বুধবার, ১০ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

সিদ্দিকুরই বাংলাদেশের ভরসা

মেজবাহ্-উল-হক

সিদ্দিকুরই বাংলাদেশের ভরসা

রিওতে অনুশীলনে ব্যস্ত সিদ্দিকুর রহমান

লস অ্যাঞ্জেলস (১৯৮৪) অলিম্পিক থেকে লন্ডন (২০১২) অলিম্পিক —বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদদের জন্য ছিল কেবলই যাওয়া আসার মিশন! ‘ওয়াইল্ড কার্ড’ নিয়ে বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদরা ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ খ্যাত অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করলেও পদক জয়ের বিষয়টি যেন ভাবনাতেও ছিল না। তবে এবার ব্যতিক্রম। পদক জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন গলফার সিদ্দিকুর রহমান।

রিও অলিম্পিকে বাংলাদেশ থেকে যে ৭ জন ক্রীড়াবিদ অংশ নিচ্ছেন তাদের মধ্যে সিদ্দিকুর ছাড়া বাকি ৬ জনই ‘ওয়াইল্ড কার্ড’ নিয়ে সুযোগ পেয়েছেন। ইতিমধ্যে শুটার আবদুল্লাহ হেল বাকি তার ইভেন্ট শেষ করেছেন। ৫০ জনের মধ্যে হয়েছেন ২৫তম। দুই সাতারু মাহফিজুর রহমান সাগর ও সোনিয়া আকতার টুম্পা, দুই স্প্রিন্টার মেজবাহ আহমেদ ও শিরিন আকতার এবং আরচার শ্যামলী রায়কে নিয়েও পদকের আশা নেই বললেই চলে। রিও অলিম্পিকে প্রথমবারের মতো সরাসরি অংশ নেওয়া সিদ্দিকুর রহমানই ভরসার প্রতীক।

মজার বিষয় হচ্ছে, গত এক শতাব্দী অলিম্পিকে গলফ ইভেন্টটি ছিল না। রিও অলিম্পিকে গলফ ইভেন্টটি পুনরায় যোগ হয়েছে দীর্ঘ ১১২ বছর পর। অলিম্পিকে গলফ প্রথমবারের যুক্ত হয়েছিল ১৯০০ সালে, প্যারিস অলিম্পিকে। ২৭ মে ১৮৯৯ সালে অলিম্পিক কমিটির কার্যনির্বাহী সভায় গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে গলফকে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেবার মোট ২০ ইভেন্ট ছিল। গলফের সঙ্গে ছিল ক্রিকেটও। গলফ থেকে প্রথম সোনা জিতেছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চার্লস স্যান্ডস। সিলভার জিতেছেন গ্রেট ব্রিটেনের ওয়াল্টার রাদারফোর্ড। ব্রোঞ্জ পেয়েছিলেন আরেক ইংলিশ গলফার ডেভিড রবার্টসন।

ওই আসরে মহিলা গলফে পদক জয়ী তিন গলফারই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের— মার্গারেট অ্যাবোট (সোনা), পলিন হুইটার (সিলভার) ও ড্যারিয়া প্রাট (ব্রোঞ্জ)। সোনাজয়ী মার্গারেট মার্কিন নাগরিক হলেও তার জন্ম ভারতের কলকাতায়।

১৯০০ সালের পর প্রথমবারের মতো এবার রিও-তে মহিলা গলফ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তবে ১৯০৪ সালে সেন্ট লুইস অলিম্পিকেও পুরুষ গলফ ছিল। সেবার সোনা জিতেছিল কানাডার জর্জ লিয়ন। সিলভার জিতেছেন মার্কিন গলফার স্যান্ডলার ইগার। যৌথভাবে ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বার্ন ম্যাককিনি ও ফ্রান্সিস নিউটন।

