শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

টাইগারদের ভাবনায় ইংলিশ ব্যাটিং

মেজবাহ্-উল-হক

টাইগারদের ভাবনায় ইংলিশ ব্যাটিং

টাইগার ক্যাপ্টেন মাশরাফি বিন মর্তুজার ৩৩তম জন্মদিন ছিল গতকাল। একদিন পরেই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে কঠিন ম্যাচ। তাই জন্মদিন পরিবারের সঙ্গে না কাটিয়ে মাঠে কঠোর অনুশীলন করছেন —রোহেত রাজীব

পরিবর্তন! হ্যাঁ, বাংলাদেশ দলে একটা ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। আফগান সিরিজের আগে এবং পরে ক্রিকেটারদের মানসিকতায় যেন আকাশ-পাতাল পার্থক্য। স্কিলে পরিবর্তন। বডি ল্যাঙ্গুয়েজে পরিবর্তন। এখন বাংলাদেশ অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী।

আফগান সিরিজের আগে টাইগাররা অনেকবার বলেছে, সিরিজটা মোটেও সহজ হবে না। প্রথম দুই ম্যাচে খেলায় সেই ছবিও দেখা গেছে। কিন্তু তৃতীয় ম্যাচে ছিল বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। এক বছর আগে যে আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে খেলতে নামতেন মাশরাফিরা সেই দৃশ্যই দেখা গেছে। প্রথমে ব্যাটিং করে তিনশর কাছাকাছি রান, তারপর রীতিমতো টাইট বোলিং। আফগানদের বিরুদ্ধে খেলা তৃতীয় ম্যাচটাই যেন ইংল্যান্ড সিরিজের আগে ‘টনিক’ হিসেবে কাজ করতে পারে!

আফগান সিরিজের পর টাইগারদের কথা-বার্তাতেও অনেক পরিবর্তন। মাত্র অভিষেক হওয়া অলরাউন্ডার মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত কয়েক দিন আগে বলেন, ‘আমাদের কন্ডিশনে, আমরা ফেবারিট।’ গতকাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে অনুশীলন শেষে একই কথা বলেছেন মারকুটে ব্যাটসম্যান সাব্বির হোসেনও। তিনি বলেন, ‘যে যার হোমে খেলবে সেই বাঘ। বাংলাদেশ দল নিজেদের মাঠে খেলছে, ইংল্যান্ড এখানে এসেছে। ওরা আগে কি করেছে সেটা বড় বিষয় নয়। আমাদের দেখার বিষয় হচ্ছে, আমরা ভালো ক্রিকেট খেলছি কিনা। ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে ভালো করছি কিনা।’

তবে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় ভাবনার বিষয় হচ্ছে, তাদের ব্যাটিংয়ের গভীরতা নিয়ে। সাত নম্বর পর্যন্ত একেকজন কী দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন। শেষ দুই ওয়ানডে সিরিজে তারা শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানকে যে ঘরের মাঠে উড়িয়ে দিয়েছে, সেখানে বড় ভূমিকা ছিল তাদের ব্যাটসম্যানদের।

তিন শতাধিক রান করা যেন অনেক অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে ইংলিশদের। সব শেষ দুই সিরিজে চার ম্যাচেই তারা তিন শতাধিক রানের স্কোর করেছে।

জুনে লঙ্কানদের বিরুদ্ধে সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে ‘দ্য ওভাল’ স্টেডিয়ামে বৃষ্টি বিঘ্নিত ৪২ ওভারের ম্যাচেও তারা ৩০৬ রানের পাহাড়সম টার্গেটেও পৌঁছে গিয়েছিল অনায়াসে। ৯ বল হাতে রেখেই সে ম্যাচে ইংল্যান্ড জিতে ছিল ৬ উইকেটের ব্যবধানে।

একই সিরিজে পরের ম্যাচেই আবারও ইংলিশদের সাইক্লোন ব্যাটিং। কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনে ৩২৪ রান করে ইংলিশরা। মজার ব্যাপার হচ্ছে, যে উইকেটে ইংলিশরা বড় স্কোর করল সেখানে লঙ্কানরা অলআউট হয়ে যায় মাত্র ২০২ রানে।

