বৃহস্পতিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

স্বপ্নিল অভিষেক মোসাদ্দেকের

মেজবাহ্-উল-হক

স্বপ্নিল অভিষেক মোসাদ্দেকের

আফগান বোলিংয়ে বাংলাদেশের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যানরা দাঁড়াতেই পারেননি। কিন্তু অভিষেক ম্যাচে ৪৫ বলে ৪৫ রান করে দলের সম্মানজনক স্কোর গড়ে দেন মোসাদ্দেক হোসেন —রোহেত রাজীব

প্রথম বলেই উইকেট, ব্যাট হাতে ৪৫ বলে ৪৫ রানের হার না মানা ইনিংস। রঙিন পোশাকে যেন স্বপ্নিল অভিষেক হলো অলরাউন্ডার মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের।

ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচেই যেন আলোকবর্তিকা হয়ে এসেছিলেন। দিকনির্দেশনা দিয়ে বাংলাদেশ দলকে পৌঁছে দিলেন গন্তব্যে।

লড়াইয়ের প্রস্তুতিটা আগে থেকেই নিয়ে রেখেছিলেন মোসাদ্দেক। কেননা তাকে ব্যাট হাতে নামতে হবে সাত নম্বরে। জুটিতে কেবল একজন স্বীকৃত ব্যাটসম্যানকে পাবেন তিনি। পঞ্চম উইকেট হিসেবে সাকিব আল হাসান আউট হওয়ার পর ২২ গজে যান মোসাদ্দেক। কিন্তু নন-স্ট্রাইকিং প্রান্তে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই আরেক প্রান্তের ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমান ড্রেসিংরুমের পথে। তখনো ইনিংসের ১৮ ওভার বাকি।

শুরুতেই মোসাদ্দেক বুঝতে পারলেন তাকে একাই লড়াই করতে হবে। শেষ পর্যন্ত করলেনও তাই। শেষ পর্যন্ত উইকেটে মাটি কামড়ে পড়ে থেকে খেললেন ৪৫ বলে অপরাজিত ৪৫ রানের নান্দনিক এক ইনিংস। দুটি বিশাল ছক্কার সঙ্গে চারটি বাউন্ডারি। মোসাদ্দেকের অসাধারণ ব্যাটিংয়েই কাল ধ্বংসস্তূপ থেকে যেন উঠে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ দল।

মাত্র ১৪১ রানে সাত উইকেট পতনের পর কে ভেবেছিল বাংলাদেশের স্কোরটা শেষ পর্যন্ত ২০০ পেরোবে? তিন আফগান স্পিনার মোহাম্মদ নবী, রহমত শাহ ও রশিদ খানের বল যেভাবে টার্ন করছিল মনে হচ্ছিল যেন ১৫০-এর মধ্যেই গুটিয়ে যাবে ইনিংস। কিন্তু মোসাদ্দেক টেলএন্ডারদের নিয়ে গড়ে তোলেন প্রতিরোধ। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের স্কোরকে নিয়ে যান ২০৮-এ।

তামিম, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহরা যেখানে আফগান স্পিনে দিশাহারা সেখানে মোসাদ্দেক একাই লড়াই করলেন শেষ পর্যন্ত। স্পিনারদের কোনো সুযোগই দেননি তিনি। এমন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ব্যাটিং করছিলেন, দেখে বোঝার উপায় ছিল না এ ম্যাচে তার অভিষেক হচ্ছে। বাংলাদেশের ইনিংসে কাল মাত্র দুটি ছক্কা হয়েছে। দুটিই হাঁকিয়েছেন মোসাদ্দেক।

