শুক্রবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

ঘুরেফিরে একই দৃশ্য

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ঘুরেফিরে একই দৃশ্য

ভরাডুবি দিয়েই বাংলাদেশ অলিম্পিক মিশন শেষ করেছে। কেননা আগেই ক্রীড়ামোদীরা শতভাগ নিশ্চিত ছিল পদকহীন অবস্থায় ক্রীড়াবিদরা দেশে ফিরে আসবেন। শুধু এবার নয়, ১৯৮৪ সাল থেকেই তা হচ্ছে। স্বাধীনতার পর অলিম্পিকে বাংলাদেশের অভিষেক ঘটে ১৯৮৪ সালে। সেই থেকে যাওয়া আর আসার মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। সোনা তো দূরের কথা পদক জেতাটাই স্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবার রিও অলিম্পিকে অ্যাথলেটিকস থেকে মেজবা আহমেদ, শিরিন আক্তার, সাঁতারে মাহফিজুর রহমান, সোনিয়া আক্তার, শুটিংয়ে আবদুল্লাহ হেল বাকি, গলফে সিদ্দিকুর রহমান ও আরচ্যারিতে শ্যামলী রায় অংশ নেন। পদক জুটবে না তা নিশ্চিত থাকলেও সিদ্দিকুরকে ঘিরে কিছুটা আশার আলো জেগে ছিল। তিনিই বাংলাদেশ থেকে সরাসরি অলিম্পিকে সুযোগ পান। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে সাফল্য পাওয়ায় তার দিকে চেয়ে ছিল দেশবাসী। না, পদক জিতে ইতিহাস সৃষ্টি করতে পারেননি। গলফ ইভেন্টে ৬০ জনের মধ্যে ৫৮তম স্থানে থাকেন দেশসেরা গলফার সিদ্দিকুর। চরম ব্যর্থতাই বলা যায়। অ্যাথলেটিকসে প্রাক-হিটে মেজবা আহমেদ ১০০ মিটার ইভেন্টে ২৪ জনের মধ্যে ১৪তম স্থান দখল করেন। মেয়েদের একই ইভেন্টে শিরিন ২৪ জনের মধ্যে ১৭তম হন। সাঁতারে মাহফিজুর রহমান ৫০ মিটার ফ্রি স্টাইলে ৮৪ জনে ৫৪, মেয়েদের ইভেন্টে সোনিয়া ৮৮ জনের মধ্যে ৬৯তম স্থান দখল করেন। শুটার আবদুল্লাহ হেল বাকি ১০ মিটার এয়ার পিস্তলে ৫০ জনের মধ্যে ২৫তম হন। আরচ্যারিতে শ্যামলী রায় শীর্ষ ৩২-এ উঠতে পারেননি। সব কিছু হিটেই শেষ বাংলাদেশের। কিন্তু এভাবে আর কত দিন? ঘুরে ফিরে একই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। ব্যর্থতার কথা উঠলেই ক্রীড়াবিদরা বলেন, অলিম্পিকে পদক জেতা চাট্টিখানি কথা নয়। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ছাড়া কোনোভাবেই অলিম্পিকে পদক আসবে না। শুধু ট্রেনিং নয়, সাফল্যের জন্য টার্গেট নির্ধারণ করতে হবে। আসলে এসব কথার যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে। পরিকল্পনা ছাড়া কোনো কাজেই অগ্রগতি হয় না। ৩/৪ মাস অনুশীলন করে কোনোভাবেই অলিম্পিকে পদক আসবে না। অলিম্পিক তো দূরের কথা, এশিয়ান গেমসেও একই অবস্থা। ক্রিকেট ইভেন্ট অন্তর্ভুক্ত করার পর সোনা আর রুপা আসে এই গেমস থেকে। অথচ কমনওয়েলথ গেমসে শুটিং থেকে দুবার সোনা এসেছে। এই ক্ষেত্রে এত দিনে সোনা না হোক অলিম্পিক থেকে অন্তত রুপা বা তামার পদক আসাটা কি একেবারেই অসম্ভব ছিল? অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা বলেন, আমরাও চাই উপযুক্ত ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে ক্রীড়াবিদদের অলিম্পিকে পাঠাতে। এই ক্ষেত্রে তো সমস্যা একটাই বাংলাদেশে অলিম্পিকে কারা যাবে তা নির্ভর করতে হয় ওয়াইল্ড কার্ডের ওপর। একমাত্র গলফার সিদ্দিকুর সরাসরি সুযোগ পেয়েছেন। বাকিরা গেছেন ওয়াইল্ড কার্ড পেয়ে। আর অ্যাথলেটিকসে এমন সময় ওয়াইল্ড কার্ড আসে অ্যাথলেটরা প্রশিক্ষণ করারই সুযোগ পাননি। মানলাম কর্মকর্তাদের যুক্তি ঠিক, তাহলে সরাসরি অলিম্পিকে সুযোগ পেতে পারে সেইভাবে খেলোয়াড়দের তৈরি করা হয় না কেন? এভাবে অংশ নিলে পদক জেতা স্বপ্নই থেকে যাবে। দক্ষিণ কোরিয়ার মতো ছোট দেশ সোনা জিতেছে কীভাবে? পরিকল্পনা করে এগিয়েছে বলে। বাংলাদেশে তাহলে পরিকল্পনার ছক আঁকা হচ্ছে না কেন? ৩২ বছর হয়ে গেল অলিম্পিকে অংশ নেওয়া। এরপরও বলা হয় অভিজ্ঞতা অর্জন করাটাই বড় কথা। তাহলে এর চেয়ে বড় কৌতুক আর কি হতে পারে? ট্রিপল জিরো, এই তালিকা থেকে বের হয়ে আসা কি সম্ভব নয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর