শনিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা
ময়মনসিংহ মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব

ঐতিহ্য থাকলেও হারিয়েছে জৌলুস

রাজধানীর বাইরে

সৈয়দ নোমান, ময়মনসিংহ

ঐতিহ্য থাকলেও হারিয়েছে জৌলুস

ময়মনসিংহের ক্লাব পাড়ায় রয়েছে শত বছরের প্রাচীন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। ১৮৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এ ক্লাবটি বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত প্রথম মোহামেডান ক্লাব। কিন্তু বর্তমান সময়ে এ ক্লাবটিতে খেলোয়াড় থাকলেও অনেক দিন থেকেই জাতীয় দলে কোনো খেলোয়াড়ের দেখা নেই। ফলে ময়মনসিংহের ক্রীড়াঙ্গনে ঐতিহ্য বহনকারী এ ক্লাবটি আজ অনেকটাই জৌলুস হারিয়েছে বলে মনে করছেন ক্রীড়া সংশ্লিষ্টরা।

এর কারণ হিসেবে ক্লাবের বর্তমান কর্ণধাররা বলছেন, আর্থিক সমস্যা, খেলাধুলায় অনীহা, জেলা ক্রীড়া সংস্থার অবহেলা ও স্কুল পর্যায় থেকে ক্ষুদে খেলোয়াড় উঠে না আসা এমন জৌলুস হারানোর মূল কারণ। বিশেষত যে ফুটবল দিয়ে গৌরবময় নানা ইতিহাসের সাক্ষী ছিল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব সেই সুনাম আজ শুধুই অতীত। এরপরও ক্রিকেট, ফুটবল ও হকিতে আন্তঃজেলায় সবচেয়ে বেশি শিরোপা জেতে ঐতিহ্যবাহী এ ক্লাবটি। আর এ ক্লাবটি থেকেই অনেক খেলোয়াড় ন্যাশনাল পর্যায়ে জায়গা করে নেয় এক সময়।

এর মধ্যে ক্রিকেটে সদরুল আলম, ইরাক, মাহবুবুর রহমান সেলিম ৮০’র দশকে জাতীয় দলে খেলতেন। ৭০ থেকে ৮০’র দশকে ফুটবলে বিএনপি’র মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ, এরশাদের সাবেক উপদেষ্টা ব্রি.জে. মাহমুদুল হাসান, দুই ভাই হেলিম ও রাজ্জাক ফুটবলে জাতীয় দলের হয়ে মাঠ দাপিয়ে রেখেছিলেন। ৭০ দশকে প্রেসিডেন্ট কাপে তৎকালীন ঢাকা স্টেডিয়ামে ইরানের বিপক্ষে গোল করে হাবিবুর রহমান বুলু সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। আর হকি প্রেমীদের কাছে হকির রাহাতের নাম সবারই জানা।

জানা যায়, ১৯৬৮ সালে মোনেম খান গোল্ড কাপে  মোহামেডান-ইপিআইডিসি ম্যাচ দিয়ে খেলা গড়ায় তৎকালীন ময়মনসিংহ স্টেডিয়ামে। ভারতের বিখ্যাত কলকাতা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব প্রদর্শনী ম্যাচে ১৯৩৮ সালে ড্র করেছিল ময়মনসিংহ মোহামেডান। ১৯৫৩ ও ৫৪ সালে আন্তঃজেলা ফুটবলে ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন হয় ময়মনসিংহ। যেখানে অধিকাংশ খেলোয়াড়ই ছিল মোহামেডান ক্লাবের। ২০১৫ সালে ১ম বিভাগ হকিতেও চ্যাম্পিয়ন হয় মোহামেডান। এছাড়াও  দেশি-বিদেশি অঙ্গনেও নানা কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে এ ক্লাবটি।

ফুটবলে এ ক্লাবটি সবচেয়ে এগিয়ে থাকলেও বর্তমানে রয়েছে অনেকটাই পিছিয়ে। কারণ হিসেবে ক্লাব পরিচালকরা বলছেন, আগের মতো আর খেলোয়াড় তৈরি হয় না। যারাও আসছে তারা ঝুঁকছে ক্রিকেটের দিকে। বর্তমানে এখানে মাত্র ১০০ এর মতো রয়েছে ফুটবল প্লেয়ার। যেখানে ক্রিকেটে রয়েছে ২৫০ এর অধিক প্লেয়ার। আর হকিতে আছে মাত্র ৫০ জন।

ক্লাবের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ফুটবলার অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বলছেন, আগের জৌলুস ফিরিয়ে আনার অনেক চেষ্টা করা হচ্ছে। এজন্য ক্রিকেটে খেলোয়াড় তৈরি করার জন্য একটি একাডেমি করা হয়েছে। ফুটবল ও হকিতে ট্রেনিং করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রতিটি বিভাগে ২ জন করে কোচ আছেন।

সাবেক এই ফুটবলার অনেকটা ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বলেন, এক সময় স্বেচ্ছায় অনেকেই চাঁদা দিয়েছে এ ক্লাবটিকে। বর্তমানে অনেকটাই অনুদান শূন্য  মোহামেডান। একটি ক্রিকেট টিম করতে প্রায় ৫ লাখ, ফুটবলে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ এবং হকির ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন দেড় লাখ টাকার প্রয়োজন হয়। নামমাত্র কিছু অনুদান দিয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থা দায় সারছে। এছাড়াও আগের মতো স্কুল পর্যায় থেকে ক্ষুদে খেলোয়াড়রা বের হয়ে আসছে না। এরও একটি প্রভাব পড়ছে ক্রীড়াঙ্গনে।

সর্বশেষ খবর