প্রথম যে ছক্কাটি হাঁকিয়েছেন তা ছিল দেখার মতো। আফগান পেসার নবীনের বল থেকে স্কুপ মারেন। খুব বেশি আত্মবিশ্বাস না থাকলে এমন শট খেলা যায় না। আরেকটি দৌলত জরদানের বল থেকে। শট বল পেয়ে পুল খেলে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা হাঁকান। দুর্দান্ত এই ইনিংসেই যেন মোসাদ্দেক বুঝিয়ে দিয়েছেন রঙিন পোশাকে তিনি রাজত্ব করতে এসেছেন।

ব্যাট হাতে সাত নম্বরে নেমেও দলের সর্বোচ্চ স্কোরার। সঙ্গীর অভাবে শেষ পর্যন্ত হাফ সেঞ্চুরিও হয়নি। ব্যাটিংয়ে লোয়ার অর্ডারে পাঠালেও অধিনায়ক মাশরাফি মোসাদ্দেকের হাতে বল তুলে দিতে আর বিলম্ব করেননি। ১৪তম ওভারেই সুযোগ পেয়ে যান অভিষিক্ত অলরাউন্ডার। কৌশল করে প্রথম বলে কোনো টার্ন করাননি। আর এতেই কাজ হয়ে যায়। বল গিয়ে সরাসরি আঘাত হাতে আফগান ব্যাটসম্যান হাশমতউল্লাহর শহীদীর প্যাডে। স্ট্যাম্পের ওপরে থাকায় সঙ্গে সঙ্গে আউটের নির্দেশ দেন আম্পায়ার। আগের ম্যাচের হাফ সেঞ্চুরিয়ানকে সাজঘরে পাঠিয়ে দিয়ে বোলিংয়েও যেন দুরন্ত সূচনা করলেন নবাগত এই অলরাউন্ডার। অভিষেকের প্রথম বলেই উইকেট একজন ক্রিকেটারের জন্য স্বপ্ন। আর সেই স্বপ্নটাই যেন কাল মিরপুরে সত্যি করে ফেললেন মোসাদ্দেক। পরে অধিনায়ক আসগরের উইকেটও পান তিনি।

ক্রিকেট বিশ্বে প্রথম বলে প্রথম উইকেট নেওয়ার ঘটনা এর আগে মাত্র ২৩ বার ঘটেছিল। ১৯৭২ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের জিওফ আরনল্ড সর্বপ্রথম এই রেকর্ডটি গড়েছিলেন। এরপর একে একে ওই পথে হেঁটেছেন আরও ২২ জন ক্রিকেটার। ওই তালিকায় আছে ক্লাইভ লয়েড, শেন থম্পসন, ইনজামাম-উল-হক, সাদাককোপ্পান রমেশ, ওয়াবেল হাইন্ডস, ফিদেল এডওয়ার্ডস, কেভিন ও’ব্রায়েন, ভুবনেশ্বর কুমার এবং এহসান খান। প্রথম ম্যাচে প্রথম বলে উইকেট শিকারি বোলারদের রেকর্ডবুকে এবার লেখা হয়ে গেল মোসাদ্দেকের নামও।

মোসাদ্দেকের অভিষেক হয়েছে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ১১৯তম ক্রিকেটার হিসেবে। গতকাল তাকে ক্যাপ পরিয়ে দেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। এমন দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পরও আক্ষেপটা থেকে গেল মোসাদ্দেকের। কেননা ম্যাচ হেরে যায় বাংলাদেশ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ : ৪৯.২ ওভারে ২০৮ [অলআউট] (মোসাদ্দেক ৪৫*, মুশফিক ৩৮, তামিম ২০, সৌম্য ২০, সাকিব ১৭, রশিদ ৩/৩৫, নবী ২/১৬, আশরাফ ২/২৩)

আফগানিস্তান : ৪৯.৪ ওভারে ২১২/৮ (আসগর ৫৭, নবী ৪৯ শেহজাদ ৩৫। সাকিব ৪/৪৭, মোসাদ্দেক ২/৩০। (ফল : আফগানিস্তান ২ উইকেটে জয়ী)

সর্বশেষ খবর