১১২ বছর পর অলিম্পিকে গলফ ফেরায় উজ্জীবিত গলফাররা। সেই সঙ্গে এই আসরে প্রথমবারের মতো পদক জয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের। সিদ্দিকুরকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। গলফ ইভেন্ট শুরু হবে বৃহস্পতিবার। স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে সাতটা এবং বাংলাদেশ সময় বিকাল সাড়ে চারটায়। প্রথমে টি-অফ করবেন ব্রাজিলের অ্যাডিলসন দ্য সিলভা, কানাডার গ্রাহাম ডিলায়েট ও দক্ষিণ কোরিয়ার বাইংঘনের গ্রুপটি।

সিদ্দিকুর টি-অফ (শুরু) করবেন বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টা ১৪ মিনিটে। তার গ্রুপে অপর দুই জন হচ্ছেন নেদারল্যান্ডসের জোস্ট লুইটেন, যার বিশ্ব র‌্যাঙ্কিং ৬৫তম। আরেকজন হচ্ছেন পর্তুগালের গলফার রিকার্ড গুভেইরা, বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে ১২৫তম।

বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে সিদ্দিকুরের অবস্থান ৩০৮তম (গত সপ্তাহ পর্যন্ত)। রিও অলিম্পিকে অংশ নেওয়া গলফারদের মধ্যে র‌্যাঙ্কিংয়ে সিদ্দিকুরের নিচে রয়েছে কেবলমাত্র ৬ গলফার। ৫৪ জন গলফার রয়েছেন যাদের র‌্যাঙ্কিং তার উপরে। বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে ১০-র মধ্যে রয়েছেন, এমন ৪জন গলফার খেলছেন অলিম্পিকে— বিউবা ওয়াটন (৫ম, যুক্তরাষ্ট্র), হেনরিক স্টেনসন (৬ষ্ঠ, সুইডেন), রিকি ফোলার (৭ম, যুক্তরাষ্ট্র) ও ড্যানি উইলেট (৯ম, গ্রেট ব্রিটেন)। এছাড়াও বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা ২০-র মধ্যে থাকা জাস্টিন রোজ (১১তম, গ্রেট ব্রিটেন), সার্জিও গার্সিয়া (১২তম, স্পেন), প্যাট্রিক রিড (১৩তম, যুক্তরাষ্ট্র) ও ম্যাট কুচার (১৫তম,যুক্তরাষ্ট্র)।

মহাতারকাদের ভিড়েও সিদ্দিকুর নিয়ে আশা করা যায়, কারণ ইভেন্টটি গলফ বলেই। কেননা এশিয়া ট্যুরে মেরিট অব অর্ডারে শীর্ষে না উঠেও তো দুই দুটি শিরোপা জিতেছেন বাংলাদেশের এই গলফার। কিছু দিন আগে ইউরোপিয়ান ট্যুরের শিরোপাও প্রায় জিতেই গিয়েছিলেন। শেষ তিন শটে খারাপ করার কারণে রানার আপ হয়েছেন। সে আসরেও বিশ্বের সেরা সেরা তারকা গলফার অংশ নিয়েছিলেন। তাই অলিম্পিকে স্বপ্ন দেখতে দোষ কোথায়?

তবে দেশবাসী পদকের স্বপ্ন দেখলেও বাস্তববাদী সিদ্দিকুর মনে করেন মহাতারকাদের সঙ্গে খেলে সেরা দশে থাকতে পারলেই সেটা হবে তার গলফ ক্যারিয়ারে সেরা অর্জন। তাই বলে      তার মনে যে পদকের স্বপ্ন নেই তো নয়! সিদ্দিকুর বলেছেন, ‘আমি আত্মবিশ্বাস ভালো খেলার ব্যাপারে। তবে আমি মনে করি, যদি নিজের সেরাটা খেলতে পারি তাহলে আশা করছি সম্মানজনক একটা স্কোর হবে।’ আর ‘সম্মানজনক’ স্কোর করার সক্ষমতা  যার আছে তার পক্ষে যে পদক জয় করাও অসম্ভব নয়! এখন সময়ই বলে দেবে রিও অলিম্পিক সিদ্দিকুর রহমানের ভাগ্যে কী লিখে রেখেছে!

সর্বশেষ খবর