শনিবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

সর্বকালের সেরা অলিম্পিয়ান

ক্রীড়া প্রতিবেদক

সর্বকালের সেরা অলিম্পিয়ান

মাইকেল ফেল্‌প্‌স

রিও অলিম্পিকের পর্দা ওঠার আগে কত রকমের শঙ্কার জন্ম নিয়েছিল। জিকা ভাইরাস, জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় অনেকে খেলতে আসেননি। তখন মনে হচ্ছিল ল্যাটিন আমেরিকা ও ব্রাজিলের প্রথম অলিম্পিক আয়োজন ভেস্তে যাবে! সব শঙ্কা, সংশয়কে সঙ্গী করেই অলিম্পিক ইতিহাসের অন্যতম জমকালো উদ্বোধন হয় রিওর বিশ্বখ্যাত মারকানা স্টেডিয়ামে। পর্দা ওঠার পর সব শঙ্কাকে আটলান্টিকের নীল জলে ভাসিয়ে এক সপ্তাহ পার করলো রিও অলিম্পিক। এই সময়ে বিশ্ব অনেক কিছুই দেখল। অনেক কিছুর সাক্ষী হলো। পার হওয়া এক সপ্তাহে রিও অলিম্পিকের সবচেয়ে বড় বিস্ময়ের নাম যুক্তরাষ্ট্রের সাঁতারু মাইকেল ফেল্প্স। যিনি প্রতিদিনই রেকর্ড গড়ছেন, এরপর সেটা আবার ভাঙছেন। সাঁতারের জাদুকর অলিম্পিককে এখন একান্তই নিজের করে নিয়েছেন। গতকাল রিও’র সাঁতারের পুলকে রাঙিয়ে তুলে নেন ক্যারিয়ারের ২২ নম্বর সোনা। ভাবা যায়। কল্পনাকে বাস্তবের রঙে রাঙিয়ে এখনো পুল মাতিয়ে চলেছেন ফেল্প্স। কোথায় থামবেন তিনি? এর উত্তর শুধু তারই জানা। ক্যারিয়ারের ২২ নম্বর সোনাটি জিতেছেন সাঁতারের রাজা ফেল্প্স ২০০ মিটার ব্যক্তিগত মিডলেতে ১ মিনিট ৫৪.৬৬ সেকেন্ড সময় নিয়ে।  

২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিক শেষ করেই অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন মাইকেল ফেল্প্স। চার বছর আগে সাঁতারের রাজার অবসরের ঘোষণায় বিস্মিত হয়েছিলেন সবাই। অবসরে যাওয়ার পর পরিবার-পরিজন নিয়েই সময় কাটাচ্ছিলেন। তখনো ঘুণাক্ষরে কেউ ভাবেননি ফের ফিরবেন ফেল্প্স এবং পুল কাঁপাবেন। রিও অলিম্পিক শুরুর এক বছর আগে হঠাৎ পুলে ফেরার ঘোষণা দেন ফেল্প্স। তখন সবাই আবার চমকে ওঠেন। শুধু চমকই নয়, আমেরিকার জাতীয় সাঁতারের বাছাইপর্বে নিজ যোগ্যতা প্রমাণ করে জায়গা নেন অলিম্পিক দলে। এরপর শুধুই ইতিহাস। গতকাল তিনি যখন পুলে নামেন, তার প্রতিপক্ষ সবাই তার চেয়ে বয়সে ৮-১০ বছরের ছোট। কিন্তু ৩১ বছর বয়সী ফেল্প্স সবাইকে তুড়ি মেরে জিতে নেন ক্যারিয়ারের ২২ নম্বর এবং রিও অলিম্পিকের চতুর্থ সোনা। অলিম্পিক ইতিহাসে প্রথম সাঁতারু হিসেবে টানা চারটি গেমসে ২০০ মিটার মিডলেতে সোনা জিতেছেন ফেল্প্স। সোনা জিতে হাতের চার আঙ্গুল দেখিয়ে সেটাই জানান গোটা বিশ্বকে। অবশ্য ইভেন্টটিতে শুরুতে পিছিয়ে ছিলেন জাপানের কোসুকে হাগিনোর কাছে। তারপরও অদম্য মনোবলের অধিকারী ফেল্প্স শেষ পর্যন্ত ১ মিনিট ৫৪.৬৬ সেকেন্ড সময় নিয়ে প্রথম হন। হাগিনো রুপা জিতেন ১ মিনিট ৫৬.৬১ সেকেন্ডে এবং ব্রোঞ্জজয়ী চীনের ওয়াং শুন সময় নেন ১ মিনিট ৫৭.০৫ সেকেন্ড। এবার তার আরও একটি ইভেন্ড বাকি আছে। সেটি জিতলে তার সোনার সংখ্যা দাঁড়াবে ২৩-এ! এখন সব মিলিয়ে তার পদক সংখ্যা ২৬টি। ২২ সোনার পাশাপাশি ২টি রুপা ও ২টি ব্রোঞ্জও রয়েছে তার। ২০০৪ সালে এথেন্সে প্রথম আসরেই জিতেছিলেন ৬ সোনা। ২০০৮ সালে বেজিং অলিম্পিকে জিতেন ৮ সোনা, ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিকে ৪ সোনা জিতেন। এবার রিও এসেছিলেন ১৮ সোনা নিয়ে। গতকাল পর্যন্ত সেটা দাঁড়িয়েছে ২২টিতে। সব পদক মিলিয়ে ১৮ পদক নিয়ে ফেলপসের পরে আছেন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের জিমন্যাস্ট লারিসা লাতিনিনা। ৯টি করে সোনা জিতেছেন লাতিনিনা, ফিনল্যান্ডের দূরপাল্লার দৌড়বিদ পাভো নুর্মি, যুক্তরাষ্ট্রের সাঁতারু মার্ক স্পিজ ও স্প্রিন্টার কার্ল লুইস।

এবারের আসরে এখন পর্যন্ত তিনিই ব্যক্তিগতভাবে সর্বোচ্চ ৪টি সোনা জিতেছেন। অলিম্পিক ইতিহাসে ব্যক্তিগতভাবে ৪টি সোনা জেতার রেকর্ড রয়েছে আরও দুজনের। যুক্তরাষ্ট্রের কার্ল লুইসের লং জাম্পে ও ডিসকাস থ্রোতে অ্যাল আর্টারের। ফেল্প্স যেভাবে কীর্তি রেখে যাচ্ছেন, সেটা কি ভবিষ্যতে কারও পক্ষে ভাঙা সম্ভব? যদিও রেকর্ড হয় ভাঙার জন্য। এখন সময়ই বলে দেবে এর রেকর্ড কারও পক্ষে ভাঙা সম্ভব কি না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর