সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

তাসকিনের রাজকীয় প্রত্যাবর্তন

বাংলাদেশ-আফগানিস্তান প্রথম ওয়ানডে

মেজবাহ্-উল-হক

তাসকিনের রাজকীয় প্রত্যাবর্তন

ক্রিকেটে কখনো কখনো এমন সব ঘটনা ঘটে, যা রূপকথাকেও হার মানায়। কালকের ‘বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্তান’ ম্যাচটির কথাই ভাবুন! শুরুতে এক চিত্র। মাঝে অন্যরকম। শেষটা হলো রহস্য দিয়ে। আরও পরিষ্কার করে বললে—তাসকিন রহস্য। যে বোলারটা প্রথম ছয় ওভারে উইকেটবিহীন ৪৯ রান দিলেন, সেই বোলারই কিনা ম্যাচের জয়ে রাখলেন প্রধান ভূমিকা। শেষ দুই ওভারে চার উইকেট নিয়ে ম্যাচটিকে যেন একটি ‘রহস্য উপন্যাসে’ পরিণত করে ফেললেন তাসকিন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের প্রত্যাবর্তনটাও করে রাখলেন রাজসিক।

‘হোম অব ক্রিকেট’ মিরপুরে কাল গিরগিটির মতো ক্ষণে ক্ষণে বদলে গেল ম্যাচের চেহারা। প্রথমে ব্যাট করে টাইগাররা ২৬৫ রান করার পর কে ভেবেছিল এই ম্যাচে জয়ের ক্ষেত্র তৈরি করে ফেলবে আফগানিস্তান। কিন্তু তৃতীয় উইকেটে দুই আফগান সেনা হাশমত-রহমত মিলে ১৪৪ রানের জুটি গড়ে ম্যাচ দলকে জয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাসকিনের রূপকথার নায়কের মতো প্রত্যাবর্তনে তাদের সে আশায় গুড়ে বালি। ৪৭ ওভার পর্যন্ত ম্যাচ হাতের মুঠোয় রেখেও জয় নিয়ে হোটেলে ফিরতে পারল না আফগানরা।

কাল বোলিংয়ের শুরুটা ভালোই হয়েছিল তাসকিনের। প্রথম ওভারে মাত্র চার রান দিয়েছেন। কিন্তু তারপরেই হতাশা গ্রাস করেছিল গতি তারকাকে। কেননা ওই ওভারেই স্লিপে আফগান মারকুটে ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ শাহজাদের সহজ ক্যাচ ফেলে দেন ইমরুল কায়েস। ক্যাচ মিসের খেসারত হিসাবে চড়া মূল্যই পরে দিতে হয়েছে তাসকিনকে। তার করা তৃতীয় ওভার থেকেই ওই শাহজাদই ১৭ রান নিয়ে নেন। গতি তারকার প্রত্যাবর্তনকে বিষাদে পরিণত করার জন্য সেটাই ছিল যথেষ্ট। ছয় ওভার শেষে ৪৯ রান দিয়ে ফেললেন তাসকিন। অর্থাৎ ওভার প্রতি ৮.১৭ গড়ে।

এমন বোলারের ওপর অধিনায়ক আস্থা হারাবেন, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মাশরাফি বরং তাসকিনের ওপর চাপিয়ে দিলেন আরও গুরু দায়িত্ব। ম্যাচের তিন ওভার বাকি থাকতেই নিজের ওভারও শেষ করলেন, দিনের সেরা বোলার সাকিবের কোটার ওভারও শেষ। জয়ের জন্য আফগানদের দরকার ছিল ২৭ রান। হাতে ৫ উইকেট। তখন অবশ্য তাসকিনের ওপর ভরসা করা ছাড়া উপায়ও ছিল না। ততক্ষণে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের গ্যালারি ফাঁকা। নিশ্চিত হার বুঝতে পেরে দর্শকরা বাড়ির পথ ধরেছেন। কিন্তু ৪৮তম ওভারে বোলিং করতে এসেও প্রথম তিন বলে চার রান দিয়ে ফেললেন। কিন্তু চতুর্থ বলেই যেন ভাগ্যদেবী গতি তারকার দিকে মুখ ফিরে তাকালেন। তাসকিনের শট অফ-কাটার বল ছক্কা হাঁকানোর উদ্দেশ্যে হাওয়ায় ভাসিয়ে দিলেন আফগান ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ নবী। প্রথমে মনে হচ্ছিল ছক্কাই হবে। কিন্তু পরে দেখা গেল লং অফে ক্যাচ। অনেকটা পথ দৌড়ে এসে দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়েছেন সাব্বির রহমান। তারপরও স্বস্তির নেই। কেননা পরের বলেই আফগান অধিনায়ক স্তানিকজাই দুই রান নিয়ে তাদের জয়ের আবহটা ধরে রাখলেন। কিন্তু ওই ওভারের শেষ বলে তিনিও তাসকিনের শিকার হলেন। মূলত তখনই জয়ের পাল্লাটা বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকে পড়ে।

