মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে অ্যাডিলেড

ক্রীড়া প্রতিবেদক

আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে অ্যাডিলেড

টাইগারদের সামনে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। তাই অনুশীলনের ফাঁকে মাশরাফি-তামিমকে টিপস দিচ্ছেন ব্যাটিং কোচ সামারাবীরা। পাশে দাঁড়িয়ে তা শুনছেন হেড কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহে —রোহেত রাজীব

ক্রিকেট ঐতিহ্য, কিংবা শক্তিমত্তায় আফগানিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের পার্থক্য যোজন-যোজন। অথচ আইসিসি সহযোগী দেশটির বিপক্ষে সিরিজ জিততে ঘাম ঝরাতে হয়েছে মাশরাফিদের। লড়াই করতে হয়েছে ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং- তিন সেক্টরেই। আফগানিস্তানের বিপক্ষে কষ্টার্জিত সিরিজ জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়েই শুক্রবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাট-বলের লড়াইয়ে নামবেন মাশরাফিরা। দুই দলের সর্বশেষ লড়াইয়ে পাল্লাটা যেহেতু হেলে আছে বাংলাদেশের দিকে, সেজন্য মুখোমুখি লড়াইয়ের এই হিসাবে সামান্য হলেও এগিয়ে টাইগাররা। সত্যিই কি সিরিজে বাংলাদেশ ফেবারিট? ইংলিশ অধিনায়ক জস বাটলার অবশ্য বাংলাদেশকে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ বলেছেন, ‘ঘরের মাঠে বাংলাদেশ বরাবরই শক্তিশালী প্রতিপক্ষ।’ দুই দলের সর্বশেষ লড়াই বিশ্বকাপ ক্রিকেটে। অ্যাডিলেডের ম্যাচটি ছিল দুই দলের জীবন মরণ লড়াই। ক্রিকেট মহাযজ্ঞের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলতে দুই দলকেই জিততে হতো। এমন সমীকরণের ম্যাচটি টাইগাররা জিতেছিল ১৫ রানে। বাংলাদেশকে অসাধারণ জয় উপহার দিয়েছিলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করে। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ওটাই প্রথম সেঞ্চুরি। এরপর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আরও একটি সেঞ্চুরি করেন মাহমুদুল্লাহ। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত দুটিই সেঞ্চুরিই রয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের। দুই দলের দ্বিতীয় সর্বশেষ মুখোমুখিও বিশ্বকাপ ক্রিকেটে। ২০১১ সালের বিশ্বকাপে চট্টগ্রামে মাহমুদুল্লাহ ও শফিউল ইসলামের অবিশ্বাস্য জুটি অবিস্মরণীয় জয় উপহার দিয়েছিল বাংলাদেশকে। দুই দুটি জয় বাংলাদেশকে আত্মবিশ্বাস যোগানোর পাশাপাশি চালকের আসনেও বসিয়েছে। যদিও দুই দলের পরিসংখ্যানে বেশ অনেক এগিয়ে ইংল্যান্ড। ১৬ ম্যাচের ১৩টিতেই জিতেছে ইংলিশরা। তবে দুই দলের সবর্েশষ ৫ ম্যাচের তিনটিতে অবশ্য জয় বাংলাদেশের। এই পরিসংখ্যানও স্বপ্ন দেখাচ্ছে টাইগারদের।

২০০০ সালে নাইরোবিতে বাংলাদেশ প্রথম মুখোমুখি হয় ইংল্যান্ডের। ৭ উইকেটে হেরেছিল টাইগাররা। ২০০৩ সালে ইংল্যান্ড প্রথমবারের সিরিজ খেলতে আসে বাংলাদেশে। হোয়াইওয়াশের প্রতিটি ম্যাচ ইংলিশরা কাকতালীয়ভাবে জিতেছিল ৭ উইকেটের ব্যবধানে। ২০০৫ সালে বাংলাদেশ প্রথমবার ইংল্যান্ড সফরে যায়। অবশ্য ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ঐতিহাসিক জয় পেয়েছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে। সফরে বাংলাদেশ তিন জাতির টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়াকে। কার্ডিফের চিরভাস্বর জয়ের ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। ইংলিশদের বিপক্ষে টাইগাররা টানা ১২ হারের পর ১৩ নম্বর ম্যাচে এসে প্রথম জয় পায়। ব্রিস্টলের ম্যাচটি বাংলাদেশ জিতেছিল ৫ রানে। প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ২৩৬ রান করেছিল টাইগাররা। জবাবে ২৩১ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। বার্মিংহামে পরের ম্যাচ হেরেছিলেন মাশরাফিরা। পরের ম্যাচে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ২ উইকেটের অবিশ্বাস্য জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। চার বছর পর বিশ্বকাপের আরেক আসরেও জয় পায় টাইগাররা। টানা দুই ম্যাচ জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়েই শুক্রবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লড়াইয়ে নামছেন মাশরাফি, সাকিবরা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজটি বহু আকাঙ্ক্ষিত। নিরাপত্তার অজুহাতে সিরিজটি ভেস্তে যেতে বসেছিল। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া সর্বোচ্চ আশ্বাসে সফরে আসে ইংল্যান্ড। সিরিজটি যেমন বহুল আকাঙ্ক্ষার, তেমনি টানা সিরিজ জয়ের রেকর্ডকে আরও উপরে নিয়ে যাওয়ার হাতছানি রয়েছে। ২০১৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ঘরের মাটিতে কোনো সিরিজ হারেনি বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়েকে ৫-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ দিয়ে যাত্রা শুরু। এরপর পাকিস্তানকে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ। পরের দুই সিরিজে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে বছর শেষ করে জিম্বাবুয়েকে ফের ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করে। এরপর ১০ মাস কোনো ধরনের আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলেনি। ৩১৮ দিনের বিরতি নিয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে নেমে বিপদেই পড়ে যায়। কোনো রকমে সিরিজ জিতে ২-১ ব্যবধানে। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু  আফগানিস্তানের বিপক্ষে কষ্টার্জিত সিরিজ জয়ের জন্য দোষারোপ করেছেন দীর্ঘ বিরতিকে, ‘দীর্ঘ বিরতি খেলার উপর প্রভাব ফেলেছে দলে উপর।’ এবার বাংলাদেশ নামছে টানা সপ্তম সিরিজ জয়ের টার্গেটে। তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজ খেলতে নামার আগে আজ ফতুল্লায় প্রস্তুতি ম্যাচ খেলছে ইংল্যান্ড। সিরিজের ম্যাচ তিনটি ৭, ৯ ও ১২ অক্টোবর। প্রথম দুটি মিরপুরে এবং শেষটি চট্টগ্রামে।

সর্বশেষ খবর