শুক্রবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

আফগানিস্তানকে কেন ভয়!

মেজবাহ্-উল-হক

আফগানিস্তানকে কেন ভয়!

‘মুখে’ আত্মবিশ্বাস আর ‘বুকে’ আত্মবিশ্বাস এক নয়! মাশরাফিদের আত্মবিশ্বাস এখন মুখে, আফগানিস্তানের আত্মবিশ্বাস বুকে। টাইগার কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহে সিরিজে ৩-০ ব্যবধান করার কথা বলে দ্বিতীয় ম্যাচেই হেরে গেল। আর ‘ভালো খেলা’র কথা বলে আফগান কোচ রাজপূত দ্বিতীয় ম্যাচেই বাজিমাত করে দিলেন। আফগানরা কথায় নয়, বরং আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান হয়েই তার প্রতিফলন ঘটাচ্ছে মাঠে।

সিরিজের আগে মাশরাফিদের ভাবসাব দেখে মনে হয়েছে, আফগানিস্তান পাত্তাই পাবে না। অবশ্য পাওয়ার কথাও ছিল না। কেন না এখন বাংলাদেশের খেলার মান ও আফগানিস্তানের খেলার মানের পার্থক্য যোজন যোজন। যে দলটি পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকে ঘরের মাঠে নাকানি-চুবানি খাইয়ে ছেড়েছে সেই দলটাই কিনা ‘পুঁচকে’ আফগানদের বিরুদ্ধে এখন কাঁপছে। হ্যাঁ কাঁপছে! প্রথম দুই ম্যাচে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে তাই মনে হয়েছে। দুই একজন ক্রিকেটার ছাড়া বাকি সবাই কেমন যেন অস্বস্তি বোধ করছেন।

প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ৭ রানে জিতলেও ম্যাচটা কিন্তু আফগানদেরই ছিল। ভাগ্যের জোরে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। আর দ্বিতীয় ম্যাচে তো ভরাডুবিই হয়ে গেল। মাঠে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে মনে হয়েছে, মাশরাফিদের ভিতর কোনো আত্মবিশ্বাসই নেই। তাদের আত্মবিশ্বাসটা কেবল মুখেই। অন্যদিকে আফগানরা কিন্তু একবারও সরাসরি বলেনি তারা বাংলাদেশকে হারাবেই। তারা শুধু ভালো খেলার কথা বলেছে। আসলে তাদের মুখে কিছু বলার প্রয়োজনও নেই। আত্মবিশ্বাস রয়েছে তাদের বুকে, প্রথম দুই ম্যাচেই তার প্রতিফলন ঘটিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। সব চেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছিল যে বিষয়টি নিয়ে, বাংলাদেশ দল অনেক দিন পর ওয়ানডে খেলছে। কথা সত্য। ১১ মাসের বিরতির পর পূর্বের ছন্দে খেলা কঠিন। কিন্তু তাই বলে কি এই সময়ে ঘরে বসেছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। তারা তো খেলার মধ্যেই রয়েছেন। তা ছাড়া টি-২০ তো নিয়মিতই খেলছেন— এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপ। কেবল আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলা হয়নি। তারপরেও কী আফগানিস্তানের মতো দলের বিরুদ্ধে পরাজয়ের জন্য অনেক দিন আন্তর্জাতিক ওয়ানডে না খেলার বিষয়টিকে অজুহাত দেখাতে পারবেন মাশরাফিরা? প্রথম ম্যাচে তবুও হারতে হারতে ৭ রানে জিতে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে মাশরাফিদের সে সুযোগ আর দেয়নি আফগানিস্তান। ম্যাচের শেষ দিকে রোমাঞ্চকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেও যোগ্যতার পরিচয় দিয়েই জয় তুলে নিয়েছে আফগানরা। আর এ ম্যাচে বাংলাদেশ দল তিন বিভাগেই ব্যর্থ। অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলগুলোও ছোট দলের বিরুদ্ধে হারে। তাই বলে তিন বিভাগেই কি এক সঙ্গে ব্যর্থ হয়! আফগান বোলিংয়ে কি এমন জু জু আছে যে, তামিম-সৌম্য প্রথম থেকেই যেন কাঁপতে থাকেন। প্রথম ম্যাচে তামিম ৮০ রান করলেও খেলেছেন ৯৮ বল। যা ড্যাসিং ওপেনাদের ব্যাটিং চরিত্রের সঙ্গে একেবারেই বেমানান। দ্বিতীয়  ম্যাচেও যেন শুরু থেকেই অস্বস্তিবোধ করছিলেন। পাওয়ার প্লেতে রানের গড় চারের নিচে। সৌম্য যেন নিজেকে হারিয়েই ফেলেছেন। ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড বলা হয় যে মুশফিককে তিনিও আফগান স্পিনে দিশেহারা। উইকেট যতো স্লো-ই হোক না কেন তাই আফগানিস্তানের মতো দলের বিরুদ্ধে ২০৮ রান করবে বাংলাদেশ? ফিল্ডিংয়েও একের পর এক মিস। স্পেশালিস্ট ফিল্ডিং কোচ থাকার পরও এমন অবস্থা! দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মুশফিক যেভাবে স্ট্যাম্পিং মিস করছেন তা ছিল খুবই দৃষ্টিকটূ। তবে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল অতিরিক্ত চাপের কারণেই এমনটা হয়েছে।

বোলিংয়ে দেখা যায়, টাইগাররা নিজেদের স্বাভাবিক বোলিংটা করতে পাচ্ছে না। পেসাররা শট বল করছেন। স্পিনাররা বল টার্ন করাতে পারছেন না মনের মতো করে। আফগান ব্যাটসম্যানরা দেখা যাচ্ছে, কয়েক স্টেপ এগিয়ে এসে বড় শট খেলছেন। কী দারুণ স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাটিং করছেন। অথচ বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা বড় শট খেলার সাহসই পাচ্ছেন না। বড় শট খেলবেন কি খেলবেন না এমন ভাবতে ভাবতে ক্যাচ তুলে দিচ্ছেন। কেন আফগানিস্তানের মতো দলকে এত ভয় পাচ্ছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা? আফগানদের বিরুদ্ধে দুই ম্যাচে ব্যাটিং বাজে হয়েছে, বোলিংয়ে ছিল না ধার। তবে দুই ম্যাচেই কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমানের অভাব লক্ষণীয় ছিল। যে পেস বোলিং নিয়ে এত হৈচৈ সেই পেসাররাই মার খাচ্ছেন। রুবেল-তাসকিনকে কী অনায়াসে ছক্কা হাঁকিয়েছেন আফগান ব্যাটসম্যানরা। এক মুস্তাফিজ নেই, তাতেই বোলিং আক্রমণের এই অবস্থা! আফগান ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে এই দশা হলে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মুস্তাফিজকে ছাড়া সুবিধা করতে পারবে বাংলাদেশ!  টাইগাররা যে এখন ক্রিকেট বিশ্বে উদীয়মান শক্তি তা কারও অজানা নয়। মাশরাফিদের সামর্থ্য নিয়েও প্রশ্ন তোলার উপায় নেই কারও। তবে ক্রিকেটারদের মানসিকতায়, শরীরী ভাষায় একটা পরিবর্তন দরকার। টাইগারের ভাবভঙ্গি তো টাইগারের মতোই হতে হবে, তাই নয় কি?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর