মঙ্গলবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

স্বপ্নকে ক্যানভাসে আঁকল কৃষ্ণারা

আসিফ ইকবাল

স্বপ্নকে ক্যানভাসে আঁকল কৃষ্ণারা

ইতিহাস গড়ে কৃষ্ণা-মার্জিয়া-মগিনিরা প্রজাপতির ডানায় চড়ে যেন ভেসে বেড়াচ্ছেন। গতকাল বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে হারিয়ে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাই পর্বে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের ফুটবলাররা। পতাকা হাতে ‘ল্যাপ অব অনার’ —বাংলাদেশ প্রতিদিন

১০দিন আগেও কৃষ্ণা, মার্জিয়াদের ভুবন রংধনুর সাত রঙয়ে এমন করে রাঙানো ছিল না। এখন যতটা! ১০ দিনের ব্যবধানে আমূল পাল্টে গেছে তাদের জীবন। পাল্টে গেছে তাদের চিন্তা-চেতনা ও ভাবনা। এক সময় যারা স্বপ্ন দেখতেন অন্যদের নিয়ে। স্বপ্ন দেখতেন তারকা হওয়ার। আজ তারা স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছেন অন্যদের। এখন তাদের নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে গোটা বাংলাদেশ, ১৬ কোটি ক্রীড়াপ্রেমী বাঙালি।

২৭ আগস্ট এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্ব যখন শুরু হয় তখনো কেউ ভাবেননি ৫ সেপ্টেম্বর রঙিন হয়ে যাবে বাংলাদেশের ফুটবল আকাশ! কেউ ভাবেননি স্বপ্নকে বাস্তবের কঠিন ক্যানভাসে আঁকবেন কৃষ্ণারা। অথচ তাই করেছেন মহিলা ফুটবলাররা।  শৈল্পিক ও নান্দনিক ফুটবল খেলে নন্দিত করেছেন লাল-সবুজ ক্যানভাস। কী অসাধারণ এই শিল্পকর্ম! কী অসাধারণ এই ছবি! যা দেখার জন্য গত ৪৫ বছর ধরে অপেক্ষায় ছিলেন বাঙালিরা।

২৭ আগস্ট ইরানকে হারিয়ে শুরু স্বপ্নের। ৩ সেপ্টেম্বর চাইনিজ তাইপেকে হারিয়ে বাস্তবতার কঠিন জমিনে নামিয়ে আনে সেই স্বপ্নকে এবং গতকাল ৪-০ গোলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতকে হারিয়ে স্বপ্নটাকে একেবারে নিজেদের করে নিয়েছেন মার্জিয়ারা। বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে এমনটি আর কখনো দেখা যায়নি। দেখা যায়নি টানা ৫ ম্যাচে জয়। অথচ সেই কাজটাই কি অসাধারণভাবে, অবলীলায় করেছেন কৃষ্ণা রানীরা। ১০ দিনের মধ্যে টানা ৫ জয়ে গোল করেছেন ২৬টি। বিপরীতে গোল হজম করেছে মাত্র ২টি। ভাবা যায়! কীভাবে এমনটা হলো? নেপথ্যের কারিগর গোলাম রব্বানী ছোটন। যার কোচিংয়ে দুবার এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। এবার অনূর্ধ্ব-১৬ আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়ন। এমন সাফল্যের কারিগর উত্ফুল্ল। কিন্তু সব কৃতিত্ব দিয়েছেন ফুটবলারদের, ‘মাঠ ভারী ছিল। তাই আমিরাতের বিপক্ষে জিততে একটু বেগ পেতে হয়েছে। দলের ফুটবলাররা অসাধারণ খেলেছেন। তাদের কৃতিত্বে  বাংলাদেশ আজ গর্বিত। ফুটবলারদের আমার প্রাণঢালা শুভেচ্ছা। তাদেরকে স্যালুট।’

ছোটন মাঠের বাইরে থেকে কাজ করেছেন। মাঠে তার পরিকল্পনাকে সুচারুভাবে বাস্তবায়িত করেছেন কৃষ্ণা, মগিনি, মার্জিয়া, তহুরারা। আসরে বাংলাদেশ গোল করেছে ২৬টি। যার ৮টি এসেছে কৃষ্ণার সোনালি বুটে। ৫টি মগিনির। আগের চার ম্যাচে ৬ গোল করা কৃষ্ণা কাল করেছেন আরও ২টি। ৮ গোল করে সেরা স্ট্রাইকার কৃষ্ণা উচ্ছ্বসিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে। কাল খেলা শেষ হতেই লাল-সবুজ পতাকা হাতে পুরো স্টেডিয়াম দৌড়ে বেরিয়েছেন প্রজাপতির ডানায় চড়ে। তার নেতৃত্বে চ্যাম্পিয়ন হওয়াকে জীবনের সেরা প্রাপ্তি বলেন অধিনায়ক কৃষ্ণা, ‘টুর্নামেন্ট শুরুর আগে আমরা হয়তো ভাবিনি। কিন্তু ছোটন স্যার সব সময় আমাদের উৎসাহ যুগিয়েছেন। বলেছেন আমরা পারব। আমরা পেরেছি। আমার জীবনের সেরা প্রাপ্তি এটা। আমরা সেরা আট দলের একটি হয়েছি। এটা কম নয় আমাদের জন্য।’

টানা পাঁচ জয়ে অপরাজিত থেকে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৬। ইতিহাস লিখে বাংলাদেশকে এখন আরও বড় স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছেন ফুটবলাররা। দলের সামনে এখন সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। ফেব্রুয়ারির ওই চ্যাম্পিয়নশিপে প্রতিপক্ষ শক্তিশালী ভারত ও নেপাল। এরপর এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপ। যা আগামী সেপ্টেম্বরে বসবে চীনে। আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়ন হয়ে এখন উৎসবের সাজে সেজেছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৬ দল। তবে আঞ্চলিক সেরা হয়েই বসে থাকতে চাইছেন না ছোটন। ঈদের জন্য দলকে ছুটি দিলেও সবার মনে গেঁথে দিয়েছেন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। এখন প্রস্তুতি শুধু এগিয়ে যাওয়ার।

গতকাল আমিরাতকে হারিয়ে যে উৎসবে মেতেছেন কৃষ্ণারা, সেটা শুধু তাদেরই মানায়। কারণ অনূর্ধ্ব-১৬ পর্যায়ে এশিয়ায় মেয়েদের শীর্ষ আটটি দলের একটি এখন বাংলাদেশ।

সর্বশেষ খবর