বুধবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

সব ক্রিকেটারের বাংলাদেশে আসা উচিত

মাইকেল ভনের কলাম

সব ক্রিকেটারের বাংলাদেশে আসা উচিত

আমি বুঝতে পারছি বাংলাদেশ সফরের ব্যাপারে ইংলিশ ক্রিকেটাররা কি ভাবছে? কিন্তু আমি মনে করি, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের ওপর তাদের পূর্ণ আস্থা রাখা উচিত। সবাইকে এই সফরে যাওয়া উচিত। কোনটা ভালো তা আমি জানি। খেলোয়াড় হিসেবে আমি অনেক নিরাপত্তাবিষয়ক সভায় অংশ নিয়েছি। ২০০৩ সালে বিশ্বকাপের ম্যাচে জিম্বাবুয়েতে আমরা যাব কিনা তা নিয়ে অনেক দীর্ঘ সভা করেছি। সেবার আমরা সরাসরি হুমকি পেয়েছিলাম। তখন আমি ছিলাম তরুণ, সিনিয়রদের অনুসরণ করেছি মাত্র। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই তখন আমরা জিম্বাবুয়েতে যাইনি। ওই সময় মনে হয়েছিল সেটাই ছিল ঠিক সিদ্ধান্ত। কিন্তু বেশ কয়েক বছর পর আমার মনে হচ্ছে, আমাদের জিম্বাবুয়ে যাওয়া উচিত ছিল।

আমরা নিরাপত্তার ব্যাপারে ভালো আশ্বাসও পেয়েছিলাম। এখন মনে হচ্ছে সেটা ছিল একটা রাজনৈতিক খেলা। ২০০৪ সালে আমি অধিনায়ক হওয়ার পর জিম্বাবুয়েতে গিয়েছিলাম। সত্যি কথা বলতে কি, তখনো আমি যেতে চাইনি। কিন্তু আমি বুঝতে পেরেছিলাম আমার কাজ হচ্ছে ক্রিকেট খেলা, আমি তো রাজনৈতিক নেতা নই। নিরাপত্তা ব্রিফিংয়ে খেলোয়াড়দের অনেক কিছুই বলা হচ্ছে। তারা বলছেন, তোমাদেরকে সরকার প্রধানের মতো নিরাপত্তা দেওয়া হবে। তোমাদের আশেপাশে সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী থাকবে। এসব শুনে মনে হচ্ছে, পরিস্থিতি যদি এতই খারাপ হয়, তাহলে মাত্র কয়েকটা ম্যাচ খেলার জন্য এমন ঝুঁকি নিয়ে কি লাভ!

কিন্তু ক্রিকেটারদের একটা বিষয় ভাবতে হবে যে, ক্রিকেট খেলা হচ্ছে তোমার পেশা, তোমার কাজ। তুমি যেমন মনে কর, একজন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ হিসেবে তোমার কাজে বা তোমার ওপর অন্যরা বিশ্বাস রাখুক তেমনি রেগ ডিকাসন একজন স্বনামধন্য নিরাপত্তা, তার ওপর তোমার পূর্ণ আস্থা রাখা উচিত। রেগ খুবই ভালো মানুষ। আমি কোনো ক্রমেই বিশ্বাস করি না, তিনি অর্থ বা ক্রিকেট রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন।  তিনি তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তা ক্রিকেটারদের সামনে তুলেও ধরেছেন। তাকে সম্মান করা উচিত। রেগ বলেছেন, বাংলাদেশে ইংলিশ ক্রিকেটাররা নিরাপদ, আমি মনে করি তিনি যখন বলেছেন তখন সেটাই ঠিক। আমি কোনো ক্রমেই বিশ্বাস করি না, ইংলিশ ক্রিকেটারদের জন্য কোনো সফর হুমকি! অযথা নিরাপত্তা নিয়ে ভাবলে তোমার আশেপাশের মানুষের মধ্যে এই ভাবনাটা কাজ করবে। এখন তো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সব কিছু জানা যায়। সেখানকার বিভিন্ন ঘটনা দেখে পরিবারের সদস্যরা তোমার নিরাপত্তার জন্য উদ্বিগ্ন হতে পারেন। যা নিজের খেলার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।

একটি দলে বিভিন্ন চরিত্রের বা বৈশিষ্ট্যের ক্রিকেটার থাকেন। কিন্তু তুমি যদি বয়সে তরুণ হও, এখনো বিয়ে করোনি তাহলে তোমার উচিত কোনো কিছু না ভেবে চোখ বন্ধ করে বাংলাদেশ সফরে যাওয়া। ক্রিকেটের স্বার্থেই যাওয়া উচিত। কিন্তু যাদের স্ত্রী ও সন্তানাদি রয়েছে তারা এই সফর করবে কিনা তাদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যদি সন্দেহ হয় যে বোর্ড শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণ কিংবা টেলিভিশন রাজস্ব হারানোর জন্য খেলোয়াড়দের পাঠাচ্ছে কিংবা যেসব ক্রিকেটার শুধুমাত্র অর্থের জন্য যাবে, আমার মনে হয় তারা উন্মাদ। তবে আমি একটা কথাই বলব, যদি তারা বলেই থাকেন যে বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের জন্য নিরাপদ তাহলে অবশ্যই সবার যাওয়া উচিত।

এখন অধিনায়ককে তার অধিনায়কত্ব দেখাতে হবে। এটা খুবই ভালো দিক যে, অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুক (টেস্ট অধিনায়ক) যেতে চাচ্ছেন। এখন অপেক্ষা করছি ইয়ন মরগানও (ওয়ানডে অধিনায়ক) বলবেন তিনি যেতে রাজি! যাদের দেখে দলের অন্য ক্রিকেটাররা যেতে চাইবেন। যদি অধিনায়করাই যেতে রাজি হন, সেটা দলের জন্য খুবই ভালো খবর।

তবে আমি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তিনটা ওয়ানডে খেলার কোনো যুক্তিকতা দেখছি না। কেন না পরের দুটি বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট (চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ও বিশ্বকাপ) হবে ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে। তবে টেস্ট দুটি ঠিক আছে। কেন না ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজের আগে এটি প্রস্তুতি হিসেবে কাজ দেবে। তবে শুধুমাত্র ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজের প্রস্তুতির কথা ভেবে এই সিরিজে খেলতে নামলে ভুল করবে ইংলিশ ক্রিকেটাররা। কেন না বাংলাদেশ এখন অনেক উন্নতি করছে। তারা ইংল্যান্ডকে সমস্যায় ফেলতে পারে।

অধিনায়ক হিসেবে আমি ২০০৩ সালে বাংলাদেশ সফর করেছিলাম। সত্যি দারুণ একটি জায়গা। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল বাংলাদেশে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে নিরাপত্তার বিষয়টি ভুলতে হবে। তাদেরকে ক্রিকেট নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হবে।

লেখক : ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক

সর্বশেষ খবর