মিনিটের অনুষ্ঠানের জন্য রিও অলিম্পিক কমিটি খরচ করছে ৩৬ মিলিয়ন ইউরো। তাদের টার্গেট ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকের আয়োজনকে ছাপিয়ে যেতে। অবশ্য ২০০৮ সালের বেজিং অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে খরচ হয়েছিল ৮২ মিলিয়ন ইউরো। লন্ডন অলিম্পিকে খরচ হয়েছিল ৩৪-৩৬ মিলিয়ন ইউরো, ২০০৪ সালে এথেন্সে খরচ হয়েছিল ৪০ মিলিয়ন ইউরো। রিও অলিম্পিক কমিটি চাইছে স্মরণীয় করে রাখতে গেমস। কিন্তু মাঠে গড়ানোর আগেই শরীরে কালো আঁচর এঁকে দিয়েছে রিও অলিম্পিক। ড্রাগের জন্য রাশিয়ান অ্যাথলেটিক্স দলকে বহিষ্কার করেছে আইওসি। রিও অলিম্পিক কমিটি চাইছে এই কালো অধ্যায়কে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যেতে।  সাড়ে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় নিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখা যাবে স্টার স্পোর্টস ১, ২, ৩, ৪  এবং এইচডি চ্যানেলে।

সর্বশেষ খবর