শুক্রবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

কোচরা কতটা স্বাধীন

ক্রীড়া প্রতিবেদক

কোচরা কতটা স্বাধীন

বাফুফে কর্মকর্তারা বরাবরই বলে থাকেন কোচের কাজে তারা হস্তক্ষেপ করবেন না। কোচকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হবে। বাস্তবে কি তাই হচ্ছে? খেলোয়াড় সিলেকশন মূলত কোচই করে থাকেন। বিদেশে এক্ষেত্রে কেউ হস্তক্ষেপ করবেন তা ভাবাই যায় না। অথচ বাংলাদেশে এটা স্বাভাবিক ঘটনা। ১৯৭৩ সাল থেকে ফুটবলে জাতীয় দল আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছে। কিন্তু দল গঠনে স্বজনপ্রীতির  অভিযোগ উঠছে বরাবরই। এক সময় ফেডারেশনের বড় বড় পদে বসে থাকতেন দেশের দুই শীর্ষ দল মোহামেডান বা আবাহনীর কর্মকর্তারা। বিশেষ করে সাধারণ সম্পাদকই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন। সাধারণ সম্পাদক পদে মোহামেডানের কেউ থাকলে তিনি তার দলের খেলোয়াড়দেরই বেশি প্রাধান্য দিতেন। একই ঘটনা ঘটত আবাহনীর বেলায়। যোগ্যতার চেয়ে এখানে দলকেই গুরুত্ব দেওয়া হতো। টিম সিলেকশন নিয়ে কর্মবিতর্ক বা হৈচৈ হয়নি। ১৯৭৮ সালে এশিয়ান গেমসে অধিনায়ক মনোনয়ন নিয়ে তো সাসপেন্ডের ঘটনাও ঘটেছিল। প্রথমবার অধিনায়ক করা হয় আবাহনীর মনোয়ার হোসেন নান্নুকে। টিম যখন থাইল্যান্ডের উদ্দেশ্য ঢাকা ছাড়বে তখনি আবার অধিনায়ক পরিবর্তন করা হয়। নেতৃত্ব পান মোহামেডানের গোলরক্ষক শহিদুর রহমান সান্টু। যা আবাহনী কোনোভাবে মেনে নিতে পারেনি। প্রতিবাদ হিসেবে দলের ছয় ফুটবলার এশিয়ান গেমস বয়কট করে। বাফুফে পরে এ ছয় ফুটবলারকে সাসপেন্ড করে। পরবর্তীতে অবশ্য তা তুলে নেওয়া হয়। ১৯৮৪ সালে কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত প্রথম সাফ গেমসে মোহামেডানেরও বেশ কজন ফুটবলার অংশ নেননি। অবশ্য সাসপেন্ড করা হয়নি কেউ।  ১৯৮৯ সালে ইসলামাবাদ সাফ গেমসে কোচ করা হয় ইরানের নাসের হেজাজিকে। কোচ হিসেবে হেজাজি কতটা উঁচুমানের ছিলেন তা প্রমাণ দিয়েছেন মোহামেডানকে দু’বার এশিয়ান ক্লাব কাপে চূড়ান্তপর্বে উঠিয়ে। এশিয়ার শক্তিশালী দল পরাজিত হয় মোহামেডানের কাছে। অথচ এই হেজাজিকে কোচ হিসেবে মেনে নিতে পারেননি আবাহনীর খেলোয়াড়রা। মাঠে দুই দলের গ্রুপিং হওয়ায় সেবার জেতা ম্যাচ হেরে পাকিস্তানকে সোনা উপহার দেয়।

১৯৯৩ সালে ঢাকায় সাফগেমসে ফুটবলে অধিনায়ক করা হয় ব্রাদার্স ইউনিয়নের মুনকে। অথচ পারফরম্যান্সের বিচার অনুযায়ী মুনের দলে ঠাঁই পাবারই কথা ছিল না। বাদ দেওয়া হয় দুই নির্ভরযোগ্য ফুটবলার আসলাম ও সাব্বিরকে। এ নিয়ে বাফুফের সঙ্গে কোচ সোয়াবের কথা কাটাকাটিও হয়েছে। কোনো লাভ হয়নি, বাফুফের কথা, যে তালিকা দেওয়া হয়েছে সেটাই ফাইনাল। নিরুপায় হয়ে সোয়াব তা মেনে নেন।

ফলাফল ছিল বাংলাদেশ সেবার সেমিফাইনালেই উঠতে পারেনি। এ হচ্ছে কোচের স্বাধীনতা। জাতীয় দলে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের কোচও নিয়োগ পেয়েছিলেন। বাফুফে কাজের হস্তক্ষেপ করায় তারা বেশিদিন টিকেননি। জার্মানির অটো ফিস্টারও কোচ ছিলেন। মিয়ানমারে চার জাতি টুর্নামেন্টে তার প্রশিক্ষণে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়। চেন্নাই সাফ গেমসে ফাইনালে হারায় তাকে বিদায় নিতে হয়। অথচ এ অটো ফিস্টারই বিশ্বকাপে বিভিন্ন দেশকে প্রশিক্ষণও দেন।

নতুন কোচ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বেলজিয়ামের সেইন্টফিট। বাফুফে থেকে বলা হচ্ছে তিনি উচ্চমানের কোচ। ৬ সেপ্টেম্বর ও ১০ অক্টোবর প্রাক-বাছাইপর্বে ভুটানের বিপক্ষে দুই ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। এর আগে মালদ্বীপের বিরুদ্ধে একটি প্রীতি ম্যাচে অংশ নেওয়ার কথা। লক্ষ্য করা যাচ্ছে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তিনি বাফুফের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ। এমনকি বাফুফেকে তিনি অপেশাদারও বলেছেন। প্রাথমিক যে স্কোয়াড ঘোষণা করা হয়েছে তাতেও তিনি ক্ষুব্ধ। তিনি যে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন না তার ক্ষোভই বলে দিচ্ছে। বাফুফের কোচের স্বাধীনতার কথা বলছেন তাহলে বারবার অভিযোগ উঠছে কেন? আর এর প্রভাবতো মাঠে পড়া স্বাভাবিক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর