মঙ্গলবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

জেনুইন ম্যাচ উইনার সাকিব

ক্রীড়া প্রতিবেদক

জেনুইন ম্যাচ উইনার সাকিব

বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিকেটার কে? সহজ প্রশ্ন। উত্তর তার চেয়েও সহজ। প্রশ্ন শোনার আগেই উত্তর দিতে পারবেন যে কেউ। উত্তরের জন্য খুব কষ্ট করতে হবে তা কিন্তু নয়। বাংলাদেশের ক্রিকেট ম্যাচগুলোয় একটু মনোযোগ দিলেই স্পষ্ট, জনপ্রিয়তায় সবার ওপরে কোন ক্রিকেটার। মাশরাফি বিন মর্তুজা, তামিম ইকবাল, এমনকি মোহাম্মদ আশরাফুল নাম অনেকেই বলবেন। কিন্তু তাদের অবস্থান সাকিবের ধারেকাছে নয়। জনপ্রিয়তার কারণ একটাই। পারফরম্যান্স। যে কোনো পরিস্থিতিতে হিমালয়সম দৃঢ়তায় দলকে আগলে রেখে জয় উপহার দিতে সিদ্ধহস্ত সাকিব। তাই তো জনপ্রিয়তায় শীর্ষে। কিন্তু তার চেয়েও বড় বিষয় হচ্ছে, সাকিব একজন সত্যিকারের ক্রিকেটযোদ্ধা। একজন সত্যিকারের ম্যাচ উইনার। একজন সত্যিকারের টিম সতীর্থ।

১৫৮ ওয়ানডেতে রান ৪৪৪৬। সেঞ্চুরি ৬টি, হাফ সেঞ্চুরি ৩০টি। বোলিংয়ে উইকেট সংখ্যা ২০৮। ক্যাচ ৩৯টি। পরিসংখ্যান যখন এমন, তখন সাকিবকে কোন পরিচয়ে বেঁধে ফেলা যায়— ব্যাটসম্যান, না বোলার? তার পরিচয় বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। সাকিব নিজেও নিজেকে অলরাউন্ডার বলতে ভালোবাসেন। ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে তিনিই বাংলাদেশ ক্রিকেটের নিউক্লিয়াস। তার পারফরম্যান্সই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সাফল্য-ব্যর্থতার পরিমাপক। রবিবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ ৭ রানের অবিশ্বাস্য জয় তুলে নেয় শেষ ৩ ওভারে। শেষ ৩ ওভারের দুই বোলার তাসকিন আহমেদ ও রুবেল হোসেন। বিশেষ করে ৪৮ ও ৫০ নম্বর ওভারে দুর্দান্ত বোলিং করে ১০ রানের খরচে ৪ উইকেট তুলে বাংলাদেশকে রোমাঞ্চকর জয় উপহার দেন তাসকিন। বোলিং অ্যাকশন শুধরে আন্তর্জাতিক এরিনায় ফেরা তাসকিনকেই বলা হচ্ছে ম্যাচের জয়ের নায়ক। ম্যাচের প্রকৃত নায়ক কিন্তু সাকিব। ৪৭ নম্বর ওভারে সাকিব যখন বোলিংয়ে আসেন, তখন আফগানদের জয়ের জন্য দরকার ২৪ বলে ২৮ রান। ওভারপ্রতি স্ট্রাইক রেট মাত্র ৭। হাতে ৫ উইকেট। এমন পরিস্থিতিতে আফগানিস্তানের ম্যাচ জেতার স্বপ্ন দেখাই স্বাভাবিক। কিন্তু অন্য ধাতুতে গড়া সাকিব বোলিংয়ে এসে মাত্র ১ রান দেন। ওই ১ রানই ম্যাচে ফেরায় বাংলাদেশকে। ম্যাচ শেষে ম্যাচসেরার পুরস্কার নেওয়া সাকিব দৃঢ়তার সঙ্গেই বলেন, ‘ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট ৪৭ নম্বর ওভারে আমার ১ রান দেওয়া।’ শুধু কি সাকিবই বলেছেন? ক্যারিবীয় লিজেন্ডারি পেসার কোর্টনি ওয়ালশও কৃতিত্ব দেন সাকিবের ওই ওভারের, ‘গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বোলিংয়ে এসে দারুণ বোলিং করেন সাকিব। তার ওই ওভারের পরই ম্যাচে ফিরেছে বাংলাদেশ।’

তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটি জিতে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। টাইগারদের এগিয়ে দেওয়ার নায়ক সাকিব কাল বোলিংয়ে ১০ ওভারের স্পেলে রান দেন মাত্র ২৬! ওভারপ্রতি স্ট্রাইক রেট মাত্র ২.৬! ভাবা যায়। সাকিব বলেই আত্মবিশ্বাস রাখা যায়। সাকিব মানেই আত্মবিশ্বাসী ক্রিকেটার। শুধু কি বল হাতে ম্যাজিক দেখান? না, ব্যাট হাতেও একই ধারায় সফল। আফগান বোলারদের বিপক্ষে তামিম ও মাহমুদুল্লাহ ছাড়া যখন সবাই ধুঁকছেন, তখনই সাকিব সাবলীল ভঙ্গিতে ব্যাট চালিয়ে ৪০ বলে খেলেন ৪৮ রানের বিধ্বংসী ইনিংস। তার ইনিংসেই শেষ দিকে লড়াকু স্কোর গড়ে।

এ তো গেল আফগানিস্তান ম্যাচের কথা। ১৫৮ ম্যাচ ক্যারিয়ারে বাংলাদেশকে বহু ম্যাচ জিতিয়েছেন সাকিব। কখনো ব্যাট হাতে, কখনো বোলিংয়ে। ব্যাটিং ও বোলিংয়ে সমানভাবে এগিয়ে চলা সাকিব একমাত্র ক্রিকেটার, যিনি টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-২০ ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই অলরাউন্ডারের শীর্ষস্থানটিতে ঠাঁই নিয়েছিলেন। অথচ ক্রিকেটবিশ্বে জ্যাক ক্যালিসের মতো ক্রিকেটারও তখন মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। সাকিব শুধু বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাফল্যের কারিগর নন, আইপিএল, সিপিএল, বিগ ব্যাস, কাউন্টি ক্রিকেটগুলোতেও একজন ক্রিকেটযোদ্ধা। দলের প্রয়োজনে লড়াই করেন একাই। আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের সাফল্যের অন্যতম কারিগর সাকিবকে তাই আদর করেই অধিনায়ক গৌতম গম্ভীর বলেন, ‘সাকিব ছাড়া নাইট রাইডার্সের কথা ভাবতেই পারি না।’ সাকিব বাংলাদেশ ক্রিকেটের একমাত্র আন্তর্জাতিক বিজ্ঞাপন। যদিও অনেকেই মুস্তাফিজুর রহমানের কথা বলেন এখন।

সর্বশেষ খবর