শিরোনাম
শনিবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে

ক্রীড়া প্রতিবেদক

বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে

অবশেষে অপেক্ষার অবসান ঘটল। কেটে গেল সব শঙ্কা। ৩০ সেপ্টেম্বর, নির্ধারিত সময়েই বাংলাদেশ সফরে আসছে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল। বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) তাদের টুইটার ফ্যানপেজে স্ট্যাটাসে লিখেছে, ‘পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়েই বাংলাদেশ সফরে যাবে ইংল্যান্ড।’

নিরাপত্তার অজুহাতে গত বছরের অক্টোবরে বাংলাদেশ সফর স্থগিত করেছিল অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল। এমনকি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপেও তারা দল পাঠায়নি বাংলাদেশে। যদিও তখন বড় কোনো দুর্ঘটনাই ঘটেনি বাংলাদেশে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের ভবিষ্যদ্বাণী শুনেই তারা পিছু হটেছিল। তাই গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় ১৭ জন বিদেশিসহ ২২ জন নিহতের ঘটনার পর অক্টোবরের ইংল্যান্ড সিরিজ নিয়ে যেন আশাই ছেড়ে দিয়েছিলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে আসছে ইংল্যান্ড। এই খবরে যেন ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে ঈদের আনন্দ।

বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ইসিবির পছন্দ হওয়ায় তারা সফরের ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গতকাল ইসিবিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান। তিনি বলেন, ‘আপনারা আগেও দেখেছেন অস্ট্রেলিয়া যখন আসতে চায়নি, ইংল্যান্ড তখন তাদের টিম পাঠিয়েছে। ভারতেও একটা সিরিজ চলা অবস্থায় যখন হামলা হলো তখন তারা একেবারে চলে যায়নি। একটা টিম গেছে আরেকটা টিম খেলে এসেছে। ওরা কখনই সন্ত্রাসের কাছে মাথা নত করার লোক না। তা ছাড়া ইংল্যান্ডের সঙ্গে আমাদের সব সময়ই ভালো সম্পর্ক ছিল, এখনো আছে।’

নাজমুল হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ উদ্বিগ্ন ছিল ইংল্যান্ড আসবে কিনা। সবাই দোয়া করেছে। সে দিক থেকে আমার মধ্যে সাহস ছিল ইংল্যান্ড আসবে। এ জন্য আমি খুশি। ক্রিকেট এমন একটা খেলা, ক্রিকেটারদের নিরাপত্তার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নিজে তদারকি করেন। আমার মনে হয়, ওরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে নিরাপত্তা নিয়ে বললে এখন কোনো দেশকেই নিরাপদ বলা যায় না। তারপরও আমরা যে নিরাপত্তা পরিকল্পনা তাদের দিয়েছি, এমন নিরাপত্তা তাদের আর কেউই দেয়নি। গত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে আমরা এতগুলো দলকে সামাল দিতে পেরেছি আমার কাছে মনে হয়েছে এখন একটা দলকে সামাল দিতে তেমন হিমশিম খেতে হবে না।’

শুধু ক্রিকেটার ও কোচিং স্টাফকেই নয়, বাংলাদেশ আসা ইংল্যান্ডের দর্শক ও সাংবাদিক ও ক্রিকেটারদের পরিবারকেও কঠোর নিরাপত্তা দেওয়া হবে। নাজমুল হাসান বলেন, ‘ইংল্যান্ডের শুধু খেলোয়াড়রাই নয়, ওদের পরিবার, রিপোর্টার, দর্শক যারা আসবে তাদের প্রত্যেককে নিরাপত্তা দেওয়া হবে। যদি আমাদের আগে থেকে জানায় আমরা আসছি, কোথায় থাকবে সেটা জানায়, তাহলে ওদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। মাঠের মধ্যে ওদের জন্য আলাদা নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। এরকমই মানসিক একটা সিদ্ধান্ত আমরা নিয়ে রেখেছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ইংল্যান্ডের এই সিরিজ নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।’

এ পর্যন্ত বাংলাদেশে সব হামলায় শুধু বাংলাদেশিরাই অংশ নিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ এমন একটি ক্রিকেটপাগল জাতি, যেখানে প্রতিটি মানুষ ক্রিকেটকে ভালোবাসে। তাই আইএস অন্যান্য জঙ্গি সংগঠন চাইলেও ক্রিকেটে হামলা করার জন্য কোনো লোক খুঁজে পাবে না—বিশ্বাস নাজমুল হাসানের। তিনি বলেন, ‘আমার মতে এখন পর্যন্ত যে হামলাগুলো হয়েছে সেগুলো বাংলাদেশিরাই তো করেছে, অন্য কেউ এখানে এসে তো করেনি। আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশের কাউকে রাজি করানো সম্ভব না, এ দেশের ক্রিকেটকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য হামলা করতে। এটা কেউ রাজি হবে না। সে যে ধর্মেরই হোক না কেন! বাংলাদেশের ক্রিকেটকে ধ্বংস করে দেওয়ার মতো লোক পাওয়া খুব কঠিন হবে।’

গুলশান হামলার পর বিশ্বে বাংলাদেশের একটা নেতিবাচক ভাবমূর্তি ছড়িয়ে পড়েছে। তাই ইংল্যান্ড সিরিজটা সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা এখন বাংলাদেশ সরকারের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নাজমুল হাসান মনে করেন, এই সিরিজটা সুন্দরভাবে আয়োজন করে দেশের ভাবমূর্তি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। বোর্ড সভাপতি বলেন, ‘ক্রিকেট নিয়ে গর্ব করা যায়। তবে এ মুহূর্তে ক্রিকেটই সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তাই বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আগের জায়গায় ফিরে নিয়ে আসতে এই সিরিজটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করবে।’

ইংল্যান্ড নিরাপত্তা পর্যবেক্ষক দলকে জানানো হয়েছে, তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেওয়ার কথা। তাতেই খুশি হয়েছে ইংলিশরা। কিন্তু এর বাইরেও আরও নিরাপত্তা থাকবে। নাজমুল হাসান বলেন, ‘যা শুনেছি তাতে, তিনস্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা দেওয়া হবে। আমরা তাদের এটা জানাচ্ছি। এর বাইরেও আছে।’

তবে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড বাংলাদেশে আসার কথা বললেও তারা ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের ওপর নজর রাখবে। তবে এ সময়ের মধ্যে কোথাও কোনো বড় অঘটন ঘটলে তাদের সিদ্ধান্ত বদলেও যেতে পারে। তাই বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কবস্থায় থাকতে হবে।

সর্বশেষ খবর