চার ভেন্যুতে পেশাদার ফুটবল লিগ অনুষ্ঠিত হলেও দর্শকের সমাগম তেমনভাবে ঘটছে না। ময়মনসিংহে গ্যালারি ভরলেও চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেটে উল্লেখযোগ্য দর্শকের সমাগম ঘটেনি। তবে এবার শিরোপা লড়াইয়ে নতুনত্ব এসেছে। ১১ দলের ৯টি করে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তারকানির্ভর দলগুলো শিরোপার ফাইট দিয়ে থাকে। এবার কিছুটা ব্যতিক্রমী লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শক্তির বিচারে শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র ও চট্টগ্রাম আবাহনীর শীর্ষে থাকার কথা। অথচ তারা সেই অবস্থানে নেই। বরং গতবারের চেয়ে দুর্বল দল গড়েও শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব মজবুত অবস্থানে আছে। ৯ ম্যাচে তাদের সংগ্রহ ১৯ পয়েন্ট। সমান সংখ্যক ম্যাচে চট্টগ্রাম আবাহনীর অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে ১৮ পয়েন্ট। অন্যদিকে ঢাকা আবাহনীর ১৭। সবচেয়ে অবাক করছে শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র। বিগ বাজেটে তারকানির্ভর দল গড়েও তাদের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট হতে পারছেন না সমর্থকরা। ৯ ম্যাচে ১ জয় ও দুই ড্র করে পাঁচ পয়েন্ট পেয়েছে। অবশ্য এর পেছনে দুর্ভাগ্যও কাজ করেছে। চট্টগ্রাম পর্বে তারা রেফারির পক্ষপাতিত্বের শিকার হয়েছে। আর বেশ কটি ম্যাচে অসংখ্য গোলের সুযোগ পেয়েও জয়ের দেখা মেলেনি। সিলেটে দুই ম্যাচ থেকে চার পয়েন্ট সংগ্রহ করায় কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক শিষ্যদের ব্যাপারে আশাবাদী। তিনি বলেন, ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য একটা জয় জরুরি হয়ে পড়েছিল। ছেলেরা মোহামেডানের বিপক্ষে তা এনে দিয়েছে। পরের দুই ম্যাচ আরামবাগ ও শেখ জামালের বিপক্ষে। আশা রাখি এখন থেকে আমরা ভালো পারফরম্যান্স প্রদর্শন করতে পারব। দুই ম্যাচে জয় পেলে শক্ত অবস্থানে চলে আসব। এবারের লিগে সবচেয়ে আলোচিত দল রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস ক্লাব। পুরান ঢাকার দলটির বড় সাফল্য নেই। ১৯৭৭ সালে লিগে রানার্সআপ হওয়াটাই বড় প্রাপ্তি। পেশাদার লিগ শুরু হওয়ার পর তাদের অবস্থান মোটেই সুখকর নয়। রেলিগেটের হয়ে বেশ কবার নেমেও যায়। চলতি লিগে অন্য এক রহমতগঞ্জকে দেখা যাচ্ছে। পয়েন্ট টেবিলে নিচে থাকা রহমতগঞ্জকে দেখা যাচ্ছে অচেনা চেহারায়। স্বল্প বাজেটের দল স্বাভাবিকভাবে কোনো তারকা খেলোয়াড় ভিড়ানো যায়নি। অচেনা-অজানা খেলোয়াড় নিয়েই রহমতগঞ্জ মাঠে নামে। দল-বদলের সময় কোচ কামাল বাবু বলেছিলেন লিগে তার টার্গেট পাঁচ বা ছয়। স্বাভাবিকভাবেই কোচ এর চেয়ে বেশি আশা করতে পারেন না। কেননা অপরিচিত খেলোয়াড় নিয়ে এর চেয়ে বড় টার্গেট আর কি হতে পারে? কোচের চিন্তা ছিল পাঁচে থাকলেই যথেষ্ট। কিন্তু এই অচেনা-অজানা খেলোয়াড় নিয়ে রহমতগঞ্জ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে শিরোপার স্বপ্নও জেগে উঠেছে। ৯ ম্যাচে এখন পর্যন্ত হারের মুখ দেখেনি। ৫ জয় আর চার ড্রয়ে ১৯ পয়েন্টে গোল পার্থক্য এখন শীর্ষে অবস্থান করছে। শিরোপা তো দূরের কথা লিগ চলাকালে কখনো শীর্ষে থাকেনি দলটি। লিস্টার সিটি ইংলিশ লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়ে যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে রহমতগঞ্জ কী তাহলে সেই পথে এগুচ্ছে? কোচ বাবু বলেন, অনুশীলনে ছেলেদের একটাই কথা বলেছি মাঠে সমন্বয় করে খেল দেখবে ভালো ফল পাবে। ছেলেরা সত্যিই ভালো খেলছে, ওদের পারফরম্যান্সে আমি সন্তুষ্ট। তাহলে কি শিরোপার স্বপ্ন দেখছেন? বাবু বলেন, অনেক দলকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি, কখনো খেলোয়াড়দের বলিনি এই পজিশনে থাকতে হবে। এতে করে চাপ বা টেনশনটা বেড়ে যায়। চাপ মুক্তভাবে খেলছে বলেই ভালো ফল পাচ্ছে। আমি চাই এ ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে। অনেকে বলছেন রহমতগঞ্জ ভালো খেলার পেছনে কোচ বাবুর অবদানটা বেশি। আমি তা মানতে চাই না এর পুরো কৃতিত্ব খেলোয়াড়দের। আবারও বলছি চ্যাম্পিয়নের কথা ভাবছি না। একটা দলের বড় ফ্যাক্টর হচ্ছে সমন্বয় ও ডিসিপ্লিন। আমার দলে দুটোই রয়েছে। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কত দূর যেতে পারি।’