অগাস্টে সব শেষ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলা সিরিজে কি দাপটই না দেখিয়েছে ইংলিশরা। সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে নটিংহ্যামের ট্রেন্টব্রিজে তো ইতিহাসই সৃষ্টি করে ফেলে তারা। ৪৪৪ রানের মহাকাব্যিক এক স্কোর করে। ওয়ানডের সিরিজের ইতিহাসে এটি দলীয় সর্বোচ্চ স্কোর। সিরিজের শেষ ম্যাচেও ৩০২ রানের স্কোর করেছিল ইংল্যান্ড।

তবে একটা বিষয় হচ্ছে, ৪৪৪ রান করা ম্যাচে ব্যক্তিগত সবচেয়ে বড় ইনিংস ১৭১ রান করা অ্যালেক্স হেলস এবং  সবচেয়ে বেশি ২১১.১১ স্টাইকরেটে (২৭ বলে ৫৭ রান) ব্যাটিং করা ইয়ন মরগান এই সফরে নেই। বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান মনে করেন, দুই সেরা ব্যাটসম্যান না থাকলেও খুশি হওয়ার কিছু নেই। তাদের দলে যারা আছে তারা কিন্তু কোনো অংশে মরগান কিংবা হেলসের চেয়ে কম নয়। হয়তো স্কিলে একটু আধটু কম বেশি। কিন্তু তারা একই মানের।

রকিবুলের ভাষ্য, ‘এই সিরিজ আমি ইংল্যান্ডকেই এগিয়ে রাখব। কারণ তারা নিয়মিত খেলার মধ্যেই আছে। কঠিন পরিস্থিতি কিভাবে হ্যান্ডেল করতে হয়, সেটা ইংলিশরা খুবই ভালো করেই জানে। তাদের ব্যাটিংয়ে গভীরতা অনেক। সবাই যেন পারফর্ম করার জন্য প্রস্তুত হয়েই বাংলাদেশে এসেছে।’

বিসিবি একাদশের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচেও ইংলিশরা তাদের ব্যাটিং গভীরতার নির্দশন দেখিয়েছে। ৩১০ রানের বিশাল টার্গেটে ২৩ বল হাতে রেখেই পৌঁছে যাওয়া সোজা কথা নয়। ছয় এবং সাত নম্বরে ব্যাট করতে নেমে অধিনায়ক জস বাটলার ও মঈন আলী ১৩৯ রানের পার্টনারশিপ গড়ে যেভাবে ম্যাচ বের করে ফেলল তা সত্যিই প্রশংসনীয়।

তাই ইংলিশদের ব্যাটিং নিয়ে ভাবছে বাংলাদেশ। তবে প্রস্তুতি ম্যাচ দেখে সফরকারীদের নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই বলেও মনে করেন না সাব্বির। তিনি বলেন, ‘ইংল্যান্ড অনেক ভালো দল। ৩০০ রান অতিক্রম করা এতো সহজ নয়, তারপরও ওরা ৩০০ (৩১০) রান তাড়া করে জিতেছে। ওদের অনেক ভালো মানের ব্যাটসম্যান আছে। সবচেয়ে বড় কথা হল প্রস্তুতি ম্যাচে আমাদের মেইন বোলাররা বল করেনি। দলের মেইন স্পিনাররা বল করেনি। আসল লড়াইয়ে এত সহজে রান তাড়া করা সহজ হবে না।’

সফরকারীদের এগিয়ে রাখলেও রবিকুল হাসান মনে করেন সিরিজ জয়ের সামর্থ্য বাংলাদেশের আছে। তিনি বলেন, ‘সব কিছু করতে হবে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে। আগে বোলিং করলে, বোলারদের টাইট বোলিং করতে হবে। যাতে ওদের ব্যাটসম্যানরা ঠিকমতো শট খেলতে না পারেন। উইকেট স্লো হলে ব্যাটসম্যানদের ধৈর্য ধরে ক্রিজে টিকে থাকতে হবে। তবে প্রস্তুতি ম্যাচে আমাদের ব্যাটসম্যানরা দেখিয়েছেন, ইংলিশদের কঠিন বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধেও আমাদের তিন শতাধিক রান করার সক্ষমতা আছে।’

গতকাল রাখ-ঢাক না করে সাব্বির রহমান তো বলেই ফেললেন, প্রথমে ব্যাট করে ইংলিশরা তিন শতাধিক রান করলেও তা তাড়া করে জয়ের সামর্থ্য বাংলাদেশের আছে। ‘—ইনশাল্লাহ্, আমরা সিরিজ জিতব।’

সর্বশেষ খবর