৪৯তম ওভারে এসে রুবেল হোসেন ৮ রান দিয়ে রশিদ খানের উইকেটটি নিয়ে বাংলাদেশের জয়ের রাস্তাটা আরও পরিষ্কার করে দিলেন। শেষ ওভারে আফগানদের শেষ দুটি উইকেট নিয়ে আনুষ্ঠানিকতাটুকু সারলেন তাসকিন। ৭ রানের দারুণ এক জয়। ততক্ষণে স্টেডিয়ামের বাইরে ‘তাসকিন’ ‘তাসকিন’ গর্জন শুরু হয়ে গেছে।

একদিন আগেই বোলিং অ্যাকশনের ফল হাতে পাওয়ার পর যেন এক স্বর্গীয় অনুভূতি লাভ করেছেন বাংলাদেশের দ্রুতগতির এই বোলার। কাল মাঠে যেন সেলিব্রেশন করার একটা মঞ্চও পেয়ে গেলেন। দুই হাত প্রসারিত করে তাসকিন সেলিব্রেশন করেছেনও। তবে তার আগে আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যানদের কাছে কঠিন একটা পরীক্ষাই দিতে হয়েছে তাসকিনকে। তাতে কী? শেষ পর্যন্ত মিরপুর তো তাসকিনময়ই হয়ে গেল।

তবে কালকের ম্যাচে তাসকিন নায়ক হলে সাকিবকে মহানায়ক বলাই যায়! ব্যাট হাতে ৪০ বলে ৪৮ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলার পর বল হাতে ২৬ রানে দুই উইকেট। বোলিং ফিগার ১০-০-২৬-২। সাকিব যে বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রাণ তা আরেকবার বুঝিয়ে দিলেন। দীর্ঘ বিরতির পর ব্যাট হাতে তামিমের ৮০ রানের ইনিংসটাই বা কম কিসে! কিংবা মাহমুদুল্লাহর হাফ সেঞ্চুরি। শেষ মুহূর্তে আফগান মারকুটে ব্যাটসম্যান রহমতের যে ক্যাচটি মিস করেছেন, বাংলাদেশ হারলে ভিলেন খাতায় নাম থাকত তার। জয়ের দিনে সমালোচনার স্থান কোথায়! তবে ইংল্যান্ড সিরিজের আগে আফগান-সিরিজকে যদি প্রাকটিস সিরিজ হিসেবে গণ্য করা হয় সেটা ভিন্ন কথা। সে ক্ষেত্রে এমন জয়ে খুশি হওয়ার বিন্দুমাত্র উপকরণ খুঁজে পাওয়ার কথা নয়। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং—তিন বিভাগেই টাইগাররা নিজেদের আদর্শ মানের চেয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ : ৫০ ওভার ১০ উইকেটে ২৬৫ (তামিম ইকবাল ৮০, মাহমুদুল্লা ৬২, সাকিব আল হাসান ৪৮, ইমরুল কায়েস ৩৭, তাইজুল ১১, দৌলতোজ্জামান ৪/৭৩, রশিদ খান ২/৩৭, মোহাম্মদ নবী ২/৪০)

আফগানিস্তান : ৫০ ওভার ১০ উইকেটে ২৫৮  (রহমত শাহ ৭১, হাসমাতুল্লাহ শহীদি ৭৪, মোহাম্মদ শেহজাদ ৩১, মোহাম্মদ নবী ৩০, তাসকিন আহমেদ ৪/৫৯, সাকিব আল হাসান ২/২৬, মাশরাফি বিন মর্তুজা ২/৪২, রুবেল ১/৬২, তাজুল ইসলাম ১/৪৪)

ফল : বাংলাদেশ ৭ রানে জয়ী

সর্বশেষ খবর